আজ সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে ফিরে দেখা তাঁর পরিচালিত সেরা ৫ সিনেমা


ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, ODD বাংলা:
চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায় একটি মাইলস্টোন। তাঁর অসাধারণ সব সৃষ্টি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও সমাদৃত। আজ তাঁর ১০১তম জন্মদিন। এইদিনে ফিরে দেখা তাঁর পরিচালিত সেরা পাঁচ সিনেমা।

পথের পাঁচালী- 
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ছবিগুলির মধ্যে পথের পাঁচালির নাম প্রথম সারিতে উঠে আসে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত প্রথম সিনেমা এটি। এটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট। সত্যজিৎ রায়ের 'অপুট্রিলজি' প্রথম ছবি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ছবিটি তৈরিতে অর্থ সাহায্য করেছিল। দর্শক এবং সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল এই ছবি। শুধু তা-ই নয়, ১৯৫৬ কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সিনেমাটি ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ পুরস্কার লাভ করে। ভারতীয় সিনেমার জগতে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম পথের পাঁচালী 'ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফিচার ফিল্ম' ছাড়াও একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছিল।

অপুর সংসার-
১৯৫৯ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। এটি অপু ট্রিলজির শেষ ছবি। অপু ট্রিলজির সিনেমাগুলো যথাক্রমে পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার। ছবিতেঅবিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং শর্মিলা ঠাকুর। জৈবিক সম্পর্ক পেরিয়ে মানবিক ও সামাজিক সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ছবির গল্পে। ছবিটি ১৯৫৯ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ১৯৬০ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট পুরস্কার লাভ করে। 

নায়ক-
শুরুর দিকে সত্যজিত রায় বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প-উপন্যাসের ওপর কাজ করলেও ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নায়ক গল্পের রূপকার তিনি নিজেই। এই সিনেমার কাহিনী ও চিত্রনাট্যও তাঁরই লেখা। জানা যায়, সত্যজিৎ রায় নাকি এই ছবির গল্প উত্তম কুমারকে মাথায় রেখেই তৈরি করেছিলেন। সিনেমাটি ১৯৬৭ সালে শ্রেষ্ঠ বাংলা কাহিনীচিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে উত্তম কুমার এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে সত্যজিৎ রায় বিএফজে পুরস্কারে সম্মানিত হন।

গুপী গাইন বাঘা বাইন-
ছোটদের কথা মাথায় রেখে তৈরি গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবিটি কিন্তু আদতে সব বয়সের মানুষের কাছা সমানভাবে গ্রহণযোগ্য। বলাই বাহুল্য এই ছবির মুল আকর্ষণ রবি ঘোষ এবং তপেন চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়, সত্যজিত রায়ের লেখা ও সুর করা গান, সেই সময়ে স্পেশাল এফেক্ট ব্যবহার করে ভুতেদের নাচ, এবং ভূতের রাজার গান গেয়ে কথা বলা। মুক্তির পর ছবিটি যে কেবল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তা নয়, বরং বাংলা বা বাঙালি সংস্কৃতির একটি আইকনে পরিণত হয়েছিল। ছবিটি ১৯৬৮ সালে শ্রেষ্ঠ পরিচালনা পুরস্কার, ১৯৭০ সালে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক লাভ করে। 

হীরক রাজার দেশে-
সত্যজিৎ রায় তাঁর গুপী গাইন বাঘা বাইন মুক্তিৃর ১১ বছর পর হীরক রাজার দেশে ছবিটি তৈরি করেন, যা আদতে সিক্যোয়েল। রূপকের আঙ্গিকে শাসকের আসল চেহারা কেমন এবং বাস্তবিক পরিস্থিতির ধ্রুব সত্যটি তুলে ধরেছেন। হীরকের রাজার ভুমিকায় উৎপল দত্ত অনবদ্য। গল্পের সবচরিত্ররাই ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে কথা বলে। বলে না কেবল এক শিক্ষক। যার সাহায্যে বোঝানো হয়েছে একমাত্র শিক্ষকই হলেন মুক্ত চিন্তার অধিকারী, আর বাকি সকলেই অন্যের ভাবনা চিন্তা দ্বারা পরিচালিত। পাশাপাশি এই ছবির প্রত্যেকটি গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮০ সালে ‘ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট মিউজিক ডিরেকশন’ এবং ‘আহা কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে’ গানটি ‘ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট লিরিক’ পুরস্কার লাভ করে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.