কমবয়সিদের মধ্যে বাড়ছে পাইলসের সমস্যা, সমাধান কোন পথে, জানালেন চিকিৎসক

 


ODD বাংলা ডেস্ক: অনেকেরই সকালে উঠে শৌচালয়ের কাজ সারতে এতটাই সময় লাগে যে কাজে বেরোতে দেরি হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন এ ভাবে চলতে থাকলে তা শুধু মানসিক শান্তির ব্যাঘাতই ঘটায় না, শরীরেও বাসা বাঁধতে পারে পাইলসের মতো জটিলতা। শুধু বয়স্কদের মধ্যেই নয়, ইদানীং কমবয়সিদের মধ্যেও বেড়েছে এই সমস্যা। অথচ বেশির ভাগ মানুষের মনেই এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করে। ফলে রোগও আরও জটিল হতে থাকে। কী কারণে হতে পারে পাইলসের সমস্যা, কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত, সমাধান কোন পথে— আনন্দবাজার অনলাইনের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিলেন চিকিৎসক প্রসেনজিৎ চৌধুরী।


পাইলসের সমস্যার এত বাড়বাড়ন্ত কেন?


দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা, ক্রনিক ডায়রিয়া, মলত্যাগে দীর্ঘ ক্ষণ শৌচাগারে বসে থাকা পাইলসের সমস্যার কিছু মূল কারণ। অর্থাৎ বেগ আসছে না, কিন্তু এক জন টয়লেটে বসে দীর্ঘ ক্ষণ মলদ্বারে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, এটাই হচ্ছে পাইলস হওয়ার প্রধান কারণ। এ ছাড়া পারিবারিক ইতিহাস, ফাইবার যুক্ত খাবার কম খাওয়া, গর্ভাবস্থা ও ভারী জিনিস তোলার কারণেও পাইলস হতে পারে।


মূল উপসর্গ কোনগুলি? কী দেখলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?


পাইলসের মুল উপসর্গ হল মলত্যাগের সঙ্গে বা পরে কাঁচা রক্তপাত। সমস্যা বাড়লে মলত্যাগের সময় যন্ত্রণাও অন্যতম উপসর্গ হয়ে ওঠে। মলদ্বারে ব্যথা বা মলত্যাগের সময় রক্ত পড়তে শুরু করলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার। সাধারণ রোগীর পক্ষে পাইলস, ফিসারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ, উপসর্গ প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। প্রতিটির ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।


কিছু নিয়ম সঠিক ভাবে মেনে চললে এই রোগ প্রতিরোধ হতে পারে। 

কিছু নিয়ম সঠিক ভাবে মেনে চললে এই রোগ প্রতিরোধ হতে পারে।


চিকিৎসা কোন পথে?


প্রাথমিক রোগে জীবনযাত্রার বদল ও ওষুধ এবং থার্ড বা ফোর্থ ডিগ্রি পাইলসে অস্ত্রোপচারই ছিল মূলত পাইলসের চিকিৎসা। তবে এখন যে কোনও ডিগ্রির পাইলস লেজারে নিরাময় সম্ভব। যেহেতু কোনও কাটাছেঁড়া করা হয় না, তাই এই পদ্ধতি যন্ত্রণাদায়ক নয়। চিকিৎসার পর দিনই রোগী নিজের স্বাভাবিক কাজকর্মে যোগ দিতে পারেন। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ওপেন সার্জারির চেয়ে অনেক কম।


পাইলস নিয়ে কোন প্রচলিত ধারণাগুলি ভুল?


অনেকেই মনে করেন, পাইলসে অস্ত্রোপচার করলেও সমস্যা ফিরে আসে। আসলে বুঝতে হবে, প্রত্যেক মানুষের মলদ্বারের উপরে তিনটি পাইলস থাকে। যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ মলত্যাগের জন্য চাপ দেন, তাঁদের পাইলস নীচে নেমে রোগের সৃষ্টি করে। এ বার ধরা যাক, একটি পাইলস নেমে এসে রক্তক্ষরণ করাচ্ছে। চিকিৎসক সেটিকেই কেটে বাদ দেবেন। কিন্তু আরও দুটো পাইলস উপরে রয়ে গেল যেগুলো শরীরের স্বাভাবিক অঙ্গ। কিছু বছর পর সেগুলো নীচে নেমে আবার পাইলস রোগের জন্ম দিতে পারে।


ফাস্ট ডিগ্রি পাইলসে অস্ত্রোপচার সম্ভব হয় না। তবে লেজার পদ্ধতিতে একবারে একাধিক পাইলস মিলিয়ে দেওয়া সম্ভব।


পাইলসের সমস্যার প্রতিরোধ কী ভাবে সম্ভব?


কিছু নিয়ম সঠিক ভাবে মেনে চললে এই রোগ প্রতিরোধ হতে পারে। যেমন, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, প্রতি দিন প্রচুর ফাইবারযুক্ত সব্জি, ফলমূল ও খাবার খাওয়া, বেশি করে জল খাওয়া। রেড মিট, বেশি চর্বিযুক্ত খাবার, কড়া মশলা, ফাস্টফুড ইত্যাদি এড়িয়ে চলা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করা। মলত্যাগে কখনও বেশি চাপ প্রয়োগ না করা, শৌচাগারে বেশি ক্ষণ না বসে থাকা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাই সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে। তাই রোজের জীবনে শরীরচর্চা করাও সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.