বয়ঃসন্ধির পর থেকেই রঙিন মুখোশে মুখ ঢাকা বাধ্যতামূলক এই নারীদের!

ODD বাংলা ডেস্ক: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীরা তাদের পোশাকে পর্দা ব্যবহার করেন। বিশেষ করে মুসলিম নারীরা বোরকা এবং হিজাব বা নিকাব ব্যবহার করেন। সম্প্রতি মুসলিম নারীরা নিকাবের পরিবর্তে এক অদ্ভুত রঙিন মুখোশের ব্যবহার শুরু করেছেন। 
দক্ষিণ ইরানের হরমুজগান প্রদেশের কাশ্মাম দ্বীপের নারীরা ব্যবহার করেন এমনই রঙিন মুখোশ। এটি বিভিন্ন রং আর আকারের হয়ে থাকে। নাকের উপর এবং কপাল জুড়ে পরেন এই মুখোশ। এসব মুখোশ তারা ঘরেই তৈরি করেন। তারা নানা রকম শৈল্পিক প্রতিভা ফুটিয়ে তোলেন এক টুকরো কাপড়ের উপর। 

হাতে এবং মেশিনে তারা এই চমকপ্রদ মুখোশগুলো তৈরি করেন। মুখোশের ডিজাইনে আবার অঞ্চল, জাতি এবং ধর্মীয় অনুষঙ্গ ভেদে ভিন্নতা রয়েছে। শিয়া সম্প্রদায়ের নারীরা পরেন আয়তাকার লাল মুখোশ। আর যারা সুন্নি সম্প্রদায়ের আছেন তারা পরেন কালো বা নীল রঙের সোনালি রঙা জ্যামিতিক আকারের মুখোশ। 

কথিত আছে, এই মুখোশটি বহু শতাব্দী আগে সম্ভাব্য আক্রমণকারীদের বোকা বানানোর চেষ্টা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য নারীদের এ ধরনের মুখোশ পরানো হত। যাতে শত্রুপক্ষ বুঝতে না পারে এরা আসলে পুরুষ নাকি নারী। মুখোশ ব্যবহার একসময় এই অঞ্চলের সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়ায়। 

এই মুখোশগুলো নারীদের মুখ এবং চোখকে সূর্য থেকে রক্ষা করতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখোশ পরা একজন মেয়ের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। এটি তারা তাদের সামাজিক অনুষ্ঠান এবং সমাবেশেও পরিধান করে। অনেক নারীদের মুখোশগুলো অনেকটা পুরুষের গোঁফের মতো। এগুলো তৈরি হয় স্বর্ন দিয়ে।    

সম্প্রতি ফটোগ্রাফার এরিক ল্যাফোর্গ এই চিত্রগুলো প্রকাশ করেন। তার চিত্রের মাধ্যমেই বিশ্ববাসী ইরানের এই সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। এরিক বেশ কিছুদিন এই এলাকা ঘুরে বেরিয়েছেন। নারীদের ছবি তুলেছেন এবং এর পেছনের গল্প জানার চেষ্টা করেছেন। সেখানে তাদের অনুমতি নিয়েই তিনি ছবিগুলো তুলেছেন। কারণ না জানিয়ে ছবি তোলা বা চুরি করে ছবি তোলাকে তারা অপমান ভাবেন। 

এরিক বলেন, সেখানকার বেশিরভাগ নারীর হাতের আঙ্গুলের রং নীল। ধারণা করা হয়, লাল নীল এসব রঙের কাজ করতে গিয়েই হাতে এই রং বসে গিয়েছে। সারাক্ষণই তারা এসব রঙের কাজ করতে থাকেন। তাই হাত থেকে রংগুলো সহজে যায় না। তবে এখন অনেকেই এসব মুখোশের পরিবর্তে ওড়না ব্যবহার করছেন। আবার অনেকে ঐতিহ্য বজায় রাখতে ব্যবহার করছেন এসব মুখোশ। 

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো নববধূদের মুখোশ থাকে ভিন্ন। নানা রঙের সুতার কাজ করা থাকে তাদের মুখোশে। প্লাস্টিকের ফুল, কোরআনের বিভিন্ন আয়াত লেখা। বিয়ের পর সাতদিন পর্যন্ত বর কনে জানালাবিহীন এক ঘরে আটকা থাকে। এরপর নববধূ বাড়ির ছাদে উঠে নিচে বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে মিষ্টি ছুড়ে দেয়। 

এখানকার নারীদের মুখোশগুলো এমনভাবে বানানো হয় যাতে চোখ দেখা যায়। আর যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আছে তাদের মুখোশে চোখের জায়গা খালি রাখা হয় না। এসব মুখোশেরও রয়েছে বিশেষত্ত্ব। মুখোশ দেখলেই তাদের বয়স ও পরিচয়ও নির্ধারণ করা সম্ভব। বান্দর আব্বাস অঞ্চলে, কালো মাস্কগুলো নয় বছর বয়স থেকে মেয়েদের পরানো হয়। কমলা রঙের মুখোশ বাগদত্তের জন্য, লাল মুখোশটি বিবাহিত নারীরা পরেন। 

রঙের উপর নির্ভর করে মুখোশের দাম কমবেশি আছে। কমলা রঙের মুখোশ সবচেয়ে ব্যয়বহুল। আর কালো রঙেরটা তুলনামূলক সস্তা। আগে হাতে এসব মুখোশ তৈরি হলেও এখন মেশিনেও তৈরি হচ্ছে এসব। মিনাবের পাঞ্জাব্বে বাজারে, মুখোশযুক্ত বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হয়। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা এসব মুখোশ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে।   

কেশেমের বাসিন্দা, জিনাত ইরানের মূল ভূখণ্ডে এসে মেডিকেলে পড়তেন। নিজ অঞ্চলে ফিরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন মুখোশ পরবেন না। ফলস্বরূপ, তিনি ১০ বছর ধরে সম্প্রদায় থেকে আলাদা আছেন। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে ত্যাগ করেছে। 

জিনাত এই অস্বস্তিকর প্রথা থেকে মানুষকে বের করে আনতে চেয়েছিল। ওই অঞ্চলে অনেক মেয়ে মারা যায় মুখোশ পরার পর শ্বাসকষ্টের কারণে। জিনাত এখন এই বর্বর প্রথা বন্ধ করার জন্য লড়াই করছে। তবে সে কখনো সফল হতে পারবে কিনা তা আমরা জানি না।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.