সংবেদনশীলতাই রুখে দিতে পারে বার্ধক্য বিষাদ, জানাচ্ছেন চিকিৎসক

 


ODD বাংলা ডেস্ক: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। বেড়েছে মানুষের জীবনকাল। পাল্লা দিয়ে বিশ্বে বেড়ে চলেছে প্রবীণ সদস্যদের সংখ্যা। ফলত, তাঁদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি আলাদাভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। শারিরীক জটিলটার পাশাপাশি, গুরুত্ব পাচ্ছে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও। বর্তমান প্রজন্মের বয়োবৃদ্ধরা কী ধরনের মানসিক অবসাদের শিকার হচ্ছেন? ডিমেনশিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা তৈরি হচ্ছে? আলোচনায় অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।


আলোচনায় চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়


বার্ধ্যকের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ বিভিন্নভাবে বিষাদগ্রস্ত হতে থাকেন। কিন্তু নানান কারণে তা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। ফলত, রোগীদের সমস্যা বাড়ে বৈ কমে না। পরিসংখ্যান বলছে, যাঁদের বয়স ৬০ বা তার ওপরে, তাঁরাই প্রধানত বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার শিকার হন। চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বা স্মৃতিভ্রংশের মতো রোগে ভোগেন। যাঁদের সঠিক চিকিৎসা হয় না। এবং এই সমস্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।


২০১৫-১৬ সালে করা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ সঠিক চিকিৎসা পান। বয়োবৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এই হার আরও কম। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, আমরা প্রত্যেকেই ভাল ব্যবহার এবং সম্মানের আশা করি। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও তা হওয়া জরুরি। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা তাচ্ছ্বিল্যের নজরে বিষয়টি এড়িয়ে যাই। যদি বয়স্ক মানুষদের জন্য আমরা এই দেশকে উপযুক্ত করে তুলতে চাই, তা হলে আমাদের এখনই পদক্ষেপ করা দরকার। কারণ এই সমস্যা থেকে অস্টিওআর্থারাইটিস, ডায়েবেটিস, হাইপারটেনশন, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি বাড়তে পারে। যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য আরও ক্ষতিকর।


বয়স্কদের বিষন্নতার অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে। যেমন সামাজিকভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, একাকিত্ব, শোক, দারিদ্র্য, শারীরিক অক্ষমতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি। উপরন্তু বিগত দুই বছরের কোভিড পরিস্থিতি এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে পাশের মানুষকে অনেক বেশি সংবেদনশীল হতে হবে। পাশে দাঁড়াতে হবে। শারিরীক হোক বা মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি ঠিক ততটাই যত্ন নিতে হবে যতটা তাঁদের প্রয়োজন।


গত তিন দশকে মনোরোগের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই পথ দেখিয়েছে কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল। পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত বিষণ্নতার চিকিৎসাও এখন উন্নত, সহজলভ্য ও ফলদায়ক। চিকিৎসকের উপদেশ, যদি কোনও বয়স্ক ব্যক্তিকে মানসিক সমস্যায় ভুগতে দেখেন, তা হলে অবশ্যই কোনও ভাল চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বার্ধক্যে বিষাদ রুখতে প্রয়োজন প্রবীণদের আত্মমর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। এবং তা সম্ভব করে তুলতে পারি আমরাই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.