মাঙ্কিপক্স কী, কীভাবে ছড়ায়, কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে- জেনে নিন সবকিছু
ODD বাংলা ডেস্ক: করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন মাঙ্কিপক্স নামের বিরল একটি রোগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি দেশে মাঙ্কিপক্সের এক উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চলতি মাসের শুরু থেকে এর সংক্রমণ বাড়ছে। এরই মধ্যে এ রোগ আফ্রিকার কিছু অংশে উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিবিসি-র তরফে মাঙ্কিপক্স কী ও কীভাবে এ রোগ সংক্রমিত হয়, তা এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
মাঙ্কিপক্স কতটা সাধারণ
মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের পেছনে রয়েছে মাঙ্কিপক্স নামের ভাইরাস। এটি স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্স এখন পর্যন্ত কম গুরুতর ও এটির সংক্রমণের সক্ষমতা তুলনামূলক কম বলেই মনে করছেন তাঁরা। নতুন রোগটি ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের অঞ্চলের কাছাকাছি মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত অংশে বেশি দেখা যাচ্ছে।
মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণ
মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। জ্বর কমলে শরীরে দেখা দেয় ফুসকুড়ি। অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়।
ফুসকুড়িগুলো অত্যন্ত চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে খোস-পাঁচড়ায় পরিণত হওয়ার আগে এগুলো পরিবর্তিত হয় ও কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে। পরে এগুলো পড়ে যায় এবং এসব স্থানে ক্ষতচিহ্ন তৈরি হতে পারে।সাধারণত সংক্রমণ একপর্যায়ে নিজে থেকেই কেটে যায়। ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে সেরে ওঠেন রোগী।
কীভাবে সংক্রমিত হয়
কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, শ্বাসনালি, চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে।
যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে—আগে এমনটা বলা না হলেও এখন মনে করা হচ্ছে, যৌন মিলনের সময় সরাসরি সংস্পর্শে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
সংক্রমিত বানর, ইঁদুর ও কাঠবিড়াল এবং ভাইরাসযুক্ত বস্তু যেমন বিছানাপত্র ও জামাকাপড়ের সংস্পর্শে এলেও ছড়াতে পারে ভাইরাসটি।
কতটা বিপজ্জনক এটি
এ পর্যন্ত মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের যত ঘটনার কথা জানা গেছে, তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপসর্গ মৃদু হতে দেখা গেছে। কখনো কখনো লক্ষণগুলো ছিল চিকেনপক্স বা জলবসন্তের মতো। কয়েক সপ্তাহে তা নিজে থেকেই সেরে গেছে।
মাঙ্কিপক্স কখনো গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। ঘটতে পারে মৃত্যুও। যেমনটা খবর পাওয়া গেছে পশ্চিম আফ্রিকায়।
একজন সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, শ্বাসনালি, চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে।
চিকিৎসা কী
মাঙ্কিপক্সের কোনো চিকিৎসা নেই, তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে গুটিবসন্তের টিকা ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে বলে প্রমাণিত। আগাম সতর্কতা হিসেবে যুক্তরাজ্য গুটিবসন্তের টিকা কিনে রেখেছে। তবে ঠিক কত টিকা সংগ্রহ করেছে, তা পরিষ্কার নয়। স্পেন কয়েক হাজার টিকা কেনার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে খবর।
কতটা উদ্বেগের
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা এখনই এ ভাইরাস দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি নেই। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা (ইউকেএইচএসএ) বলছে, ঝুঁকি এখনো কম।
ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের মলিকুলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল বলেন, প্রকৃত অবস্থা হল প্রাথমিকভাবে মাঙ্কিপক্স রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন এমন ৫০ ব্যক্তির মধ্যে মাত্র ১ জন এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এখনই দেশজুড়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতিতে আমরা আছি—এমনটা মনে করা ভুল হবে।
Post a Comment