আশিতেও ১৮-র শক্তি, হিমালয়ান ভায়াগ্রা যেন পরশ পাথর

ODD বাংলা ডেস্ক: শুঁয়োপোকার মতো পাহাড়ি ছত্রাকটা খেলেই অনন্ত যৌবনপ্রাপ্তি। দীর্ঘস্থায়ী যৌনসুখ। আর তার খোঁজেই ফি বছর পাহাড়ে হারিয়ে যায় বহু প্রাণ। আবার তার জন্যই আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের বিস্তার নেপাল, ভুটান থেকে মায়ানমার, চিন, জাপান, আমেরিকা পর্যন্ত।

ইয়ারসাগুম্বা। নাম দিয়ে যাঁরা চেনেন না তাঁরা জানেন না এর মোহ, মায়া এবং কাজ। এবং অবশ্যই দাম। এর এক একটা বিকোয় কখনও পঞ্চাশ হাজার টাকায়। তাও চাইলেই মেলে না কি? হিমালয় পাহাড়, বিশেষ করে তিব্বতীয় মালভূমিতে প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় তুষারপাত, বৃষ্টি, ঝড়ের মতো যাবতীয় মৃত্যুর হাতছানি দেওয়া প্রতিকূল পরিস্থিতিকে তুচ্ছ করে নেপালের তিনটি গ্রামের মানুষ খুঁজে বেড়ান এই ছত্রাক। যা মিশে থাকে পাহাড়ের ঢালে আগাছায়, ঘাসের গোড়ায়। কখনও শিকড়ের ঠিক তলায়। মে এবং জুন মাসে দেখা মেলে বলেই দাঢিং, লামজুংয়ের মতো গ্রামের মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন এই সময়। দিনে যদি কয়েকটা মিলে যায় তাহলেই কেল্লা ফতে। আন্তর্জাতিক চক্রের লোকজন তাঁদের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার জন্য ডলারের ঝুলি নিয়ে বসে।

কার্যত গ্রামবাংলার জমিতে ধান বা সবজি চাষের জন্য যেমন কিছু মানুষ সুদে অগ্রিম টাকা ধার দেন তেমনই নেপাল, ভুটান, এবং হিমাচল প্রদেশের কিছু জায়গায় এক পায়ে খাড়া এই ছত্রাক কেনেন লোকজন। প্রতি বছর যাঁরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন, তাঁদের সবাই ঘরে ফেরেন না এমনটা নয়। বরং অনেকেই প্রাণ হারান পাহাড়েই। পাহাড়ি মাটি আঙুল দিয়ে ঘাঁটতে হয় সাবধানে। হাতে ঘা হয়ে যায়। শরীরে ছোবল মারে স্নো বাইট। তবুও নিয়তিকে উপেক্ষা করেই প্রতি মরশুমে তাঁরা হাঁটতে থাকেন ঊর্ধ্বমুখী হয়ে। লক্ষ্য ইয়ারসাগুম্বা তুলে নেওয়া। এই বছর একটা ছত্রাক বিকিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় দশ হাজার টাকায়। এখন বাড়ছে দামও। কেননা বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাবে এর উৎপাদন দ্রুত কমছে। তাছাড়া এর চাষ তো হয় না। একেবারে প্রাকৃতিক জিনিষ। তাও পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় সব সময় খুঁজে পাওয়া কঠিন। এমনও দিন যায়, একটাও ছত্রাক বের করে আনতে পারেন না পাহাড়ের মানুষ।

অনেকেই কাঁচা খান, অনেকে মিনিট বিশেক জলে ভিজিয়ে প্রথমে জল পান করেন। তারপর ফুলে যাওয়া ইয়ারসাগুম্বা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। গুঁড়ো খাওয়া যায় দুধে মিশিয়ে। তবে এর নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। রোজ খাওয়া চলবে না। এত তেজি ছত্রাক যে এটি সবার জন্য নয়। একসঙ্গে দু’টোর বেশি খেলে হৃদকম্প বেড়ে, রক্তচাপের কারণে মৃত্যুও হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নেওয়া চলবে না। সবার বিশ্বাস, শুঁয়োপোকা বা শুকনো লঙ্কার মতো এই ছত্রাকটা খেলে যৌন অক্ষমতা দূর হয়। বেড়ে যায় যৌন ক্ষমতা। আশি বছর বয়সেও আঠোরোর শক্তি ফিরিয়ে দিতে পারে এই পাহাড়ি ছত্রাক। শুধু তাই নয়, ক্যানসার, হাঁপানির মতো দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি মেলে।

এক কেজির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কম করে এক লাখ ত্রিশ হাজার ডলার। এক কেজি সোনার চেয়ে অনেক বেশি। তাই পাহাড়ে সব খ্যাপা খুঁজে ফেরে ইয়ারসাগুম্বা নামক পরশ পাথর। যা সিকিম এবং হিমাচল প্রদেশেও মেলে। তবে কম। সিকিমে এর নাম কিরা ঝাড়। কুপুপ, নাথু লা-র মানুষ মাঝে মধ্যে পেয়ে থাকেন এই ছত্রাক। ভারতে এটা নিষিদ্ধ বলেই চোরাচালান হয়। তবে বিভিন্ন ভেষজ সংস্থা এর ব্যবহার করে থাকে বলে খবর। এই ছত্রাক সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় নেপাল ও ভুটানে। দিঘা, পুরিতে যেমন পুঁতিকে সমুদ্র থেকে সদ্য তুলে আনা মুক্তা বলে বিক্রি করেন স্থানীয়রা, তেমনই নেপালে এভারেস্ট যাওয়ার প্রথম বেস ক্যাম্পের লাগোয় কিছু গ্রাম, অথবা প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়াতে গেলেই সেখানকার মানুষ হাজির হয়ে যান ইয়ারসাগুম্বা নিয়ে। তা আসল না নকল চেনার মতো জহুরির চোখ থাকার কথা নয় সকলের। কিন্তু চাহিদা মারাত্মক। তার চেয়েও মারাত্মক হল এর আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্র। আসলে হাতের মুঠোয় শক্তিমান হয়ে ওঠার সুযোগ হাতছাড়া করতে কেই বা চায়? তাই এই ছত্রাক যেন নিশির ডাক। এড়ানো কঠিন, ফেরানো না মুমকিন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.