সেথু এক্সপ্রেস, স্কিনা ট্রেন... বিশ্ব জুড়ে যে রেলপথগুলিতে এক বার যাত্রা না করলেই নয়

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ঘুরতে কে না ভালবাসেন! কারও পাহাড় ভাল লাগে, কেউ সমুদ্র পছন্দ করেন, কেউ আবার অরণ্য। প্রকৃতির কোলে সকলেই প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারেন। তবে, এই গন্তব্যস্থলগুলিতে পৌঁছনোর পথগুলিও যদি প্রকৃতির কোল ঘেঁষে অবস্থিত হয়?


ভারত এবং বিদেশে কিছু রেলপথ রয়েছে, যেগুলি এমন সব এলাকার উপর দিয়ে গিয়েছে, যাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখেই যাত্রীরা মুগ্ধ হতে বাধ্য। নীচে তেমন কয়েকটি রেলপথের নাম উল্লেখ করা হল, যে পথে অন্তত এক বার যাত্রা না করলেই নয়।


৩৬০ ডিগ্রি মাচু পিচু ট্রেন: পেরুর মাচু পিচু পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি। গাছপালা এবং এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমীদের মন কাড়ে। যাত্রীরা যাতে মাচু পিচুর সৌন্দর্য আরও উপভোগ করতে পারেন, তাই ইনকা রেলের তরফে ৩৬০ ডিগ্রি ভিস্টাডোম কোচযুক্ত ট্রেন চালু করা হয়েছে।


গ্লেসিয়ার এক্সপ্রেস, সুইৎজারল্যান্ড: নামের মধ্যে এক্সপ্রেস থাকলেও গ্লেসিয়ার এক্সপ্রেস বিশ্বের সবচেয়ে ধীর গতির ট্রেন। সুইৎজারল্যান্ডের দু’টি বিখ্যাত রিসর্ট সেন্ট মোরিৎজ্ এবং জারমার্টকে যুক্ত করে। ২৯১ কিলোমিটারের এই পথে ট্রেনটি আল্পস্ পর্বতের মধ্যবর্তী উপত্যকা, প্রচুর সেতু এবং পর্বত কেটে গড়া সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে যায়।


ঘান ট্রেন, অস্ট্রেলিয়া: পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য রেলযাত্রার মধ্যে অন্যতম। এই ট্রেনটি চলে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে ডারউইন পর্যন্ত। তিন থেকে চার দিনের এই যাত্রায় ট্রেনযাত্রীরা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। যাত্রীদের জন্যে বিভিন্ন স্টেশনে কখনও উটের পিঠে চড়ার ব্যবস্থা, কখনও তারা ভরা আকাশের নীচে নৈশভোজের ব্যবস্থাও করা হয়।


রোভো রেল নামিবিয়া সাফারি, দক্ষিণ আফ্রিকা: দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ার ক্যাপিটাল পার্ক স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে ওয়ালভিস বে পর্যন্ত এই ট্রেনটি যাতায়াত করে। ন’দিনের এই যাত্রায় আফ্রিকার মরুভূমি থেকে জঙ্গল সাফারি— সব কিছুর ব্যবস্থা রয়েছে।


কুইংঘাই রেলপথ, তিব্বত: মালভূমির উপরে যতগুলি রেলপথ রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উচ্চতম রেলপথ হল কুইংঘাই রেলপথ। কুইংঘাই প্রদেশের শিংনিং থেকে লাসা পর্যন্ত যুক্ত করে। এই ট্রেনটি কারহান সল্ট ব্রিজ, কুইংঘাই হ্রদ এবং টঙ্গুলা পর্বতমালার উপর দিয়ে যায়। সারা বছর টঙ্গুলা পর্বতমালা বরফে ঢাকা থাকে। ফলে যাত্রীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন ট্রেনের জানালার ধারে বসেই।


কোস্টাল ক্লাসিক রেলপথ, আলাস্কা: আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজ থেকে সিওয়ার্ড পর্যন্ত এই ট্রেনটি প্রতি দিন যাতায়াত করে। কোনও ভ্রমণপিপাসু ব্যক্তি আলাস্কায় গেলে এই ট্রেনে অবশ্যই যাত্রা করেন। ‘ওয়ান-ডে ট্রিপ’-এর জন্য এই চার ঘণ্টার ট্রেনযাত্রার অভিজ্ঞতা কোনও ভাবেই বাদ দেওয়া যায় না।


কপার ক্যানিয়ন রেলপথ, মেক্সিকো: মেক্সিকোর এই রেলপথটি বানাতে মোট ৯০ বছর লেগেছিল। মেক্সিকোর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যাত্রা শুরু করে পর্বতের উঁচু জায়গায় গিয়ে ট্রেনটি থামে। পথে মাত্র ১৩টি স্টপেজ রয়েছে। গিরিখাতের ভিতর দিয়ে অসংখ্য সেতু ও সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে এই ট্রেন চলাচল করে।


রিইউনিফিকেশন এক্সপ্রেস, ভিয়েতনাম: ভিয়েতনামের এলাকা বিশেষে সংস্কৃতিগত বৈশিষ্ট্যের হেরফের লক্ষ করতে চাইলে এই এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রা করা সঠিক সিদ্ধান্ত। ভিয়েতনামের একেবারে উত্তর প্রান্ত হ্যানয় থেকে দক্ষিণ প্রান্তের সায়গন পর্যন্ত এই ট্রেন যাতায়াত করে।


স্কিনা ট্রেন, কানাডা: অ্যালবার্টার জ্যাস্পার ন্যাশনাল পার্ক থেকে এই ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে কানাডার রকি পর্বতমালার উচ্চতম শৃঙ্গ রবসন-এর সামনে দিয়ে যাতায়াত করে। এই ট্রেনটি ‘রুপার্ট রকেট’ নামেও পরিচিত।


রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড, নরওয়েতেও এ রকম বহু রেলপথ রয়েছে যা, বরফে ঢাকা পর্বতমালা, মালভূমি ও গিরিখাতের মধ্যে তৈরি টানেলের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে।


কোঙ্কন রেলপথ: শুধু বিদেশেই নয়, ভারতের মধ্যেও এই ধরনের রেলপথ রয়েছে। স্বপ্ননগরী মুম্বই ও গোয়া যাতায়াতের জন্য কোঙ্কন রেলপথ ধরে যাওয়া এক অন্য অভিজ্ঞতা। সহ্যাদ্রি পর্বতমালার প্রতিটি বাঁকে জলপ্রপাত, সেতু, হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রেলযাত্রীদের অভিভূত করে।


সেথু এক্সপ্রেস: বলিউডের বহু হিন্দি ছবিতে একটি দৃশ্য দেখা যায়। জলরাশির উপর দিয়ে একটি লম্বা সেতু। তার উপর দিয়ে ট্রেন ছুটে যাচ্ছে। চেন্নাই থেকে রামেশ্বরম যাওয়ার পথে এই সেতুটি পড়ে। রামেশ্বরমগামী এই ট্রেনটির পাম্বান সেতু পার করতে ১৫ মিনিটের কাছাকাছি সময় লাগে। এই অভিজ্ঞতা সত্যিই মনে রাখার মতো।


গোয়া-কর্নাটক রেলপথ, ভারত: গোয়ার ভাস্কো-ডা-গামা থেকে কর্নাটকের লোন্ডা সড়কপথে যেতে তিন ঘণ্টার কাছাকাছি সময় লাগে। কিন্তু এই একই পথ যদি ট্রেনে যাওয়া হয়, তবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগবে। সময় বেশি লাগলেও এই ট্রেনগুলি যে পথে যাতায়াত করে, তার সৌন্দর্য মন মাতাবেই। সবুজ পাহাড়ের মাঝে, জলপ্রপাতের সামনে দিয়ে ট্রেনগুলি চলাচল করে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.