জানেন ভূমিকম্পের আগাম আভাস পেয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এই প্রাণী
ODD বাংলা ডেস্ক: ভূমিকম্পের কারণে প্রতি বছর শত শত মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে এবং পৃথিবীর কতই না সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। ভূমিকম্পের পূর্বাভাষ কোনও বিজ্ঞানী বা আবিষ্কৃত কোন যন্ত্র না দিতে পারলেও কুনো ব্যাঙ কিন্তু ঠিকই টের পেয়ে যায় ভূমিকম্পের আগাম সংকেত৷ তাও আবার একদিন বা দুই দিন নয়৷ কমপক্ষে সপ্তাহ খানিক আগে তারা জেনে যায় সেই তথ্য৷
তা যদি না হবে ভূমিকম্পের পাঁচ দিন আগে নিজের ঘর ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয় নেয় কেন তারা! তাহলে চলুন পুরো ঘটনা খুলে বলার আগে কুনো ব্যাঙ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক কিছু তথ্য৷
কুনোব্যাঙ শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী৷ অর্থাৎ বাহ্যিক তাপমাত্রার সঙ্গে এদের দেহের তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে৷ তাই শীতকালে রক্ত জমাট বাঁধার হাত থেকে রক্ষার জন্য ব্যাঙ মাটির গর্তে, ঘরের কোণে, মালপত্রের স্তূপের নিচে, গাছের কোটরে নিশ্চলভাবে পড়ে থাকে৷ এ সময় এরা কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না৷ দেহের সঞ্চিত স্নেহপদার্থ এদের শক্তি জোগায়৷ কুনোব্যাঙের এই শীতকালীন নিষ্ক্রিয়তাকে বলে শীতনিদ্রা বা হাইবারনেশন৷ ব্যাঙ উভচর শ্রেণীর মেরুদণ্ডী প্রাণী৷ কুনো ব্যাঙ ও সোনা বা কোলা ব্যাঙের দেখা মেলে সবচেয়ে বেশি৷ কুনো ব্যাঙ শুকনো জায়গায় বেশি থাকে আর কোলা ব্যাঙ আর্দ্র জায়গায় বা জলে বেশি থাকে বলেই জানা যায়৷
যুক্তরাজ্যেরওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ ড. রাসেল গ্রান্টের প্রিয় বিষয় ব্যাঙ৷ আর এই ব্যাঙকে নিয়েই চলছিল তাঁর নিয়মিত গবেষণা৷ এবারে অবশ্য তাঁর দেখবার বিষয় ভূমিকম্পে কি ধরণের আচরণ করে প্রাণীকুল৷ বিশেষ করে ব্যাঙ৷ এর আগে দেখা গেছে ভূমিকম্পের ঠিক আগে আগে মাছেরা পানির মধ্যে ছোটাছুটি করতে থাকে, সাপেরা কুঁকড়ে যায় গর্তের মধ্যে৷ কিন্তু ব্যাঙ কী করে?
ইটালিতে একটি লেকের পাড়ে গবেষণার জন্য ঘাঁটি গাড়লেন প্রফেসর গ্রান্ট৷ এই এলাকাতে মাঝে মাঝেই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷ গবেষক হয়তো বেশ সফল৷ কারণ তাঁর এই গবেষণার ২৯ দিনের মাথায় ইটালিতে হল ভূমিকম্প৷ রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৩। এর আগে গবেষক বেশ কিছু কুনো ব্যাঙের গায়ে ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিশেষ সংকেতযুক্ত যন্ত্র৷ ভূমিকম্পটি হয় ৬ এপ্রিল৷ এর ছ সাতদিন আগে থেকে আজব আচরণ শুরু করে গবেষকের ব্যাঙগুলো৷ পাঁচ দিনের মাথায় নিজেদের আবাস ছাড়তে শুরু করল তারা৷ এরপর তিনদিনের মাথায় গবেষণাস্থল সান রুফফিনো লেকের কুনো ব্যাঙ চলে গেলো অন্য কোন জায়গায়৷ কেবল যে সাধারণ কুনো ব্যাঙগুলোই ঘর ছাড়লো তাই নয়, অন্তঃসত্ত্বা ব্যাঙগুলিও ছাড়লো ঘর৷ বিষয়টি ভাবিয়ে তুললো এই গবেষককে৷ এই ঘটনার তিন দিন পরেই হল ভয়াবহ ভূমিকম্প৷ আবরুৎসো অঞ্চলে লাকিলা শহর ও সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের মারা যায় শতাধিক মানুষ৷
গবেষক গ্রান্ট জানালেন, ঝড় কিংবা বৃষ্টিতে এ ধরণের আচরণ করে না কুনো ব্যাঙগুলো, যায় না ঘর ছেড়ে৷ কি এক বিশেষ সেন্সর রয়েছে কুনো ব্যাঙের৷ প্রকৃতি তাকে দিয়েছে আশ্চর্য এই ক্ষমতা৷ তিনি জানালেন, তার গবেষণাস্থলে চিহ্নিত ব্যাঙগুলো আবার ফিরে এসেছিল৷ সেটা ভূমিকম্পের আরও ছয় থেকে সাত দিন পর৷ আর এই কয়েকদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি ছোটখাট ভূমিকম্প হয়েছে সেই এলাকায়৷ এখন তাঁরা গবেষণা চালিয়ে দেখতে চান, কীকরে কুনো ব্যাঙ বুঝতে পারে ভূমিকম্পের পুর্বাভাষ৷
Post a Comment