খাস কলকাতার বুকে রয়েছে একফালি শ্রীক্ষেত্র! কেবল সমুদ্রটাই নেই


ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, ODD বাংলা:
জগন্নাথ মন্দিরের কথা বললেই প্রথমে মনে আসে পুরীর শ্রীক্ষেত্রর নাম। কিন্তু ওই যে কথায় বলে না, চাইলে বাড়ি বসেও ঈশ্বরের দর্শন পেতে পারেন। এই হল অনেকটা সেইরকমই। তবে বাড়ি বসে না হলেও খাস কলকাতার বুকেই পেয়ে যা একটুকরো শ্রীক্ষেত্র। 

খাস কলকাতার খিদিরপুর এলাকার ইস্ট ইয়ার্ড কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের কমপাউন্ডে রয়েছে পুরীর আদলে তৈরি একটি জগন্নাথ দেবের মন্দির। একেবারে শ্রীক্ষেত্রের আদলে নির্মিত এই মন্দিরটি বহু মানুষের বহু বছরের কঠোর পরিশ্রম এবং আর্থিক সাহায্যের ফসল। মহাপ্রভু শ্রী জগন্নাথ, শ্রী বলভদ্র এবং দেবী শুভদ্রা এবং সুদর্শন চক্র এই মন্দিরে একেবারে ঐতিহ্য মেনেই পূজিত হয়ে আসছেন। 

নিত্য পুজো ছাড়াও সারা বছর ধরে বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পূজার্চনার রেওয়াজ রয়েছে। বিশেষত রথযাত্রা উপলক্ষে বিশেষ পূজার্চনা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই মন্দিরে। মন্দিরে আগত সকলেই জগন্নাথ দেবের মহাপ্রসাদ পেয়ে থাকেন এমনকী পরিবার পরিজনের জন্য সেই ভোগ বাড়িতেও নিয়ে যেতে পারেন। শহর কলকাতা তো বটেই সঙ্গে শহরতলি থেকেও অসংখ্য ভক্ত এই বিশেষ তিথিতে এই মন্দির প্রাঙ্গনে এসে সমবেত হন। ধীরে ধীরে লোকমুখে প্রচারিত হয়ে কলকাতার এই জগন্নাথ ধাম আজ যেন একটি ছোটখাটো শ্রীক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। 

মন্দিরের নির্মাণ কাজ- অসংখ্য ভক্তকূলের আর্থিক সহযোগীতায় ১৯৬৯ সালের ২৩ জানুয়ারি নির্মিত হয়েছিল এই মন্দির। এরপর থেকেই মন্দির প্রাঙ্গনে জগন্নাথ দেব-সম্পর্কিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সেমিনার এবং ওয়ার্কশপেরও আয়োজন করা হত। কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় মন্দির নির্মাণের পর ২০০৩ সালে নতুন করে জগন্নাথ দেবের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেবার পুরী থেকে বিশেষ পুরোহিতরা এসে বেদ পাঠ করে যজ্ঞ করে নতুন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 
মন্দির বৈচিত্র- পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতোই এই মন্দিরেরও সিংহ দরজায় রয়েছে অরুণাস্তম্ভ। অরুণা স্তম্ভ থেকে ১৮টি সিঁড়ি উপরে ওঠার পর আপনি এসে পৌঁছবেন গেরুদা স্তম্ভে। গেরুদা স্তম্ভ পেরোলে মূল মন্দিরের দরজা। সেখান থেকে আরও চারটি ধাপ উপরে উঠলেই আপনি এসে পড়বেন রত্নবেদীর সামনে, যার ওপর বিরাজ করছেন শ্রী জগন্নাথ, শ্রী বলভদ্র এবং দেবী সুভদ্রা। মূল মন্দিরের চারিপাশে ঘুরলে আপনি দেখতে পাবেন শ্রী গণেশ, দেবী সরস্বতী, মহাবীর হনুমান, সূর্য নারায়ণ, মা বিমলা, মা লক্ষ্মী এবং ভগবান শিবের খোদাই করা মূর্তি। পাশাপাশি মন্দিরের মধ্যে রয়েছে যজ্ঞ মণ্ডপ, স্নান বেদী, কইলি বৈকুণ্ঠ এবং বাটামঙ্গল মন্দির। পাশাপাশি রয়েছে মহাভোগ তৈরির জন্য রান্নাঘর, রয়েছে আনন্দবাজার, যেখানে মহাভোগ পরিবেশন করা হয়। রয়েছে পুজো দেওয়ার জন্য সামগ্রী বিক্রির দোকানও।  

যেসব গুরুত্বপূর্ণ পুজো মন্দিরে করা হয়- স্নান পূর্ণিমা, রথযাত্রা, ঝুলন যাত্রা, বলভদ্র জয়ন্তী (রাখি পূর্ণিমা), শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, গণেশ পুজো, ভাদ্র মাসে শ্রীমদ্ভাগবত জয়ন্তী, আশ্বিনে দুর্গা পুজো এবং লক্ষ্মী পুজো,  ভাগবত সপ্তাহ এবং কার্তিকে রাস পূর্ণিমা, মাঘ মাসে সরস্বতী পুজো এবং শিবরাত্রি, ফাল্গুন মাসে দোল পূর্ণিমা, চৈত্র মাসে রাম নবমী সাড়ম্বরে পালিত হয়।

এছাড়াও বহু ভক্তের অনুরোধে এখন সত্যনারায়ণ পুজা, রুদ্রাভিষেক, নামকরণ অনুষ্ঠান, পৈতা এবং বিবাহের মতো অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।

মন্দিরের সময়- 
সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা,
বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা 

সন্ধ্যা আরতি-প্রতিদিন সূর্যাস্তের সময় সন্ধারতি করা হয়। ভোগ প্রতিদিন দুবার নিবেদন করা হয়। বেলা সাড়ে বারোটায় একবার এবং রাত সাড়ে আটটায় একবার।

সদস্যপদ- যেকোনও ব্যক্তি ফর্ম ভরে এই মন্দিরের সারা জীবনের সদস্য হতে পারেন। এর জন্য মন্দিরের কার্যালয়ে অর্থ প্রদান করতে হয়। প্রতিটি সদস্যের জন্য বিশেষ পুজো এবং হোম অনুষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচিত দিনে এবং দুটি মহাপ্রসাদ বিনামূল্যে পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানতে মন্দিরের অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.