লক্ষ্মীবাঈ: কোনও রাজা নয়, ঝাঁসিকে মানুষ মনে রেখেছে এক রানির নামে


ODD বাংলা ডেস্ক: ভারতবর্ষের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় বিপ্লবীদের মধ্যে, অত্যন্ত বীর এবং সাহসী, রাণী লক্ষ্মীবাঈ অন্যতম। ভারতীয় ইতিহাসে তাঁর অবদান অতুলনীয়। তিনি 'ঝাঁসির রানি' বা 'ঝাঁসি কি রানি' হিসেবে জনসাধারনের কাছে পরিচিত। আজ ১৮জুন তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে আসুন তাঁর সম্পর্কে কিছু এমন তথ্য জেনে নেওয়া যাক, যা আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবে। 

১৯ নভেম্বর, ১৮২৮ সালে বারাণসী-তে মারাঠী করাডে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মণিকর্ণিকা তাম্বে। কিন্তু, তাঁকে সবাই ভালবেসে ডাকত 'মনু' বলে। তাঁর পিতার নাম মরুপান্ত তাম্বে এবং মাতা ভাগীরথী বাঈ। তাঁর যখন মাত্র চার বছর বয়স, তখন তাঁর মা মারা যান। তারপর, তিনি বিঠুরে চলে আসেন, সেখানে তাঁর পিতা দ্বিতীয় পেশোয়া বাজিরাওয়ের অধীনে কাজ করতেন। 

পেশোয়া মনু-কে বেশ পছন্দ করতেন এবং তিনি তাঁর ছেলে নানা সাহেবের সঙ্গে মনুর কোনও তফাত করতেন না। মনু তাঁর বয়সী শিশুদের থেকে বেশ আলাদা ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীন এবং ঘোড়া চালানো, মার্শাল আর্ট, তরোয়াল চালানো, বিভিন্ন খেলাধুলা এবং রোমাঞ্চকর কাজে তাঁর আগ্রহ ছিল। 

১৮৪২ সালে তিনি ঝাঁসীর মহারাজা গঙ্গাধর রাও নিওয়াকরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পরই তার নতুন নামকরণ হয় 'রানি লক্ষ্মীবাঈ', যা 'ঝাঁসির রানি' হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৮৫১ সালে তাঁদের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় দামোদর রাও। চার মাস পর সন্তানটি মারা যায়। পুত্র শোক ভুলতে রাজা এবং রাণী উভয়েই আনন্দ রাওকে দত্তক নেন। আনন্দ রাও ছিলেন গঙ্গাধর রাওয়ের জেঠতুতো ভাইয়ের ছেলে। তাঁর নাম রাখেন দামোদর রাও। 

বিবাহের পরেও, তিনি খেলাধূলার প্রতি তার আগ্রহ ত্যাগ করেননি। তিনি মেয়েদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তাদের ঘোড়া চালানো, তরোয়াল চালানো সহ যুদ্ধের সমস্ত রকম দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।মন্দিরে যাওয়ার সময়, তিনি ঘোড়ায় চড়ে যেতেন। ঝাঁসির মহারাজা গঙ্গাধর রাও ২১ নভেম্বর, ১৮৫৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

রাজার মৃত্যুর পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর তাঁর দত্তক পুত্রকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে মেনে নেয়নি। কোম্পানি জানিয়েছিল, ঝাঁসির সিংহাসনে প্রকৃত উত্তরাধিকারী নেই, তাই ঝাঁসিকে কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণাধীনে নেওয়া হবে। এর উত্তরে রানী জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর ঝাঁসি কখনোই দিতে রাজি নন। ১৮৫৪ সালে ঝাঁসীর রানির নামে বার্ষিক ৬০,০০০ টাকা ভাতা হিসেবে মঞ্জুর করা হয় এবং ঝাঁসির কেল্লা পরিত্যাগ করার জন্য হুকুম জারি করা হয়। ১৮৫৮ সালে রানী লক্ষ্মীবাই তাঁর সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। 

ব্রিটিশরা যেহেতু প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ছিল, তাই রানি তাঁর দুর্গটি রক্ষা করতে পারেননি। ব্রিটিশ বাহিনী তাঁর শহরে প্রবেশ করে প্রাসাদের দিকে রওনা হয়।এক রাতে দুর্গের দেয়াল থেকে সন্তানসহ লাফ দিয়ে লক্ষ্মী বাঈ প্রাণরক্ষা করেন। আনন্দ রাওকে সাথে নিয়ে রানি তাঁর বাহিনীসহ কাল্পীতে যান। সেখানে তিনি অন্যান্য বিদ্রোহী বাহিনীর সাথে যোগ দেন। তাতিয়া টোপির নেতৃত্বেও একটি বিদ্রোহী দল ছিল।

এরপর, রানি লক্ষ্মী বাঈ এবং তাঁতিয়া তোপি গোয়ালিয়রের দিকে রওনা দেন। গোয়ালিয়র কেল্লা দখল করেন রানি লক্ষ্মী বাঈ এবং তাঁতিয়া তোপি-র সম্মিলিত বাহিনী। রানি পুনরায় ব্রিটিশ আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। তবে, তাঁরা আবার ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে হেরে যান। ১৭ জুন, ১৮৫৮ সালে ফুল বাগ এলাকার কাছাকাছি কোটাহ-কি সেরাইয়ে রাজকীয় বাহিনীর সাথে যুদ্ধ চালিয়ে শহীদ হন রানি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.