অন্ধরাও কি স্বপ্ন দেখে?

ODD বাংলা ডেস্ক: দৈনন্দিন চিন্তা-ভাবনা ও চেতনার মধ্যে একটি বড় জায়গা দখল করে থাকে স্বপ্ন। মানুষ সাধারণত ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। আবার স্বপ্নবাজ মানুষেরা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখাকেই গুরুত্ব দেন। কিংবদন্তি পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালাম বলেছেন, স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো; বরং স্বপ্ন সেটা যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না! 
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের মতে, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তবে সাধারণত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বপ্ন বলতে আমরা আমাদের ঘুমের মধ্যে ঘটে যাওয়া কিছু অবাস্তব কিন্তু গভীর অনুভূতিমূলক কর্মকাণ্ডকে বুঝে থাকি।  

স্বপ্নে সাধারণত আমরা চারপাশের চরিত্র এবং পরিবেশকেই দেখে থাকি। টেলিভিশন, সিনেমা কিংবা ভিডিও গেমের কোনো চরিত্রও আমাদের স্বপ্নে দেখা দিতে পারে। একটা কথা অনস্বীকার্য, আমরা স্বপ্নে যাকি দেখি না কেন, সেই চরিত্র কিংবা পরিবেশ আমরা এর আগে বাস্তবেও দেখেছি। বাস্তবের চরিত্র ও পরিবেশ গল্প পাল্টে আমাদের স্বপ্নে এসে ধরা দেয়। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি, অন্ধ লোকেরা কীভাবে স্বপ্ন দেখে? 

আগেই বলে রাখা ভালো, এই মুহূর্তে কারো চোখে জ্যোতি আছে কিনা, তার ওপর স্বপ্ন দেখা নির্ভর করে না। ধরুন, কোনো ব্যক্তি যদি জন্মান্ধ না হন, ২০ বছর বয়সে গিয়ে অন্ধ হয়ে যান, এরপরের জীবনেও তিনি স্বপ্নে ছবি দেখতে পারবেন। যদিও তার চোখে কোনো জ্যোতি নেই! কারণ স্বপ্নের পুরো ব্যাপারটিই ঘটে ব্রেইনে। এর ওপর চোখের প্রভাব নেই। 

২০১৪ সালে প্রকাশিত ডেনমার্কের এক দল গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসব অন্ধ মানুষ চোখের জ্যোতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন তারাও স্বপ্নে ছবি দেখতে পান। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর যতই দিন গড়াতে থাকে, ততই তাদের স্বপ্নে সত্যিকারের ছবি আসা কমে যেতে থাকে। যেমন আমাদের কোনো বন্ধু বা আত্মীয় মারা গেলে তার কোনো ছবি না থাকলে বহু বছর পর সেই চেহারা মনে করতে কষ্ট হয়। তেমনি হঠাৎ চোখের জ্যোতি হারানো কোনো ব্যক্তিও তো বহুদিন দেখতে না পেরে আস্তে আস্তে চেনা মুখগুলোর অবয়ব স্মৃতি থেকে হারিয়ে ফেলেন। সময় ও স্মৃতি প্রতিনিয়ত ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে আমাদের। ক্রমাগত নতুন নতুন স্মৃতি এসে পুরাতন স্মৃতিগুলো আমাদের ভুলিয়ে দেয়। 

তবে যারা জন্মান্ধ, তারা স্বপ্নে কোনো ছবিই দেখতে পায়না। কারণ তাদের স্মৃতিতে যে আদৌ কোনো ছবি জমেনি! কোনো কিছু দেখতে কেমন লাগে, এই অনুভূতি তারা একটি মুহূর্তের জন্যও জীবনে অনুভব করতে পারেনি। যে ব্যক্তি কোনোদিন মিষ্টি খায়নি, তাকে যেমন কোনোভাবেই বোঝানো যাবে না এর স্বাদ কেমন, এ ব্যাপারটিও ঠিক তেমন। তবে তাই বলে জন্মান্ধরা যে স্বপ্ন দেখে না তা নয়। তারা তাদের স্বপ্নে বিভিন্ন শব্দ শুনতে পায়, দৃষ্টি ছাড়া অন্যান্য ইন্দ্রিয়ানুভূতি লাভ করে। 

জন্মান্ধরা দুঃস্বপ্ন দেখে বেশি 

ড্যানিশ ওই গবেষণাতেই দেখা যায়, জন্মান্ধরা সাধারণ মানুষের তুলনায় চার গুন বেশি স্বপ্ন দেখে থাকে! সাধারণভাবে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, সামনে ঘটিতব্য ভয়ানক ঘটনাগুলোর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয়ার জন্যেই দুঃস্বপ্নগুলো মস্তিষ্কের এক ধরণের মানসিক প্রশিক্ষণ হিসেবে কাজ করে। এর ফলে বাস্তবে যখন সেই ভয়াবহ ঘটনাগুলো ঘটে, আমরা একটু কম বিচলিত হই। 

অধিকাংশ অন্ধ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেই সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। যেমন তারা খুব সহজেই দলছুট হয়ে যেতে পারেন, ভীড়ের মাঝে পথ ভুলে হারিয়ে যেতে পারেন বা ছিনতাইয়েরও শিকার হতে পারেন। এসব দুর্ঘটনায় খুব বেশি বিচলিত না হতেই হয়তো তাদের মস্তিষ্ক দুঃস্বপ্নের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেয়!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.