এই গাছেরা একে অন্যকে স্পর্শ করতে চায় না.‌.‌

 


ODD বাংলা ডেস্ক: সার সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে লম্বা লম্বা গাছ। পাশাপাশি। পর পর। ঠিক স্কুলের প্রার্থনসভার মতো। অথচ কারও সঙ্গে কারও মাথা ঠেকছে না। ঠিক স্কুলপড়ুয়াদের মতোই। কীভাবে?‌ এ রকমও হয়?‌ হয় বৈকি। সব গাছের ক্ষেত্রে নয়। তবে কিছু গাছের ক্ষেত্রে হয়। বিজ্ঞানীরা একে বলেন ‘‌ক্রাউন শাইনেস’‌।


সব বনে কিন্তু এই ক্রাউন শাইনেস দেখা যায় না। ব্ল্যাক ম্যানগ্রোভ, পাইন গাছ, জাপানিজ লার্চ, ইউক্যালিপ্টাসের কিছু প্রজাতি ছাড়া আরও কিছু প্রজাতির মধ্যে ক্রাউন শাইনেস দেখা যায়। সাধারণত একই প্রজাতির একাধিক গাছের মধ্যে ক্রাউন শাইনেস দেখা গেলেও কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির গাছের মাঝেও এটি দেখা যায়। আবার একই গাছের একাধিক ডালের মধ্যেও এটি দেখা যেতে পারে।

যখন প্রথম চোখে পড়ে.‌.‌


১৯৮২ সাল। তীব্র গরম। তা থেকে বাঁচতে জীববিজ্ঞানী ফ্রান্সিস জ্যাক পাট্‌জ কোস্টারিকার গুয়ানাকাস্টে ন্যাশনাল পার্কের ব্ল্যাক ম্যানগ্রোভ ফরেস্টে হাঁটছিলেন। অনেক কাজ শেষে ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। তাই গাছের নীচে শুয়ে পড়লেন। ওপরে তাকাতেই হতবাক। বাতাস দিচ্ছে। এক গাছের ডাল আর এক গাছের ডালের গায়ে নুয়ে পড়ছে। কিন্তু পাতাগুলো একে অপরকে যেন অচ্ছুত করে রেখেছে। যুক্তি ঠিক কী.‌.‌


পাট্‌জ যুক্তি দিয়েছিলেন, যে গাছেরও ব্যক্তিগত দায়রার প্রয়োজন আছে। পরবর্তীকালে এই নিয়ে গবেষণা করেছেন অনেক বিজ্ঞানী। সকলেরই যুক্তি আলাদা। তবে অনেকেই মনে করেন, এই ক্রাউন শাইনেস–এর পিছনে কোনও কারণ থাকার সম্ভাবনা কম।


কিছু বিজ্ঞানী প্রথমদিকে অনুমান করেছিলেন যে, সালোকসংশ্লেষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আলোর অভাবেই গাছগুলো নিজেদের মাঝে এই শূন্যস্থানগুলো পূরণ করতে পারে না। জীববিজ্ঞানী মেগ লোম্যানের মতে, যে মুহূর্ত থেকে গাছগুলোর মধ্যে দূরত্ব বাড়বে, তখন থেকে গাছগুলোর উৎপাদনশীলতা বাড়বে। আইসোলেশনের (বিচ্ছিন্নতা) এ রকমই সৌন্দর্য। গাছগুলো নিজেদের স্বাস্থ্যরক্ষা করে চলেছে।


১৯৫৫ সালে উত্তর–পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় এক জাতের ইউক্যালিপ্টাস গাছের ওপর গবেষণা করা হয়। এতে বলা হয়, প্রচণ্ড বাতাসের কারণে একটি গাছ আর একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে গাছগুলোর মাথার দিকে পাতা এবং ডাল ভেঙে যায় এবং এক গাছের সঙ্গে আর এক গাছের দূরত্ব তৈরি হয়। ১৯৮৪ সালে বিজ্ঞানী পাট্‌জও প্রায় একই কথা বলেন।


দুই দশক পর মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী মার্ক রুদনিকির নেতৃত্বে একটি দল কানাডার আলবার্তায় গবেষণা চালান। বাতাসের প্রভাবে পাইন গাছ কত জোরে ধাক্কা দেয়, সেই বল পরিমাপ করেন। তারা দেখতে পান, যেসব বনে বায়ু চলাচল বেশি এবং সমান উচ্চতার লম্বা গাছ বেশি, সেসব বনে ক্রাউন শাইনেস বেশি ঘটে।


ক্রাউন শাইনেসের নেপথ্যে রয়েছে গাছের নিজস্ব সুবিধা। মনে করেন লোম্যান। তিনি বলেন, গাছের অন্যতম একটি অঙ্গ হচ্ছে তার পাতা। গাছ চায়, যে কোনো মূল্যে তার পাতাকে রক্ষা করতে। যদি বাতাসের কারণে এর কোনও একটি ডালে আঘাত লাগে, তাহলে তা গাছটির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এজন্যও গাছেরা দূরত্ব বজায় রেখে বসবাসের চেষ্টা করে।


মিগেল ফ্র্যাংকোর একটি তত্ত্বে বলা হয়েছে, প্রতিটি গাছ তার প্রতিবেশীদের এমন একটি প্যাটার্নে বা ছাঁচে বসতে বাধ্য করে, যা খাবারের উপাদান সংগ্রহকে সর্বাধিক করে তোলে এবং ক্ষতিকর প্রতিযোগিতা হ্রাস করে। বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত মিথস্ক্রিয়া বেশ জটিল বিষয়। ফলে ক্রাউন শাইনেসের পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.