মৃত্যু নিয়ে মজা, তারপর স্টেজেই জীবন লীলা সাঙ্গ হলো কমেডিয়ানের! এ এক মর্মান্তিক ঘটনা...

ODD বাংলা ডেস্ক: একজন ব্রিটিশ কমেডিয়ান। মানুষকে আনন্দ বিনোদন দেয়াটাই তার কাজ। এই স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ানের নাম ইয়ান কগনিটো। এপ্রিলের ১১ তারিখ। সেদিন তার শরীর বেশি একটা ভাল ছিল না। তবুও, তিনি শো বাতিল করেননি। তার কমেডি শো ছিল সাউদার্ন ইংল্যান্ডের বাইচেস্টার এটিক বারে। কগনিটো নিজেকে চনমনে রাখতে কিংবা কিছুটা সময় মজা করতে করতে রিফ্রেশমেন্ট নিয়ে আসার জন্যেই হয়ত অসুস্থ থাকবার পরেও নিজেই জোর করে শো করতে চেয়েছিলেন।

কমেডিয়ানরা সবকিছু নিয়েই মজা করে, ব্যঙ্গ করে। কেউ আবার নিজের দূর্বলতাকেও হাসি ঠাট্টা দিয়ে উড়িয়ে দেয়। কগনিটো এমন ধাঁচের কমেডিয়ান কিনা কে জানে, কিন্তু এদিন তিনি নিজেকে নিয়ে যা বলেছেন তা অদ্ভুতভাবে মিলে গেছে। শরীর অসুস্থ বলেই হয়ত মৃত্যুচিন্তা ঘুরছিল মাথায় তার। সেজন্যেই হয়ত স্বভাবসুলভ স্টাইলে মৃত্যু নিয়েও মজা করতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, কল্পনা করুন সবাই, আমি যদি এখন আপনাদের সামনে মারা যাই…

কমেডিয়ানের এমন কথা কি আর তখন কেউ সিরিয়াসলি নিয়েছে হয়ত না। মৃত্যু এমন অদ্ভুত অচিন্ত্যনীয় আর এত আনপ্রেডিক্টেবল যে, এক মুহুর্ত আগেও ভাবা যায় না কিছুই। বিশেষ করে কেউ যদি এভাবে নিজের মৃত্যুর কথা বলে যে কিনা আবার একজন কমেডিয়ান, তার কথায় গুরুত্ব কে দেবে! কমেডিয়ান ইয়ান কগনিটোর কথাও সবাই শুনেছিল, মৃত্যু নিয়ে ঠাট্টাসুলভ মন্তব্য সবাই শুনেছিল, ওই মুহুর্তে অনেকে হয়ত হেসেছিল, কারো হয়ত এই জোকসে হাসি আসেনি, কিন্তু, কেউ সত্যি সত্যি কল্পনা করেনি কগনিটো সেদিনই স্টেজে মারা যাবে…

১৯৮৫ সাল থেকে কগনিটো কমেডি করে বেড়ান। বয়স হয়েছিল ষাট। তার বিরুদ্ধে জাতিগতবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ আছে। তবে এমনিতে তিনি বেশ জনপ্রিয় স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান। একারণেই অনেক জায়গায় তার অভিনয় অনুমতি বন্ধ করে দেয়া হলেও কদর কমেনি, শো করতেন নিয়মিতই। দর্শকও পেতেন ভালই। বৃহস্পতিবারে এটিক বারেও বেশ ভাল সংখ্যক দর্শক এসেছিল ইয়ান কগনিটোর কৌতুকে হাসতে।

কগনিটো যখন বললেন, ‘ধরুন আমি যদি এখন আপনাদের সামনে মারা যাই..’ তার কিছুক্ষণ পরই তিনি ঢলে পড়ে গেলেন, লোকজন মনে করলো এটাও তার কৌতুকের অংশ। মৃত্যুর কথা বলে সে মৃত্যুর ভান করে দেখাচ্ছে। তাই, কগনিটোর মাটিতে পড়ে যাওয়া দেখে দর্শকরা সবাই হো হো করে হাসছিলো। কিন্তু, এই ভূ-পতন ছিল না স্ক্রীপ্টে। কগনিটো লম্বা লম্বা শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু, মাত্র পাঁচ মিনিট, তারপর আর চেষ্টা করতে হয়নি। 

কগনিটোর কাছে দৌড়ে আসে শো’টির হোস্ট, অন্যান্য কমেডিয়ান। তারা ভেবেছিল এই বুঝি কগনিটো বু দিয়ে সবাইকে চমকে দেবে। কিন্তু, কোনো চমক ঘটেনি। মহাপতন হয়ে গেছে ততক্ষণে। অ্যাম্বুলেন্স এসেছে, নার্স, ডাক্তার এসেছে। কাগজে কলমে মৃতদের দলে যোগ দিয়েছেন তখন কগনিটো, হাসি ঠাট্টা কান্নার বহু উর্ধ্বে তার যাত্রা।

শো’টির হোস্ট এন্ড্রু বার্ড দেখেছেন কি ঘটেছিল। তার মন্তব্য, যখন কগনিটোর শরীরটা উল্টে সোজা করছি, তখনো মনে হচ্ছিল, এই বুঝি বলে উঠবে বুউউ। ভয় দেখিয়ে চমকে দেবে সবাইকে। কয়েক দিন ধরেই তার শরীরটা খারাপ ছিল। আমরা শো করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু সে শোনেনি, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে অসুস্থতা নিয়ে মজা করছিল, চলেও গেল তার মাঝেই।

দর্শকদের একজন যিনি বসে দেখেছিলেন সেই শো তার কাছে এটা অসহনীয় এক ঘটনা। দর্শকের নাম জন অস্টোজাক। তিনি বলেন, ঢলে পড়ার কয়েক মিনিট আগেও সে স্ট্রোক করা নিয়ে ঠাট্টা করেছে। বলেছে, ‘এমন যদি হয় ভয়াবহ একটা স্ট্রোক হলো এবং তারপর আবার উঠে দাঁড়িয়ে আমি ওয়েলস ভাষায় বলা শুরু করলাম..

কগনিটো স্ট্রোক, মৃত্যু সবকিছু নিয়ে মজা করার পর যখন টলে পড়ে গেল, তখন পাঁচমিনিট ধরে দর্শকদের সবাই হেসেছে। তারা যখন জানতে পারলো, কগনিটোর পড়ে যাওয়া স্ক্রীপ্ট নয়, কৌতুক নয়, তখন দর্শকদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল কল্পনা করে দেখুন! একটা অপরাধবোধ হয়ত কাজ করছিল তাদের, যদিও এতে তাদের হাত নেই।

একটা গান ছিল এমন, এক সেকেন্ডের নাই ভরসা। ১৯৯৫ সালের কথা। সেবছর জানুয়ারিতে শিল্পকলা একাডেমিতে লোকসঙ্গীতশিল্পী ফিরোজ সাঁইয়ের গানের পরিবেশনা ছিল। তিনি গাইতে শুরু করলেন, এক সেকেন্ডের নাই ভরসা বন্ধ হইবে রঙ তামাশা চক্ষু মুদিলে; হায়রে দম ফুরাইলে..

গাইতে গাইতে হাজার হাজার দর্শকের সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন লোকসঙ্গীত শিল্পী ফিরোজ সাঁই! সত্যি এক সেকেন্ডেরও ভরসা নেই এই মানবজনমের। রঙ তামাশা কি অবলীলায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে, অকল্পনীয়ভাবে! ইয়ান কগনিটোও জানতেন না হয়ত, এমন স্টেজ তৈরি হবে তার মৃত্যুর জন্য, সেখানে তিনি মৃত্যুকে ব্যঙ্গ করবেন আর মৃত্যু করবে তাকে আলিঙ্গন!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.