নির্মম এক প্রথা! দাঁত না ঘষলে তাদের বিয়েই হয় না
ODD বাংলা ডেস্ক: আজব সব রীতি-নীতিতে চলছে বিশ্ব! যা আপনার বা আমার কাছে অবাক করা বিষয় তা হয়ত অন্যদের কাছে পরিচিত বিষয়! বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রীতি-নীতিতে পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক।
তাই বলে এ কেমন আজব নিয়ম যে, দাঁত না ঘষলে বিয়ে হবে না। ভাবছেন নাকি দাঁত মাজার বিষয়ে কথা বলছি? না, ধাতব বস্তু দিয়ে দাঁত ঘষে সমান করার বিষয়ে বলছি। যা খুবই ভয়াবহ ও যন্ত্রণাদায়ক বটে।
ইন্দোনেশিয়ার একটি বালি দ্বীপ সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানেন। এই দ্বীপে অদ্ভুত কিছু নিয়ম রয়েছে। যা রীতি মতো আপনাকে অবাক করে দিবে। এই দ্বীপের ছেলে মেয়েদের বিয়ের আগে দাঁত ঘষা হয়। যাতে তারা কামনা, লোভ, রাগ, ইর্ষা, গর্ব ও সন্দেহ থেকে মুক্তি পায়।
অতীতকাল থেকে আজো এই রীতির প্রচলিত হয়ে আসছে। এটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টকর এক রীতি।বালিবাসীরা হিন্দু ধর্মাবলাম্বী। তাদের অন্যতম এক অনুষ্ঠান হচ্ছে দাঁত ফাইলিং করা বা দাঁত ঘষা। এই দাঁত ঘষা অনুষ্ঠানটি বালির প্রতিটি ছেলে মেয়ের জন্য বাধ্যতামূলক।
স্থানীয়ভাবে এই অনুষ্ঠানটিকে ‘মেপান্দেস’ বা ‘মেসাঙ্গিহ’ নামে পরিচিত। এই অনুষ্ঠানটি বালিবাসীদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বালিবাসীরা ভালো মন্দের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার উপদেশ গ্রহণ করে এই অনুষ্ঠান থেকে। তারা বিশ্বাস করে, ছয়টি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে থাকে। এগুলো সাদ রিপু নামে পরিচিত।
এই সাদ রিপু খ্রিস্টান ধর্মের সাতটি মারাত্মক পাপের সমান। রিপু অর্থ শত্রু। তারা এটি ব্যবহার করে দাঁতের উপরের এবং নীচে উভয় স্থানে ঘষে। এই অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে বিয়ের কনে বা বর কোনো শব্দ করতে পারবে না। কারণ এটি তাদের ধৈর্যের পরীক্ষা। কতটা নির্মম প্রথা একবার ভেবে দেখুন!
প্রথমে হালকা করে বাঁশের টুকরা দিয়ে দাঁতগুলো ঘষে নেয়া হয়। অতঃপর ধাতব বিভিন্ন বস্তুর সাহায্যে দাঁত ঘষে বিভিন্ন আকৃতির দেয়া হয়। এই অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে নারী বা পুরুষের মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। এটি তাদের সন্তানের প্রতি পিতামাতার দায়িত্বের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তাছাড়া প্রত্যেক বাবা মায়ের দায়িত্ব এই অনুষ্ঠানটি পালন করা। বালিতে বসবাসকারী ব্যক্তিরা কৈশোরে পৌঁছানোর পরে তাদের দাঁত ঘষার মাধ্যমে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। যেহেতু অনুষ্ঠানটি অনেক ব্যয়বহুল, তাই তারা কয়েকজন মিলে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। আবার কোনো কোনো পরিবার একাও করে।
এই অনুষ্ঠান ছাড়া তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয় না। কারণ তারা মনে করেন দাঁত ঘষা একজন ব্যক্তির বয়ঃসন্ধিকাল থেকে পূর্ণ বয়স্কে রূপান্তর হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা দাঁত ঘষার আগে তাদের সূর্যদেবতার পূজা করে। পূজা শেষ হয়ে গেলে, অংশগ্রহণকারীরা তাদের পুরোহিত দ্বারা দাঁত ঘষে।
এরপর তারা নিজেকে শুদ্ধ করে। আবার দেবতাদের কাছে প্রার্থনা করে। আধ্যাত্মিকভাবে তারা এখন সম্পূর্ণরূপে প্রাপ্ত বয়স্ক। দাঁত ঘষা বালিবাসীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। কারণ তারা মনে করেন, এটি কোনো ব্যক্তির খারাপ আচরণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। তবে যে কেউ এই অনুষ্ঠান দেখতে পারে না। কারণ দাঁত ঘষার অনুষ্ঠানটি কেবলমাত্র পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
Post a Comment