মেয়েকে ২৬ বছর ঘরবন্দি রেখেছে মা
ঘরবন্দি থাকা কতটা দুরূহ ব্যাপার করোনা সংকটে মানুষ তা উপলদ্ধি করতে পেরেছেন। ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ঘরবন্দি থাকাটা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। অথচ রাশিয়ার এক নারী গত ছাব্বিশ বছর নিজের বাড়ির বাইরে যাননি। এক বাড়ি, এক ঘরেই তিনি বালিকা থেকে মধ্য বয়েসি নারীতে রূপান্তরিত হয়েছেন।
হতভাগা
এই নারীর নাম নাদিজদাহ ভাসুয়েভা। রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ভাস্কেয়ীতে
তার বসবাস। গত আড়াই যুগ ধরে তার জন্মদাত্রী মা তাকে ঘরবন্দি করে রেখেছিল।
তবে খুব বড় কোনো কারণে নাদিজদাহের এই গৃহবন্দি দশা নয়, সামান্য একটা কারণে
তার জীবন থেকে সোনালি সময় হারিয়ে গেছে। আর এজন্য পুরোপুরি দায়ী তার মা।
নাদিজদাহের
মায়ের নাম তাতায়ানা। সরকারি চাকরি করতেন, এখন অবসরপ্রাপ্ত। নাদিজদাহকে ছোট
থেকে তার মা কড়া শাসনে মানুষ করেছেন। প্রতিবেশী সমবয়সীদের সঙ্গে মেশা ছিল
একেবারেই নিষেধ৷ খেলাধুলা, একসঙ্গে স্কুলে যাওয়াতেও বারণ ছিল তার।
দিনকে
দিন তার মায়ের এই শাসনের বিধি নিষেধ বাড়তে থাকে। নাদিজদাহর বয়স যখন ১৬ তখন
থেকে তাকে ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন। সেই ১৬ বছরের বালিকা নাদিজদাহ
এখন ৪২ বছরের মধ্য বয়েসি নারী। পৃথিবীর অনেক কিছু বদলে গেছে কিন্তু একটুও
বদলায়নি নাদিজাদহের জীবন।
কিন্তু কেন? কেন নিজের
মেয়ের সঙ্গে এই নিষ্ঠুর আচরণ! স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই
নাদিজদাহের মা তাতায়ানা মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি ভাবতেন
বাইরে বেশি বের হলে তার মেয়ের বড় রকমের কোনো ক্ষতি হতে পারে। এই উদ্বিগ্নতা
ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যায় রূপান্তরিত হয়। ফলে ধীরে ধীরে নাদিজদাহেরও ঘর
থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় স্কুলে যাওয়া। এমনকি বাড়ির বাইরে
বের হওয়াও বন্ধ করে দেন।
প্রথমদিকে প্রতিবেশীরা
নাদিজদাহের মায়ের কাছে তাকে গৃহবন্দি করার কারণ জানতে চাইতেন। তবে এই বিষয়ে
কেউ কথা বলতে গেলে তিনি রেগে যেতেন। ঘরের দরজা বন্ধ করে দিতেন। এসব কারণে
প্রতিবেশীরাও একসময় হাল ছেড়ে দেন। ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজেদের জীবন নিয়ে।
বিকল্প উপায় না পেয়ে নাদিজদাহও গৃহবন্দি জীবনে নিজেকে মানিয়ে নেন।
চলতি
মাসের গোড়ার দিকে তাতায়ানা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার
প্রয়োজন হয়। এ কারণেই নাদিজদাহ ছাব্বিশ বছর পর ঘর থেকে বের হন।
দীর্ঘ
দুই যুগের বেশি সময় পর নাদিজদাহকে দেখে প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে যান। কারণ
দীর্ঘদিন ঘর থেকে বের না হওয়ায় তার চেহারায় এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
ঠিকমতো গোসল না করায় তার চুলে জট বেঁধেছে। পোশাক পরিবর্তন না করায় তা মলিন
হয়ে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে আছে।
নাদিজদাহের এই করুণ
দশা দেখে প্রতিবেশীরা তাকে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে নিয়ে যান। সেখানে বসেই
নাদিজদাহ শুনিয়েছে তার ছাব্বিশ বছরের বন্দিদশার করুণ গল্প। চলতি মাসের
মাঝামাঝি রাশিয়ার এক টেলিভিশন চ্যানেলে তার এই কাহিনি প্রচার করা হয়। সেই
ভিডিও ক্লিপস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই নাদিজদাহের এই
করুণ জীবনের গল্পে সমব্যাথী হয়ে সাহায্য করতে চেয়েছেন।
Post a Comment