ভবিষ্যতের খাবার: ২০৫০ সালের মধ্যে আপনি যেসব খেতে শুরু করবেন?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ২০২২ সালে যেসব খাদ্য আপনার মেন্যুতে রয়েছে, ২০৫০ সাল আসতে আসতে তার মধ্যে ঘটতে পারে বেশকিছু পরিবর্তন। আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ হতে পারে নতুন ধরনের গাছগাছড়া, ফল থেকে শুরু করে নকল কলা পর্যন্ত! হ্যাঁ, এমনটাই দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।  

এতদিন ধরে বিশ্বের সিংহভাগ মানুষের কাছেই অজানা ছিল, এমন কয়েকটি গাছের তালিকা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, ভবিষ্যতে এগুলোই হয়ে উঠতে পারে মানুষের খাদ্য। 


কিন্তু হঠাৎ বিজ্ঞানীদের এই অনুসন্ধানের কারণ কী?  


কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ববাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিশ্ববাজারে কেনাবেচা হয় এমন গুটিকয়েক খাদ্যশস্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে থাকা কতটা বিপজ্জনক। 


এই মুহূর্তে আমাদের ক্যালরির ৯০ শতাংশ আসছে মাত্র ১৫টি খাদ্যশস্য থেকে। তাই মানবজাতির খাদ্যের উৎস নিশ্চিত করতে লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনের বিশেষজ্ঞরা এখন নতুন খাদ্য উপাদান খুঁজছেন।


জলবায়ু পরিবর্তন 'ফুড শক' এর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে, যেখানে উৎপাদিত শস্য মানুষের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রধান খাদ্যের দাম দ্রুত বেড়েই চলেছে।


লন্ডনের গবেষক ড. স্যাম পিরিনন বলেন, খাদ্যোপাদানে বৈচিত্র্য আনলে এটি ক্ষুধার সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে। তিনি আরো বলেন, "আমরা জানি যে দুনিয়াজুড়ে হাজার হাজার রকমের এডিবল (খাওয়ার যোগ্য) প্ল্যান্ট বা গাছপালা রয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এগুলো খাচ্ছে। আর এখানেই আমরা ভবিষ্যতের খাদ্য সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় খুঁজবো।" 


বিশ্বের ৭ হাজারেরও বেশি ভক্ষণযোগ্য গাছপালার মধ্যে মাত্র ৪১৭টি মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 


পান্ডানুস


প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ থেকে শুরু করে ফিলিপাইনের উপকূলবর্তী অঞ্চলে জন্মানো ছোট আকৃতির একটি গাছ হলো পান্ডানুস। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় মিষ্টি ও মুখরোচক খাবারে স্বাদ আনতে এই গাছের পাতা ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, এর আনারসের মতো দেখতে ফলটি কাঁচা অথবা রান্না করে খাওয়া যায়।


খরা, তীব্র ঝড়ো হাওয়া এবং সল্ট-স্প্রে সহ নানা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও পান্ডানুস গাছ টিকে থাকতে পারে, জানান আরেক গবেষক ড. ম্যারিবেল সোটো গোমেজ।


তিনি বলেন, "এটা জলবায়ু সহনশীল এবং পুষ্টিকর একটা খাবার যা খেতে বেশ মজাও বটে। পুষ্টিকর এবং প্রতিকূল পরিবেশেও জন্মানো সম্ভব, এমন একটি খাবার আমাদের ফুড পোর্টফোলিওতে যোগ করলে খাদ্যাভাসে বৈচিত্র্য আসবে।"


স্থানীয় লোকেদের খাদ্যের উৎস বিঘ্নিত না করেই যদি পান্ডানুসকে টেকসইভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে আমাদের উচিত এই গাছটি বড় পরিসরে জন্মানো, বলেন এই গবেষক।


নানান জাতের শিম 


শিম বা বিনসকে বলা হয় 'প্রকৃতির খাদ্য'। এগুলো দামে সস্তা, প্রোটিন ও ভিটামিন-বি তে ভরপুর এবং সমুদ্র থেকে আরম্ভ করে পাহাড়ি ঢাল, সব রকম পরিবেশেই জন্মানো সম্ভব। 


শিম বা শুঁটি জাতীয় খাবারের ২০,০০০ প্রজাতি রয়েছে সারা বিশ্বে। কিন্তু এর মধ্যে হাতেগোণা কয়েকটি প্রজাতি মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বাইরেও, বনজঙ্গলে আরো কয়েক শত প্রজাতি রয়েছে যেগুলো এখনো বিজ্ঞানীদের অজানা।


মোরামা শিমের বীজ (টাইলোসেমা এসকিউলেনটাম) বতসোয়ানা, নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষদের একটি প্রধান খাদ্য। এসব অঞ্চলের মানুষেরা ভূট্টার সাথে মোরামা বীজ সেদ্ধ করে অথবা গুড়া করে পরিজ বা কোকোর মতো পানীয় বানিয়ে খায়। যদিও সব ধরনের শিম বীজ ভক্ষণযোগ্য নয়, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন প্রজাতির বীজ পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন কোনগুলোর মধ্যে পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং খাওয়ার উপযুক্ত হতে পারে।


বুনো শস্যদানা


শস্যদানার মধ্যেও রয়েছে ১০ হাজারের বেশি প্রজাতি এবং মানুষের খাদ্যতালিকায় যুক্ত হবার মতো উপাদানও এগুলোর মধ্যে প্রচুর।


ফনিও (ডিজিটারিয়া এক্সিলিস) একটি পুষ্টিকর আফ্রিকান শস্যদানা যা কুসকুস (আফ্রিকান খাবার), পরিজ এবং পানীয় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 


স্থানীয় পর্যায়ে এটি শস্য হিসেবে আবাদ করা হয় এবং শুষ্ক আবহাওয়ার মধ্যেও এই গাছটি টিকে থাকতে পারে।


নকল কলা


এনসেট বা 'ফলস বানানা' কলারই একটি ঘনিষ্ঠ প্রজাতি, কিন্তু শুধুমাত্র ইথিওপিয়ার একটি অংশে এই খাবার খাওয়া হয়।


এনসেট গাছের ফল কলার মতো দেখতে। কিন্তু এই ফল খাওয়া না গেলেও এই গাছের শ্বেতসারবহুল কান্ড এবং মূল গাজন প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে খাওয়া যায়। এছাড়াও এটি পরিজ ও রুটি তৈরিতে ব্যবহার করে ইথিওপিয়ানরা।


গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই পৃথিবীতে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে খাওয়ানোর সক্ষমতা রয়েছে কলার মতো দেখতে এই শস্যটির। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.