জঙ্গি নির্যাতনে স্বামী, সন্তান এমনকি সতীত্ব হারিয়েছেন এসব নারীরা

ODD বাংলা ডেস্ক: ফাতেমা আমিনের জীবন মুহূর্তেই তছনছ হয়ে যায়। যখন তার স্বামীকে আইসিস জঙ্গিরা হত্যা করে। ছয় সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন এই নারী। সিরিয়ান এই নারী চোখের জলকে সঙ্গী করে ২০১৫ সাল থেকে একাই ছয় সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে বসবাস করছেন জিনওয়ার গ্রামে। 

শুধু ফাতেমা নন জিনওয়ার গ্রামের প্রত্যেক নারীর জীবনে রয়েছে এক একটি মর্মান্তিক ঘটনা। কেউ আইসিস জঙ্গিদের হাতে দীর্ঘদিন যৌনদাসী হয়ে বর্বরোচিত অত্যাচারের মুখোমুখি হয়েছেন। কারও স্বামীকে খুন করা হয়েছে। কেউ বা জঙ্গি হামলায় সন্তান-স্বামী হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন। কেউবা দিনের পর দিন ধর্ষণ হয়ে সন্তানসম্ভবা হয়েছিলেন। 

জীবনের ঘটনা যাই হোক না কেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এক সরলরেখায় তারা যে অত্যাচারিত এবং অবহেলিত, তা নির্দ্বিধায় বলছেন ওই গ্রামের মহিলারা। পুরুষ কর্তৃক নানাভাবে নির্যাতিত নারীরা গড়ে তুলেছেন জিনওয়ার গ্রাম। কুর্দিশ ভাষায় এর অর্থ হলো ওমেন্স ল্যান্ড। এই গ্রামটি নারী ও শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলেছেন শত কষ্ট বুকে থাকা এসব সাহসী নারীরা।

তাইতো পুরুষের প্রবেশ নিষেধ এই গ্রামে। সেখানকার বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী জয়নব গাবারী এক গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের জীবনে কোনো পুরুষের প্রয়োজন নেই। আমরা বেশ ভাল আছি। যেসব নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান, তাঁদের জন্য এটা আদর্শ জায়গা।’ 

নিশ্চিন্তে এই গ্রামে জীবন কাটাচ্ছেন তারা। জিনওয়ার গ্রামটা পার হলেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া। আইসিস জঙ্গিদের কালো পতাকা আর মুহূর্মুহু গ্রেনেডের হুঙ্কারে কার্যত জনপদ শূন্য। এর মধ্যেই নিজেদেরকে নিজেরা নিরাপত্তা দিয়ে তৈরি হয়েছে সুরক্ষিত গ্রাম। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কুর্দিশ এলাকায় এই জিনওয়ার গ্রামে সব বাসিন্দাই নারী। 

কড়া পাহারায় থাকে ‘প্রমীলা ব্রিগেড’

জিনওয়ার গ্রামে ঢোকার পথে সামনের ফটকে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকে বেশ কয়েকজন নারী। তারা আইসিসদের হামলা রুখতে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কড়া পাহারা দিচ্ছেন। কৃষিকাজ থেকে স্কুলে পড়ানো সব কাজে পারদর্শী এরা। স্থানীয় নারী এবং আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে এই গ্রাম।

গ্রামের বাড়িগুলোর দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা আছে নারীদের বীরত্বের নানা কাহিনী। শরণার্থী হয়ে না পালিয়ে আইসিস জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। স্বামীহারা ৩৮ বছরের আমিরা মহম্মদ বলেন, নারী ছাড়া স্বাধীনতা পাওয়া যায় না। যতদিন না নারীরা শিক্ষিত হচ্ছেন, স্বনির্ভর হচ্ছেন এই সমাজও কখনো স্বাধীন হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা নিজেরাই কৃষিকাজ করি। ফসল ফলাই। সেই ফসল রফতানিও করি। আবার সন্তান পালনও করি। পুরুষবিহীন এই ছোট্ট গ্রামই এখন ‘শান্তির রাজধানী’ তৈরি হয়েছে বাশার-অল আসাদের যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.