শরীরে আলো জ্বালিয়ে যোগাযোগ করে অদ্ভুত এই প্রাণী

ODD বাংলা ডেস্ক: মানুষের মতো কথা না বলতে পারলেও সব প্রাণীদেরই রয়েছে ভিন্ন ভাষা। হয়ত তাদের ভাষা কাগজে কলমে লেখাও যায় না। প্রজাতিভেদে বিভিন্ন প্রাণী একেকভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। 

কোনো প্রাণী শব্দ উৎপন্ন করে আবার কোনো প্রাণী অঙ্গভঙ্গির মধ্যে বিভিন্ন ইঙ্গিতের সাহায্যে যোগাযোগ করে থাকে। সমুদ্র এবং স্থলের কয়েকটি প্রাণী নিজের শরীরের মাধ্যমে আলো উৎপন্ন করতে পারে। তেমনই একটি সামুদ্রিক প্রাণী স্কুইড। তারা শরীরে রঙিন আলো উৎপন্ন করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। 

স্কুইড সমুদ্রের একটি অন্যতম অদ্ভুত প্রকৃতির প্রাণী।  বেশ কয়েকটি প্রজাতির স্কুইড শরীরে আলো উৎপন্ন  করতে পারে। স্কুইড টেউথিডা গোত্রভুক্ত একপ্রকার সামুদ্রিক প্রাণী। প্রায় ৩০০ প্রজাতির স্কুইড রয়েছে টেউথিডা বর্গের। অন্যান্য সেফলাপোডার মতো স্কুইডিরেওস্বতন্ত্র মস্তক, বাহু ও ছদ্মবেশ ধারণের ক্ষমতা।

স্কুইডের উভয়পাশে সাঁতর কাটার জন্য পাখা রয়েছে। বেশিরভাগ সামুদ্রিক প্রাণী সাঁতারের জন্য পাখনার উপর নির্ভরশীল হলেও স্কুইডরা ভিন্ন। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আগেই জানতে পারেন, স্কুইড শরীরের রঞ্জক কোষের সাহায্যে রঙিন আলো উৎপন্ন করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। তবে রহস্য হলো গভীর সমুদ্রের অন্ধকারে কীভাবে হাম্বল্ট স্কুইডের মতো একটি স্বতন্ত্র প্রাণীর রঙিন আলোর ধরনগুলো দৃশ্যমান হয়। 

হাম্বল্ট স্কুইডের উদ্ভাবনীমূলক যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে নতুন একটি গবেষণায় বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। গবেষণাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান একডেমির প্রসিডিংস-এ প্রকাশিত হয়েছে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বেনজামিন পি বার্ফোর্ড। 

তিনি বলেন, হাম্বল্ট স্কুইডের লুমিনসেন্ট (আলোর বিকিরণ) সমষ্টিগতভাবে পুরো শরীর জুড়ে ক্ষুদ্র বিন্দু আঁকারে ছড়িয়ে থাকে। এরা বাইরের পরিবর্তে ফটোফোরগুলোর (আলোকিত বিন্দু) সাহায্যে শরীরের অভ্যন্তরের কোষগুলোতে আলোর বিকিরণ করে। এর ফলে তাদের পুরো শরীর আলোকিত হয়ে ওঠে। 

হাম্বল্ট স্কুইড ‘রেড ডেভিলস’ বা লাল শয়তান নামেও পরিচিত। শত শত স্কুইড দল বেঁধে গভীর সমুদ্রে বাস করে। তারা আলোর মাধ্যমে ৬০০ ফুটের গভীর সমুদ্র থেকেও যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তবে উৎপন্ন আলোর ক্রোমাটোফোরগুলো খুবই সূক্ষ্ম। মন্টেরি বে অ্যাকুরিয়াম রিসার্স ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলীয় অঞ্চলের একদল স্কুইডকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। 

হাম্বল্ট স্কুইডের দৈর্ঘ ছয় ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এরা দল বেঁধে চলা কিংবা শিকার ধরার সময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। এই স্কুইড প্রজাতি শরীরে রঞ্জকের সাহায্যে আলো উৎপন্ন করতে পারে এবং এর ধরণও পরিবর্তন করতে পারে। এসময় তারা শরীরে ঝাঁকুনিও সৃষ্টি করে। গবেষকরা মনে করেন, রঞ্জকের মাধ্যেম রং পরিবর্তন করে বার্তা প্রদান করে। 

গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন, বৃহৎ সেফলাপোডদল শিকার ধাওয়া করার সময় সমন্বয় সাধন করে। একাধিক স্কুইড একই শিকারের পেছনে ছোটে না। এর থেকে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান শরীরের ঝাঁকুনি কিংবা আলোর সংকেতের মধ্যমে নিজেদের মধ্যে বার্তা প্রদান করে স্কুইডরা। গবেষক বার্ফোর্ড স্কুইডদের আলোর সাহায্যে বার্তা দেয়াকে ট্রাফিক সিস্টেমের সঙ্গে তুলনা করেছেন।        

গবেষকরা স্কুইডারের শরীর থেকে কমপক্ষে ২৮টি ভিন্ন ধরনের আলোর ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে রেকর্ড করতে পেরেছেন। বার্ফোর্ড এবং তার সতীর্থ গবেষক দল প্রাণীটির বার্তা প্রদান করার ভিজ্যুয়াল কোড বোঝার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এই কোড বুঝতে পারলে হয়তো মানুষও স্কুইডারের ইঙ্গিত ব্যবহার করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.