ফুলের মধু ছেড়ে মিষ্টি খাচ্ছে মৌমাছি!
প্রাণিজগতের অন্যতম পরিশ্রমী ও উপকারী পতঙ্গ মৌমাছি। মধুমক্ষিকা বা মধুকর নামেও মৌমাছি পরিচিত। মৌমাছির ক্ষুদ্র জীবনের অন্যতম কাজ হলো মধু সংগ্রহ করা। এজন্য এরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং দূরে আরো দূরে উড়ে চলে। তবে মৌমাছির পরিশ্রমের পুরো ফলটাই ভোগ করে মানুষ ও পরিবেশ।
ফুলের
সঙ্গে মৌমাছির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কথা সবারই জানা। ফুল মধুর বিনিময়ে
মৌমাছির গায়ে জড়িয়ে দেয় রেণু। সেই রেণু অন্য ফুলে ছড়িয়ে পড়ে মৌমাছি এবং
বাতাসের মাধ্যমে। ঘটে পরাগায়ন। রক্ষা পায় প্রকৃতির ভারসাম্য। সম্প্রতি
হাজারো বছরের এমন স্বাভাবিকতার মাঝে ছন্দপতনের অশঙ্কা করছেন
প্রকৃতিপ্রেমীরা।
বরগুনা
পৌর শহরের আলাইপট্টি। হরেক রকম মিষ্টির জন্য বিখ্যাত এই বাজার। এখানকার
মিষ্টির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের যেমন ভিড় থাকে, তেমনি মৌমাছিদেরও দেখা মেলে
সকাল-সন্ধ্যা। মৌমাছি হুমড়ি খেয়ে পড়ে মিষ্টির ওপর। এ নিয়ে
প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে নানান প্রশ্ন।
আলাইপট্টিতে
মিষ্টি কিনতে এসেছেন রাসেল, সোহাগ, রিমা ও জাহিদ। মিষ্টির দোকানে মৌমাছির
ঝাক দেখে তারা অবাক। তারা বিস্মিত কণ্ঠে বলেন, মৌমাছি ফুলের বাগান ছেড়ে
মিষ্টির দোকানে কেন উড়ে বেড়াচ্ছে বুঝতে পারছি না। তারা প্রশ্ন করেন- মৌমাছি
কি মিষ্টি থেকে মধু তৈরি করছে? নাকি খাচ্ছে?
মিষ্টি বিক্রেতা বলেন, মিষ্টির দোকানে মৌমাছি আসবেই। এটা নতুন কিছু নয়। তবে ঝাকে ঝাকে মৌমাছি আসছে এখন। নরম মিষ্টি চুষে চুষে খায়।
কথা
হলে আরো দুই মিষ্টি বিক্রেতা রাখাল মালাকার ও আবদুল মান্নানের সঙ্গে।
তাদের যুক্তি শহরের প্রকৃতিতে ফুলের পরিমাণ কম। তাই হয়তো ফুল না পেয়ে
মিষ্টির দোকানে আসছে মৌমাছি। তারা বলেন, ‘কোনোভাবেই এদের ঠেকাতে পারছি না।
তবে মৌমাছি খাদ্যের ক্ষতি করে না। বিরক্ত না করলে কাউকে হুলও ফোটায় না।’
মৌয়াল
আইয়ুব আলী ও নশা মিয়া বলেন, মৌমাছি পবিত্র পতঙ্গ। প্রকৃতিতে ফুল কমে
যাচ্ছে। তাই হয়তো মিষ্টির দোকানে যায়। আগেও মিষ্টির দোকানে মৌমাছি যেত। তবে
এখন একটু বেশিই যায় দেখছি।
বরগুনা
সরকারি মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক খালেদা জান্নাতি বলেন,
মৌমাছি ফুলে ফুলে ঘুরে ফুলরস থেকে মধু সংগ্রহ করে। কিন্তু সারাবছর তো ফুল
থাকে না। যখন ফুল থাকে না তখন খাদ্যসংকট দেখা দেয়। তখন শ্রমিক মৌমাছি হন্যে
হয়ে খাবার খুঁজতে শুরু করে। তাই নিজেদের খাদ্যের তাগিদে তারা মিষ্টি বা
চিনি জাতীয় খাদ্যের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
একই
কথা বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো.
আব্দুল রশীদ। প্রকৃতিতে যখন রঙিন ফুল না থাকে তখন মৌমাছি বিভিন্ন স্থানে
যায়। হাটবাজার, মিষ্টির দোকানে সোর্স খোঁজে মধু সংগ্রহের জন্য- বলেন তিনি।
Post a Comment