বাঘ হত্যার জন্য দাওয়াত দেওয়া হতো করবেটকে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: জিম করবেটের নাম শোনামাত্রই কেমন যেন রোমান্স লাগে। বনজঙ্গল আর পশুপাখির কথা মনে পড়ে। তার নান্দনিক কাহিনী-বর্ণনা অনেকেরই জানা আছে। বুনো পশুপাখির অনুসরণ করে পরবর্তীকালে ডাক শুনেই পশুটির নাম বলতে পারতেন করবেট। তাছাড়া, কতদূরে প্রাণীটির অবস্থান, কী তার অবস্থা ইত্যাদি বলতে পারার সক্ষমতা তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা দিয়েছিল। 

জিম করবেট ছিলেন একজন শিকারবিদ ও প্রকৃতি বিষয়ক লেখক। তার ছিল চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গি, শোনার ক্ষমতা এবং প্রখর স্মরণশক্তি। আর ছিল প্রচণ্ড সাহস। মনোবল ছিল দৃঢ়। এসব কারণেই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে সহজেই পৌঁছাতে পেরেছেন। পৃথিবীতে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা স্বীয় যোগ্যতা, মেধা, সাহস, বীরত্ব ও দেশপ্রেমের জন্য অমর হয়ে আছেন। এদের মধ্যে দুঃসাহসী শিকারি জিম করবেটের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 


জিম করবেটের পুরো নাম এডওয়ার্ড জেমস করবেট। তবে তাকে জিম করবেট হিসেবে চেনে বিশ্ববাসী। করবেটের বাবা ছিলেন ব্রিটিশ। ব্রিটিশ আমলে তিনি ভারতের নৈনিতালে পোস্ট মাস্টারের চাকরি করতেন। সে সূত্রে করবেটের জন্ম ভারতের নৈনিতালে। দেশভাগের পর অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের পর কেনিয়ায় গমন করেন।


করবেটের জন্মস্থান নৈনিতালের চারিদিকে ঘন বনজঙ্গল ছিল। তার কাচে বন ও পশুপাখি ছিল দারুণ প্রিয়। এ নেশা থেকেই শিকারি হয়ে ওঠেন করবেট। ছোটবেলা থেকেই করবেট শিকার করতেন। বড় হয়ে তিনি বিখ্যাত শিকারি হয়ে উঠলেন।  


সে সময়ে ভারতের অনেক স্থানে বাঘ-লোপার্ডের উৎপাত ছিল। একবার মানুষখেকো বাঘকে গুলি করে অসংখ্য মানুষ বা এলাকাবাসীকে মুক্ত করেছিলেন করবেট। এরপর থেকেই মানুষখেকো বাঘ বা লেপার্ড হত্যা করার জন্য করবেটকে দাওয়াত দেওয়া হতো। মানুষখেকো বাঘ বা লেপার্ড না হলে তিনি কোনো প্রাণীকেই হত্যা বা গুলি করতেন না! 


বৃদ্ধ বয়সে করবেটকে তার বন্ধুরা শিকারকাহিনী লিখতে অনুপ্রাণিত করেন। সে হিসেবে তিনি বেশ কিছু শিকারকাহিনীর বই লেখেন। তার লেখা শিকারকাহিনীর চমৎকার শব্দবুনন, সহজ ভাষায় নিখুঁত বর্ণনা তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গেছে। তার মতো সুন্দর শিকারকাহিনী খুব কম লেখকই লিখতে পেরেছেন। 


তবে, তিনি এসব শিকারকাহিনী মোটেও লিখতে চাননি। কিন্তু বন্ধুদের বিশেষ অনুরোধে তিনি লিখে ফেললেন তার জীবনে ঘটে যাওয়া সব রোমাঞ্চকর ঘটনা। তিনি সহজ করেই লিখে বসলেন ভয়ঙ্কর সব মানুষখেকোদের কথা, যাদের তিনি শিকার করেছেন। ১৯৪৬ সালে ম্যান ইটার্স অফ কুমায়ুন নামে শিকারকাহিনী নিয়ে লেখা তার প্রথম বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি খুব দ্রুত সারাবিশ্বে শিকারকাহিনী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এরপর তিনি শিকার কাহিনী নিয়ে একে একে লিখে ফেললেন ম্যান ইটিং লেপার্ড অব রুদ্রপ্রয়াগ (১৯৪৮), জঙ্গল লোর (১৯৫৩), দ্য টেম্পল টাইগার অ্যান্ড মোর ম্যান ইটার্স অব কুমায়ুন (১৯৫৪)-এর মতো লোমহর্ষক সব শিকারকাহিনী। এক নিমেষেই পড়া যায় বাস্তব কাহিনী নিয়ে করবেটের বইগুলো। বইগুলোতে বনজঙ্গল, বিভিন্ন প্রাণীর বৈশিষ্ট্য-আচরণ ইত্যাদি জানিয়ে দেবে। শিকারকাহিনীগুলো গা শিউরে দেবে। 


তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি একজন ভালো সৈনিকও ছিলেন। তিনি অনেক পদক আর পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা ভারতবর্ষের লোকজনের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছেন। এখনো বিশ্বে অনেক পরিবেশবাদী বা প্রকৃতিপ্রেমীর ভালোবাসায় সিক্ত তিনি। ভারতের একটি সাফারি পার্কের নামকরণ করা হয়েছে তার নামে। নৈনিতালের কাছে ‘করবেট ন্যাশনাল পার্ক’।


জিম করবেট মাই ইন্ডিয়া (১৯৫২) নামে একটি বই লেখেন। সেখানে তিনি ভারতবর্ষের সহজ-সরল মানুষের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি এ অঞ্চলের মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। তাই আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়াতে যাওয়ার পরেও এদেশের মানুষকে মনে রেখে বই লিখেছেন। ১৯ এপ্রিল, ১৯৫৫ সালে নাইরোবিতে মৃত্যুবরণ করেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.