নবাব বাড়ির বকরি ঈদ, দিনটির অপেক্ষায় থাকতো পুরো ঢাকা

ODD বাংলা ডেস্ক: আমোদ-প্রমোদ, আধিপত্য আর শক্তি প্রদর্শনে নবাবদের জুড়ি মেলা কঠিন। একবার ঢাকায় পরপর দুদিন কুরবানির ঈদ উদযাপন করা হয়েছিলো। 

১৯২০ সালের ২৫ আগস্ট খাজা শামসুল হকের ডায়েরিতে লেখা হয়েছে: ‘বকরি ঈদ নিয়ে নবাববাড়ির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ হয়। এক পক্ষে খাজা মো. আজম ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করেন যে আজ বকরি ঈদ হবে। অপর পক্ষে নওয়াব হাবীবুল্লাহ ঢোল পিটিয়ে দেন যে আগামীকাল ঈদ হবে। শেষ পর্যন্ত ওই বছর ঢাকায় দুদিন বকরি ঈদ হয়। ১৯২২ সালের ঈদুল আজহার ব্যাপারেও একই ঘটনা ঘটে।’

কলকাতার ক্ল্যাসিক থিয়েটারের নাটক ঢাকার নবাববাড়িতে প্রদর্শন, জাদু ও সার্কাস দেখানো, বায়োস্কোপের আয়োজন হতো ঢাকার নবাব বাড়িতে। বিনা খরচে সাধারণ মানুষ ঈদের দিন নাটক দেখতে পারত। তাছাড়া ঢাকায় ছিল ক্রাউন থিয়েটার ও ডায়মন্ড জুবিলি থিয়েটার। তাদের দিয়েও শহরের বিভিন্ন এলাকায় নাটক প্রদর্শন করাতেন সলিমুল্লাহ।

কলকাতা থেকে বায়োস্কোপ ভাড়া করে এনে মানুষকে ছায়াছবি দেখাতেন। নিজে গান-বাজনা-নৃত্য দেখতেন না। কিন্তু সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী ও বাইজিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন। ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি করার রেওয়াজও ছিলো।

উল্লেখযোগ্য আরেকটি দিক হলো ঈদসহ নবাব পরিবারের নানা পার্বণে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হতো। ঈদসহ নানা পালা-পার্বণে ঢাকার নবাবদের মহল ও পরিবার ঘিরে সৃষ্টি হওয়া সাংস্কৃতিক চাঞ্চল্য শেষ পর্যন্ত নবাবী সীমানা ছাড়িয়ে সাধারণ ঢাকাবাসীর মাঝেও বইয়ে দিয়ে যেত আনন্দের হল্লা। সব মানুষের মিলিত অংশগ্রহণে ঢাকা পরিণত হতো সর্বজনীন উত্সবের নগরে।

আহসান মঞ্জিল ও দিলকুশা বাগানবাড়িতে পদস্থ ব্রিটিশ কর্মকর্তা, গণ্যমান্য হিন্দু ও আর্মেনীয় খ্রিষ্টানদের জন্য নবাব রাজকীয় পার্টির ব্যবস্থা করতেন।  নবাবদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিলো কংগ্রেসের হিন্দু নেতারা। কিন্তু ঈদের দিন নবাববাড়িতে সব এক।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.