হাজারো শিশুর জীবন বেঁচেছে তার দেওয়া স্যুপ খেয়ে
ODD বাংলা ডেস্ক: এক বাটি গাজরের স্যুপে কিনা জীবন ফিরে পেয়েছে হাজারো শিশু। ভাবতে অবাক লাগলেও সত্যি। আর্নেস্ট মোরো নামক এক হৃদয়বান চিকিৎসক উদ্ভাবন করেন গাজরের বিশেষ স্যুপ।
যার সাহায্যে তিনি জীবন বাঁচিয়েছেন হাজারো শিশুর। আমরা হয়ত এমন চিকিৎসকের কথা বইয়ে বা টিভিতে কাল্পনিক চরিত্রে দেখে থাকব। তবে বাস্তবে এমন মানুষও রয়েছেন। তেমনই একজন আর্নেস্ট মোরো। তিনি স্লোভেনিয়ার লিজুব্লিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭৪ সালে। তখন সেখানে প্রতিষ্ঠিত ছিল অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য।
তিনি অস্ট্রিয়ার গ্রেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করেন। এরপর তিনি জার্মানির হেইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পেডিয়াট্রিক বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। তখন সবে প্রেডিয়াট্রিক (শিশু বিভাগ) বিষয়টি উন্নতি লাভ করেছে। শিশুদের জন্যও ওষুধ আবিষ্কার সবে শুরু হয়েছে।
এমন সময় তিনি ইউরোপে একটি গবেষণার কাজে গিয়ে দেখলেন, সেখানে শিশু মুত্যুর হার উদ্বেজনক। প্রায় ২৫ শতাংশ শিশুই তখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিল। এক হাজারেরও বেশি শিশু তখন ওই অবস্থায় কাতরাচ্ছে। একজন চিকিৎসক হিসেবে তার এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত? অবশ্যই চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
মোরো তো নিরুপায় কারণ তার নাগালে এতো ওষুধও নেই যে শিশুদেরকে দেবে। তিনি চিন্তা করলেন প্রাকৃতিক উপায়ে যদি তাদের সুস্থ করা যায় তবে কেমন হয়? ভাবার সঙ্গে সঙ্গেই কাজে লেগে পড়লেন মোরো। কারণ হাতে সময় নেই, যে কোনো সময় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা মারা যেতে পারে।
তার মাথায় এলো গাজরের কথা। ততক্ষণাৎ কিছু গাজর পরিষ্কার করে জলে সিদ্ধ করতে শুরু করলেন। গাজর সেদ্ধ হলে সেই ফুটানো পানির মধ্যে সামান্য লবণ মিশিয়ে সেখানকার সব শিশুকে খাওয়ালেন। সামান্য এক গাজরের স্যুপ কিনা শিশুদের মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করল। সবাই তো অবাক!
পরবর্তীতে অবশ্যই মোরোর এই কার্যক্রম নিয়ে অন্যান্য চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করা শুরু করেন। অতঃপর জানা যায়, গাজরে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যা শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে। এজন্যই গাজর ডায়রিয়া সারাতে কার্যকরী এক উপাদান। পরবর্তীতে ড. মোরোর এই ফর্মুলাই ডায়রিয়ার অ্যান্টিবায়োটিকস ও অ্যান্টিডায়রিয়াল ওষুধে পরিণত হয়।
এরপর থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর হার কমতে শুরু করে। জীবন বাঁচানোর এক ম্যাজিক পানীয় গাজরের স্যুপ। এর আবিষ্কারক আর্নেস্ট মোরো যদি সেদিন পরীক্ষামূলকভাবে গাজরের স্যুপ না তৈরি করতেন, তাহলে হয়ত হাজারো শিশুর জীবন বাঁচত না। এমনকি আমরাও আধুনিক সব ওষুধের সাক্ষাৎ পেতাম না। শুধু ডায়রিয়ার ওষুধ নয় বরং মোরো আরো অনেক ওষুধ শিশুদের জীবন বাঁচাতে উদ্ভাবন করেছেন।
১৯৩৬ সালে নাজি পার্টি ক্ষমতায় আসলে মোরো হেইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি গ্রেট মোরোর সঙ্গে বিবাহিত জীবন শুরু করেন। অতঃপর তিনি একটি প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৪৮ সালে। সেখানেই তিনি পরবর্তীতে চিকিৎসাসেবার কাজ শুরু করেন।
Post a Comment