এসব জায়গায় মৃত্যুবরণ করা একদমই নিষিদ্ধ!
ODD বাংলা ডেস্ক: মৃত্যুর উপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। মৃত্যু একটি প্রাকৃতিক বিষয়। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, পৃথিবীতে এমনো স্থান রয়েছে যেখানে মরতে নিষেধ। মৃত্যুর উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি শুধু এক জায়গায় নয় বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় চালু রয়েছে।
খ্রীষ্টপূর্ব ৫ শতকে গ্রীক দ্বীপ ডেলোসের বাসিন্দাদের সেখানে মৃত্যুবরণ করাকে নিষেধ করা হয় ধর্মীয় কারণে। যারা মারা গিয়েছিল সেখানে তাদের কবর খনন করে সরিয়ে নেয়া হয়। এরকম আরো কিছু শহরের কথা নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের প্রতিবেদন।
ফালসিয়ানো দেল মসসুকো
ইতালির ফালসিয়ানো দেল মসসুকো শহরে ২০১২ সাল থেকে মরা নিষিদ্ধ। তবে সেখানে অবশ্য পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে নয় বরং জায়গার চরম সঙ্কটের কারণে মৃত্যু নিষিদ্ধ। ছোট্ট গ্রামটির পুরনো কবরস্থানটা আগেই ভর্তি হয়ে গেছে। নতুন কবর বানানোর জায়গাও নেই। এ কারণে সেখানকার মেয়র বাধ্য হয়েই শহরের অধিবাসীদের মৃত্যু সম্পূর্ণভাবে নিষেধ ঘোষণা করেন!
লংইয়ারবেন
নরওয়ের সবার্দ দ্বীপের লংইয়ারবেনে বসবাস করে প্রায় দেড় হাজার মানুষ। সেখানকার স্থানীয় কবরস্থানটি ৭০ বছর আগে থেকেই মারাত্মক কবর সংকটে ভুগছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার ওই দেশে মৃতদেহ না পচে অবিকল রয়ে যায় যুগের পর যুগ। তাই সেখানেও মরতে মানা। বাধ্য হয়ে সারা জীবন লংইয়ারবেনে কাটানোর পর বয়স্করা জীবনের শেষটা পার করেন অন্য কোনো শহরে গিয়ে।
কারণ মরে গেলেও যে সেখানে কবরের মাটিটুকুও জুটবে না। তারপরও কেউ যদি সেখানে মরেই যায় তবে মৃতদেহ জাহাজে করে দূরের কোনো শহরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।সেখানকার তাপমাত্রা প্রায় শূন্যের কোঠায়। এজন্যই মৃতদেহকে মাটি দিলেও তা পচে না। গবেষকরা ১৯১৭ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে মরে যাওয়া এক ব্যক্তির মৃতদেহ পরীক্ষা করে দেখেছেন, দেহ তো বটেই তাতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও অবিকৃত রয়ে গেছে।
ইতসুকুসিমা
জাপানের পশ্চিমের একটি ছোট দ্বীপ ইতসুকুসিমা। সেখানে বসবাসকারী প্রায় দুই হাজার অধিবাসীর বেশিরভাগই প্রাচীন শিনতো ধর্মের অনুসারী। এই ধর্ম মানেই হলো শুদ্ধতা। ইতসুকুসিমা দ্বীপটি সেখানকার অধিবাসীদের কাছে এক পবিত্রতম স্থান। আর তাই সেখানকার ধর্মগুরুদের মতে, দ্বীপে কারো মৃত্যু হওয়া মানে সেখানকার পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যাওয়া।
এ কারণেই ওই দ্বীপের অধিবাসীদের মরে যাওয়া মানা! নিশ্চয় ভাবছেন, তবে কি তারf মরে না! অবশ্যই মরে। মরণাপন্ন মানুষটিকে নিয়ে যাওয়া হয় দ্বীপের সীমানার বাইরে। এজন্যই সেখানকার বয়স্ক মানুষেরা সবসময় ধর্মগুরুদের নজরদারিতে থাকেন। কেউ বেশি বুড়িয়ে গেলে বা অতিরিক্ত অসুস্থ হয়ে পড়লে সময় থাকতে দূরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এমনকি গর্ভবতী নারীদেরও সন্তান জন্ম দিতে হয় দ্বীপটির বাইরে গিয়ে। ১৮৭৮ সাল থেকে এই নিয়ম চলে আসছে।
তবে কেন এই নিয়ম? ইতসুকুসিমার ইতিহাসে যুদ্ধ হয়েছিল মাত্র একবার। বহু বছর পূর্বে সেখানকার ওই লড়াইয়ে মারা যায় অনেক মানুষ। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই মৃতদেহ বাইরে সরিয়ে ফেলা হয়। যেসব দেয়ালে রক্ত লেগেছিল, সেগুলোও ঘষে তুলে ফেলা হয়। রক্তমাখা মাটি কোদাল দিয়ে চেঁছে বাইরে ফেলে দেয়া হয়। এর পর থেকেই মরণের ওপর চলে আসছে এই নিষেধাজ্ঞা!
বিরিটিবা মিরিম
ব্রাজিলের সাও পাওলোর একটি শহর বিরিটিবা মিরিমে মৃত্যু নিষেধ। সেখানকার মেয়র ২০০৫ সালে এমনই একটি আইন পাস করেন। তার অভিযোগ, সেখানকার অধিবাসীরা নিজেদের শরীরের খেয়াল রাখে না। ফলে অসময়ে মারা যায় অনেকে। চাপ পড়ে কবরস্থানের ওপর। এমনিতেও নদীবহুল এই শহরে স্থলভাগের পরিমাণ কম। ১৯১০ সালে তৈরি হওয়া স্থানীয় কবরস্থানটি প্রায় পূর্ণ।
সেলিয়া
ইতালির আরেকটি ছোট্ট শহর সেলিয়ার মেয়রও মৃত্যুকে নিষিদ্ধ করেছে। ২০১৫ সালের আগস্টে তিনি এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করেন। দক্ষিণ ইতালির ওই শহরে মাত্র ৫৩৭ অধিবাসীর বাস। তাদের বেশিরভাগই বয়স ৬৫ বছরের উপরে। মূলত সেখানেও মৃতদেহ দাফনের জায়গার অভাবের কারণে মৃত্যু নিষেধ। এ কারণে মেয়র সর্বদা সেখানকার মানুষের সুস্থতায় কাজ করে যাচ্ছে। নিয়মিত শরীরের চেকআপ করার অধিবাসীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
সারপুরেনক্স
ফ্রান্সের সারপুরনেক্স শহরেও সেই জায়গাসংক্রান্ত সমস্যা। কবরস্থানের জায়গা বাড়ানোর পরিকল্পনা কোর্টে পাস হয়নি। এ কারণেই সেখানকার মেয়র আইন করে মৃত্যু নিষেধ করে দিয়েছে। এমনকি যারা আত্মহত্যার চেষ্টাও করবে, তাদের কপালে জুটবে কঠোর সাজা।
Post a Comment