বাজপাখির জন্য যে দেশে রয়েছে বিশেষায়িত হাসপাতাল

 


ODD বাংলা ডেস্ক: মানুষের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সব দেশে থাকে পশু-পাখিদের হাসপাতাল। সেখানে সাধারণত সব ধরনের পশু-পাখিরই চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, পৃথিবীতে শুধু মাত্র বাজপাখির জন্যই বানানো হয়েছে দুটি হাসপাতাল! এমন বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।


মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাজ ও ঈগল পাখির রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। এটি আরব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিরই অংশ হিসেবে বিবেচিত। প্রাচীনকালে সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরাক, ইরান, কাতার, বাহরাইন, আমিরাত, লিবিয়া, মিশর ও আফ্রিকার মরু অঞ্চলে ঐতিহ্যপূর্ণ খেলা হিসেবে পরিচিত ছিল ফ্যালকন। 


আরব শেখরা একসময় ঘরে বাজপাখি পোষতেন। আর শখের বশে খেলতেন এই খেলা। এটি ছিল আরবদের আভিজাত্যের প্রতীক। খেলায় প্রশিক্ষিত বাজপাখির শিকারকে ধারাল নখে সাহায্যে ধরে মালিকের কাছে নিয়ে আসতেন। বাজ প্রীতির জন্য আরবরা একসময় সারা দুনিয়ায় পরিচিতি লাভ করেছিল।


আরব শেখরা একসময় ঘরে বাজপাখি পোষতেন। আর সখের বসে খেলতেন এই খেলা। এটি ছিল আরবদের আভিজাত্যের প্রতীক। খেলায় প্রশিক্ষিত বাজপাখি শিকারকে ধারাল নখের সাহায্যে ধরে মালিকের কাছে নিয়ে আসতেন। বাজ প্রীতির জন্য আরবরা একসময় সারা দুনিয়ায় পরিচিতি লাভ করেছিল।


মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গেলে এখনো বাজপাখি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য দেখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যে আজো বাজপাখির বিশেষ কদর রয়েছে। আর তাই এদের যত্নের জন্য রয়েছে বিশেষায়িত হাসপাতালে ব্যবস্থার। ১৯৯৯ সালে আমিরাতের একটি পরিবেশ সংস্থা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আবুধাবি ফ্যালকন হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়।


এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের বাজপাখির বৃহত্তম হাসপাতাল। এর প্রবেশ পথে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি ভাস্কর্য। এখানে একসঙ্গে ২০০টি পাখির স্থান সংকুলান ও চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবছর গড়ে সাড়ে ১১ হাজারেরও বেশি বাজপাখিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসকের নাম মার্গিট মুলার। জার্মান এই পশুচিকিৎসকের গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল বাজ পাখির পায়ের রোগ নিয়ে। 


হাসপাতালে প্রতিদিনের জন্য রয়েছে একটি করে ২০ সেন্টিমিটার উঁচু কাঠের খুঁটি। খুঁটি গুলো আবৃত করে রাখা হয়েছে ঘাস দিয়ে। মজার ব্যাপার হলো মানসিক চিকিৎসার জন্য যা যা দরকার হয় সেসব সামগ্রী এখানে বাজপাখির জন্য বরাদ্দ আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অপারেশন থিয়েটার, কোয়ারেন্টাইন রুম, পরীক্ষাগারের বা এক্স-রে রুম, আইসিইউ  বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। 


অপেক্ষার জন্য ওয়েটিং রুমের ব্যাবস্থাও। শুধু তাই নয়, বাজপাখির অপরিণত ছানাদের জন্য রয়েছে ইনকিউবেটরের ব্যবস্থা। প্রাপ্তবয়স্কদের বাজপাখিদের সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যার মধ্যে রয়েছে ভাঙ্গা পালক, ভাঙ্গা পা এবং চামড়া সংক্রমণ। তবে শুধু অসুস্থ হলেই নয়, বরং রক্ত পরীক্ষাসহ তাদের নিয়মিত চেকআপ করানোর সুব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালটিতে।


পালক ভেঙে গেলে বা ঝরে গেলে যাতে উড়তে সমস্যা না হয়, সে জন্য বিভিন্ন আকার ও রঙের পালক সাজানো থাকে স্টোর রুমে। চিকিৎসা শেষে আহত পাখির গায়ে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয় সেই পালক। বাজপাখির চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল কিন্তু তারপরও অর্থ ব্যয় করতে কোনোরূপ কার্পণ্য করেনা মধ্যপ্রাচ্যবাসি। শুধু আরব আমিরাতে নয়, আশপাশের বহু দেশ থেকে পোশাক বাজপাখিদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় এই হাসপাতালে।


অবাক করা বিষয় হলো বাইরের দেশ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা বাজপাখিদের আমিরাতে আসতে হলে পাসপোর্ট লাগে। পাসপোর্টে থাকে মালিকের নাম, বাজেন জন্মতারিখ আর তার গলায় ঝোলানো ১৩ ডিজিটের নম্বর। তবে পাসপোর্টে বাজপাখির ছবি রাখা হয় না, কারণ এদের চেহারা দিন দিন বদলায়। 


বাজই পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, যার রয়েছে বিমান ভ্রমণের অনুমতি। কারন বাজ দিয়ে শিকার করতে আর তার চিকিৎসা করাতে পাখিটিকে বিদেশ ভ্রমণ করতে হয়। আবুধাবির ফ্যালকন হাসপাতালটি এখন আর শুধু চিকিৎসালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, বরং এটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। ২০০৭ সালে এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.