রাত ২টোয় বিউটিপার্লারে কনের সাজ, সকালে পরীক্ষাহলে, সেখান থেকে বিয়ের মণ্ডপে তরুণী

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বিয়ে-সংসার চক্করে কত মহিলার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় তার কোনও ইয়ত্তা নেই। কিন্তু, পরিবারের উৎসাহ থাকলে পড়ালেখা একজন মহিলার জীবনে কতটা মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে সেই কাহিনি শেয়ার করলেন সুরাটের-এর এক তরুণী। 

 

এই কাহিনির নায়িকা সুরাটের শিবাঙ্গি। হিউম্যানস অফ বম্বে বলে একটি সংস্থা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে শিবাঙ্গির কাহিনি তুলে ধরেছে। এক অসামান্য অনুপ্রেরণামূলক গল্প শুনিয়েছেন শিবাঙ্গি। সুরাটের এই তরুণী জানিয়েছেন, তাঁর বিয়ের দিনই পরীক্ষা ছিল। কোনওভাবে পরীক্ষা বাতিল করতে চাইছিলেন না শিবাঙ্গি। তাই রাত ২টোর সময়ে উঠে সোজা বিউটি পার্লারে চলে যান তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিল হবু বরও। কনের সাজে সাজতে সাজতেই নাকি নোটসে শেষবারের মতো চোখ বুলিয়ে নেন। আর কনের সাজ শেষ করেই হবু বরের হাত ধরে সোজা হাজির হন পরীক্ষাকেন্দ্রে। বধূর সাজে তাঁকে পরীক্ষা দিতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিল। কিন্তু, পরীক্ষাহলের শিক্ষিকা খুব খুশি হয়েছিলেন পড়াশোনার প্রতি শিবাঙ্গীর ভালোবাসাকে দেখে। শিবাঙ্গি-র করা পোস্টে আরও জানা যায় যে পরীক্ষা হল থেকে বেরিয়ে ফের তিনি হবু বরকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বিয়ের মণ্ডপে। 


বিয়ের দিনে পরীক্ষা! আর তা বাতিল না করেই এভাবেই বিয়ের মতো বিষয়কে সামলে নিলেন শিবাঙ্গী! এমন ঘটনা এই মুহূর্তে দেশজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে। শিবাঙ্গি তাঁর করা পোস্টে জানিয়েছেন, কলেজে পড়তে পড়তেই তাঁর মা-এর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। এর কয়েক মাস পরেই শিবাঙ্গির মা গর্ভবতী হয়ে যান। শিবাঙ্গি এবং তাঁর ভাই-এর জন্ম এবং তাঁদেরকে বড় করে তোলার চক্করে নিজের পড়াশোনাকে সম্পূর্ণ করতে পারেননি তাদের মা। কিন্তু শিবাঙ্গির যখন ৮ বছর বয়স তখন তাঁর মা ফের অসমাপ্ত পড়াশোনাকে সম্পূর্ণ করতে উঠে পড়ে লাগেন। শিবাঙ্গি এবং তাঁর ভাইকে পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে বসিয়ে রেখে পরীক্ষা দিতেন তাঁদের মা। এভাবেই তিনি স্নাতক হন এমনকী, শিবাঙ্গি যে স্কুলে পড়তেন সেখানেও একদিন তাঁর মা প্রিন্সিপ্যাল হয়েছিলেন। মা-এর পড়াশোনার প্রতি এই ভালোবাসা শিবাঙ্গিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তিনি শপথ নিয়েছিলেন পড়াশোনার আগে অন্য কোনও বিষয়কে অগ্রাধিকার দেবেন না।



শিবাঙ্গি জানিয়েছেন স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ হতেই তাঁর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। হবু বর পার্থ-কে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে পড়াশোনার আগে তাঁর কাছে কিছু নেই। তিনি সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়ে পড়াশোনা শুধু শেষ করতেই চান না, পরে একটি এনজিও তিনি খুলতে চান। হবু বর পার্থ সবসময় স্ত্রী-র পাশেই থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শিবাঙ্গি তাঁর পোস্টে জানিয়েছেন, বিয়ের প্রস্তুতিতে কোথায় দিয়ে সময় বেরিয়ে গিয়েছিল তা বোঝাই যায়নি। পরীক্ষার রুটিন বের হতে দেখা যায় যে বিয়ের দিন পরীক্ষা পড়েছে। 


হবু বর পার্থকে নাকি শিবাঙ্গি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে কোনও মূল্যে তিনি পরীক্ষা দেবেন। এরপর পরীক্ষার দিন রাত ২টোর সময় উঠে বিউটিপার্লারে সাজতে চলে যান শিবাঙ্গি। সেখানে কনের সাজে সাজতে সাজতেই পরীক্ষার শেষ মুহূর্তে নোটসে চোখও বুলিয়ে নিয়েছিলেন। কনের সাজ শেষ হতে সকাল হয়ে গিয়েছিল। এরপর বিউটি পার্লার থেকেই পার্থকে সঙ্গে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন শিবাঙ্গি। বধূর বেশে তাঁর একের এপর এক উত্তর লেখার বহর দেখে সকলেই অবাক হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের দিন কীভাবে একজন এত সিরিয়াসভাবে পরীক্ষা দিতে পারে তা কেউ আন্দাজ করতে পারছিল না। তবে, শিবাঙ্গির একাগ্রতা দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন পরীক্ষাকেন্দ্রের মহিলা এক্সামিনার। তিনি প্রাণভরে শিবাঙ্গিকে আশীর্বাদও করেছিলেন। পরীক্ষা হল থেকে বেরিয়েই হবু বর পার্থকে নিয়ে বিয়ের মণ্ডপে চলে গিয়েছিলেন শিবাঙ্গি। কারণ বেলা দেড়টার সময় তাঁদের বিয়ের লগ্ন ছিল। তাঁর ইচ্ছেকে মর্যাদা দেওয়ায় খুশি খুশি পার্থের গলাতেই মালা পরিয়েছিলেন শিবাঙ্গি। তাঁর পোস্টের বয়ানে শিবাঙ্গি লিখেছেন, মা-এর কাছ থেকে পড়াশোনার জন্য পাওয়া এই উৎসাহ তাঁর জীবনের চলার পাথেয়। শিবাঙ্গি যখন এই পোস্টটি লিখেছিলেন তার ছয় মাস আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তিনি পোস্টে লিখেছেন- 'বিয়ের পর ছয় মাস কেটে গিয়েছে, এখন আমি গর্ভবর্তী, কিন্তু তা বলে আমার জীবনের স্বপ্নগুলো মরে যায়নি, এই মুহূর্তে জীবনটা একটু স্লো হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তা বলে আমি থেমে যাব না- এখন আমি আরও বেশি করে উদ্বুদ্ধ যাতে আমার সন্তানের সামনে একটা উদাহরণ খাড়া করতে পারি। আর এই উদাহরণটা অবশ্যই যে নিজেকে আগে কর্মের জন্য উৎসর্গ কর, তারপরে অন্য কিছু, সবসময়ে নিজের স্বপ্ন এবং কর্মকে অগ্রাধিকার দাও।' 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.