পরশুরামের জিয়ৎ কুন্ড, মৃত সৈন্যকে ফের বানাত জীবিত

 


ODD বাংলা ডেস্ক: কবি মাইকেল মধুসূদন তার এক কবিতায় বলেছিলেন, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে’। আর বিজ্ঞানীরা বলে, এ পৃথিবীতে যেকোনো প্রাণী, সে মানুষ কিংবা গাছপালা হোক, জন্ম হলেই তার মৃত্যু অবিশ্যম্ভাবী। অথচ চিরন্তন এই সত্য জানার পরেও মানুষ সারাজীবন ধরে অমরত্বের খোঁজ করে এসেছে। হিন্দু পুরাণে যে কজন অমরত্বের অধিকারী হয়েছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বর্ণময় এক চরিত্র হলেন পরশুরাম। রামায়ণ ও মহাভারতেও পরশুরামের কথা উল্লেখ রয়েছে।

পরশুরাম কুঠার দিয়ে নিজের মাকে হত্যা করছিলেন। তার বাড়ি ছিলো দক্ষিন ভারতে। মাতৃহত্যার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পরশুরাম মহাস্থানে আসেন। এসে ঘটনাক্রমে মহাস্থানের শাসক হয়ে যান। অত্যাচারী শাসক হিসেবে বেশ নাম করেন তিনি। 


সে সময় শাহ সুলতান বলখী নামে একজন দরবেশ তার দলবল নিয়ে মহাস্থানে ধর্মপ্রচার করতে আসেন। কেউ কেউ বলেন অত্যাচারী পরশুরামের ব্যাপারে কিছু একটা করাও বলখীর একটা উদ্দেশ্য ছিল। 


বলখীর দেশও বেশ দূরে, আফগানিস্তানে। জানা যায়, তিনি মাছের পিঠে সাওয়ার করে মহাস্থানে আসেন। যে জন্য তার নাম হয়ে গিয়েছিলো শাহ সুলতান মাহিসাওয়ার (মাহি মানে মাছ)। তবে অনেকে বলেন সেটা মাছ ছিল না, মাছের মতো দেখতে একটি জাহাজ ছিল। 


পরশুরামের সঙ্গে মাহিসাওয়ারের এক সময় যুদ্ধ বেঁধে যায়। তুমুল যুদ্ধ হয়। ১২০৫ থেকে ১২২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর ধরে সেই যুদ্ধ চলে। সেই যুদ্ধে এমন কিছু প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা শোনা যায়, এই আধুনিককালেও যার কথা চিন্তাও করা যায় না। আর তা হচ্ছে, মৃত সৈন্য জীবিত করা। 


যুদ্ধে মাহিসাওয়ারের দল পরশুরামের দলের যতই সৈন্য হত্যা করে, পরশুরামের সৈন্য তাতে কমে না। দেখা যাচ্ছিল, গতকাল যে সৈন্য মারা যাচ্ছে, সে আজ আবার যুদ্ধ করছে। এ এক বিশাল সমস্যা। 


পরে জানা গেল, পরশুরামের একটা হাইটেক কুয়া আছে। যে কুয়ার নাম জিয়ৎ কুন্ড। এই কূপে মৃত সৈন্যকে স্নান করালে (কেউ বলেন ওই কূপের জল পান করালে) মৃত সৈন্য আবার জীবিত হয়ে উঠত। 


এতে মাহিসাওয়ার জিয়ৎ কুন্ডের ক্ষমতা লোপ করার ব্যবস্থা করলেন। তিনি চিলের মাধ্যমে এক টুকরো গরুর মাংস সেই জিয়ৎ কুন্ডে ফেলে দিলেন। এতে কাজ হলো। কূপের সৈন্য জীবিত করার ক্ষমতা চলে গেল। যুদ্ধে মাহিসাওয়ার বিজয়ী হন এবং পরশুরাম নিহত হন। 


আজ পরশুরাম নেই, তবে সেই জিয়ৎ কুন্ডটা এখনো আছে। জিয়ৎ কুণ্ড বগুড়ার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত একটি কূপ। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.