গ্যাস, তেল বা ধাতব পদার্থ - কোন আগুন কীভাবে নেভাতে হয়, জেনে রাখুন
ODD বাংলা ডেস্ক: অগ্নিকাণ্ডে ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর নতুন নয়। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে বেশ কিছু কারণে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কাছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকা, আগুন কোন ধরনের বা কিসের থেকে সূত্রপাত তা দ্রুত শনাক্ত করতে না পারা।
আগুন বিভিন্ন কারণে লাগতে পারে। ফায়ার সার্ভিস বলছে আগুনের পাঁচটি ধরণ রয়েছে। যেমন-
১. সাধারণ পদার্থের আগুন
২. তেলের আগুন
৩. গ্যাসের আগুন
৪. ধাতব পদার্থের আগুন
৫. ইলেকট্রিক আগুন
১. সাধারণ পদার্থের আগুন- সাধারণ পদার্থ বলতে বাঁশ, কাঠ, কাগজ, কাপড়ে অসাবধানতাবশত আগুন লেগে যেতে পারে। থেকে আগুনের সূত্রপাত হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এ ছাড়া শুকনো বালি ও ভেজা কাঁথা বা ভারী কাপড় দিয়েও এ ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
২. তেলের আগুন- যে কোনো ধরনের তেল, মবিল, পেট্রল বা অন্যান্য তরল পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত ভেজা কম্বল, বস্তা, কাঁথা, ভারী কাপড় দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। ভুল করেও এ ধরনের আগুনে জল দেওয়া যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। যদি কোনো কিছুই পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে শুকনো বালি ছিটিয়েও তরল পদার্থ থেকে সৃষ্ট আগুন বশে আনা যায়। আগুনের মাত্রা অনেক বেশি হলে অ্যাকুয়েস ফিল্ম ফর্মিং ফোম (এএফএফ) ছড়িয়ে দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে হবে।
৩. গ্যাসের আগুন- যে কোনো ধরনের গ্যাস থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিতে বা রাইজারের নব ঘুরিয়ে দিতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগলে ভেজা কাঁথা, কম্বল, বস্তা বা ভারী কাপড় সিলিন্ডারের গায়ে জড়িয়ে চাপ দিয়ে বা নব ঘুরিয়ে কিংবা জলের জোর ঝাপটা দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করুন। সব সময় খেয়াল রাখতে হবে, যদি গ্যাস লিক করছে বোঝা যায়, তাহলে কোনোভাবেই সেই স্থানের কাছাকাছি দেশলাই, সিগারেট, জ্বলন্ত মোমবাতি, কুপি ধরনের কোনো কিছু জ্বালানো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না।
৪. ধাতব পদার্থের আগুন- ধাতব পদার্থের আগুন বা সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি থেকে উৎপত্তি হয় এমন আগুন সব থেকে তীব্র হয়। সরাসরি জলের প্রয়োগে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জল ব্যবহার করা যবে না। যত দ্রুত সম্ভব প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের সহযোগিতা নিতে হবে।
৫. ইলেকট্রিক আগুন- বৈদ্যুতিক মাধ্যম থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটলে কোনোভাবেই পানি দেওয়া যাবে না। জল বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। এর ফলে জলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে যেতে পারে। প্রথমেই বৈদ্যুতিক লাইনের মেইন সুইচ বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। তবে মেইন সুইচে আগুন লেগে গেলে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করুন। যাতে লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্রুততার সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়। লাইন বন্ধ হয়ে গেলে নিরাপদ দূরত্বে থেকে জল ছড়িয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের সাহায্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এতে আগুন সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
আগুন লাগলে তৎক্ষণাত যে কাজগুলো করবেন-
> বাসা বা অফিস যেখানেই অগ্নিকাণ্ডের সম্মুখীন হোন না কেন, প্রথমেই বিদ্যুতের মূল সুইচ ও গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে নিকটস্থ দমকল অফিসে খবর দিন।
> যেখানেই আগুন লাগুক, ভুলেও লিফট ব্যবহার করে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন না। সিঁড়ি দিয়ে নিচে যাওয়া সম্ভব না হলে ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
> আগেই জল দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আগে নিজে বা অন্যদের বের করার চেষ্টা করুন।
> আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে নিজে নিরাপদ স্থানে চলে যান এবং অন্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সাহায্য করুন।
> যদি শরীরে বা পোশাকে আগুন লেগেই যায়, তাহলে দৌড়াদৌড়ি করবেন না। শুয়ে পড়ুন ও গড়াগড়ি দিতে থাকুন যতক্ষণ না আগুন নিভে যায়। সম্ভব হলে আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে ভেজা কাঁথা বা কম্বল দিয়ে জড়িয়ে ধরুন। এতে আগুন দ্রুত নিভে যাবে।
Post a Comment