আজ পিতৃদিবস, জানেন কেন পালিত হয় এই দিন

ODD বাংলা ডেস্ক: বাবারা সব বোঝে, কিন্তু কিছুই বলে না। সব বুঝেও চুপ করে থাকেন। ফলে রাগারাগি করে আজান্তেই বাবাদের গায়ে অবুঝ, তুমি এটা বোঝো না, কথা বলতে পারো না এব ট্যাগ পড়ে যায়। মাদার্স ডে নিয়ে যতটা হইচই হই ফাদার্স ডে নিয়ে কিন্তু ততটাও হয় না। বাবাকে সকলেই ভালোবাসেন, বোধহয় এই ভালোবাসাটা নিঃশব্দ রাখতেই বেশিরভাগ জন পছন্দ করেন। কিন্তু কবে থেকে এই দিন উদযাপন শুরু হল, কোথায় বা প্রথম ফাদার্স ডে উদযাপন করা হয় তা কি জানতেন?

জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় ফাদার্স ডে। বিশ্বের প্রায় ৮৭ টি দেশে এই দিন পালন করা হয় বাবাদের মনে রেখে। তবে মা-বাবার জন্য নির্দিষ্ট কোনও দিন হয় না। আমাদের জীবনে প্রতিটা দিনই তাঁদের জন্য। ১৯১০ সালে ওয়াশিংটনে প্রথম পালন করা হয় এই দিন। তবে এই ফাদার্স ডে এর নেপথ্যে রয়েছেন একজন মহিলা। সোনোরা স্মার্ট ডড। সোনোরা খুব কম বয়সে তাঁর মাকে হারান। এদিকে সোনোরার বাবা ছিলেন পেশায় সৈনিক। খুব কষ্ট করেই বিপত্নীক মানুষটি তাঁর ছেলে মেয়েদের মানুষ করেন। আর তাই বাবাকে সম্মান জানাতেই সোনোরা ও তাঁর ভাইবোনেরা ঠিক করেন জাঁকজমক করে এই দিনটি পালন করতেই হবে। এরপর তাঁরা গির্জা ও স্থানীয় প্রশাসনের দ্নারস্থ হন। এরপর তাঁদের উদ্যোগেই প্রথম পালিত হয় ফাদার্স ডে। তবে সোনোরা চেয়েছিলেন ৫ জুন তাঁর বাবার জন্মদিনের দিনটি বাবাদের দিবস হিসেবে পালন করতে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা না হয়ে জুনের তৃতীয় রবিবারকেই তাঁরা বেছে নেন।

শোনা যায় সোনোরার আগেও কিন্তু আমেরিকায় ফাদার্স ডে পালন করা হয়েছে। ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় পালন করা হয় ফাদার্স ডে। যদিও এই দিনটির কথা জানতেন না বলেই জানিয়েছেন সোনোরা। কিন্তু ফাদার্স ডে যাতে সরকারি স্বীকৃতি পায় এবং যাতে এই দিন ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাঁর জন্য প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন সোনোরা। অবশেষে ১৯১৩ সালে মার্কিন সংসদে ফাদার্স ডে-কে ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করা সংক্রান্ত একটি বিল আসে। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত দিনের আলো দেখেনি৷ ১৯২৪ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ক্যালভিন কুলিজ ফাদার্স ডে উদযাপনের দাবির প্রতি ব্যক্তিগত সহমত প্রকাশ করেন।

শেষপর্যন্ত অনেক টাবলাহানার পর ১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ফাদার্স ডে-কে ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালে মার্কিন কংগ্রেস রীতিমতো সরকারি নির্দেশ জারি করে জানায়, প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার ফাদার্স ডে পালিত হবে। ওইদিন সবকটি সরকারি দফতরে উড়বে মার্কিন পতাকা, আয়োজন করা হবে বিবিধ অনুষ্ঠানের। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের জমানায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পিতৃদিবস উদযাপন শুরু হয়।

সেই সঙ্গে ভারত, ব্রিটেন, জাপান, চিলি, মায়ানমার, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও পালন করা শুরু হয় এই বিশেষ দিনের। তবে বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়ায় জুন মাসের দ্বিতীয় রবিবার ফাদার্স ডে হিসেবে পালন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রবিবার পালন করা হয় ফাদার্স ডে হিসেবে। থাইল্যান্ডে অবশ্য ৫ ডিসেম্বর ফাদার্স ডে হিসেবে পালন করা হয় কারণ সেদিন ওখানকার রাজার জন্মদিন।

মধ্যযুগের ইতিহাস ঘাঁটলেও খোঁজ মেলে ফাদার্স ডে-এর। ক্যাথলিক বিশ্বাসে জোসেফ হলেন যীশু খ্রিস্টের পিতা। রাজা হেরডের অত্যাচার থেকে বাঁচতে অন্তঃসত্ত্বা মাতা মেরীকে নিয়ে জেরুজালেমে চলে যান তিনি। সেখানেই জন্ম নেন যীশু। তাই জোসেফকে ‘নারিশর অফ দ্য লর্ড’ বলা হয়।

তবে বিশ্বজুড়ে এখন এই জুনের তৃতীয় রবিবারই ঘটা করে পালন করা হয় ফাদার্স ডে। ফাদার্স ডে-এর কিছুদিন আগে থেকেই অনলাইন কেনাকাটায় থাকে নানা ছাড়। এছাড়াও নিজের মতো করে দিনটি উদযাপনের সুযোগও রয়েছে। তাই নিজের মতো করে বাবাদের জন্য পালন করুন বিশেষ এই দিন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.