অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় এই জঙ্গলে! যেতে গেলেই...

ODD বাংলা ডেস্ক: রহস্য ঘেরা ভৌতিক স্থান ‘চিকন কালা’ জঙ্গল। আজ আমরা আপনাদেরকে এই বিশেষ জঙ্গলটি সম্পর্কে জানাব।
 
চিকন কালার অবস্থান

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের মধ্যবর্তী এক দুর্গম স্থানে একটি গ্রামের পাশে এই জঙ্গলটি অবস্থিত। তল্যাংময় (সাকা হাফং) চূড়ার গাঁ ঘেষা এই জঙ্গলটি বান্দরবান জেলা ও মিয়ানমারের চিন রাজ্য জুড়ে বিস্তৃত। 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৭০০ ফুট ওপরে এর অবস্থান। সম্পূর্ণ স্থানটিই ঘন ঝোপঝাড়ে ঘেরা। জায়গাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য সত্যিই আশ্চর্যজনক সঙ্গে কিছুটা ভয়ঙ্ককরও। এ জঙ্গলের উল্লেখ্যযোগ্য প্রাণীরা হচ্ছে - ভাল্লুক, হরিণ, চিতাবাঘ, বন বিড়াল, বন্য শূকর, ময়ূর, বন্য হাতি, সাপ ইত্যাদি। 

যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ থাকার কারণে সেখানে পৌঁছানো অনেকটাই কষ্টকর। কিন্তু কিছু অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে সেখানে গিয়ে থাকেন। তবে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করার সাহস কেউ দেখান না। 

জঙ্গলটিকে সবাই ভুতুড়ে জায়গা হিসেবে বিবেচনা করেন বলে সেই অঞ্চলের স্থানীয়রা ভ্রমণকারীদের সেখানে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন।

কারা চিকন কালা গ্রামের বাসিন্দা?

কি ভাবছেন? জঙ্গলে আবার কেউ বাস করে নাকি! জেনে অবাক হবেন যে, আদিবাসী মুরংরা চিকন কালা গ্রামের বাসিন্দা।

তারাও বিশ্বাস করে যে জঙ্গলে কিছু অশুভ শক্তি রয়েছে। প্রায়ই শোনা যায় জঙ্গল থেকে ভেসে আসা অদ্ভুদ ও রহস্যজনক কিছু শব্দ। তারা ধারনা করেন যে, সেখানে অতৃপ্ত আত্মা রয়েছে। তাদের বিশ্বাস, এ জঙ্গলে সন্ধ্যার পর কেউ প্রবেশ করলে সে কখনো ফিরে আসতে পারে না।

সাধারণত বছরে একবার হলেও সন্ধ্যায় জঙ্গলে এ অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী সেদিন ভুতেরা ঘুম থেকে জেগে উঠে। শব্দ শুনে আতঙ্কে জঙ্গলে থাকা কাঠুরে ও শিকারির দল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লোকালয়ে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে দলের দুই একজন জঙ্গল থেকে বের হতে ব্যর্থ হলে কিছু দিন পর তাদের মরদেহ বনের ভেতরে পাওয়া যায়। 

এখানে অবাক করা একটি বিষয় হলো, মৃত্যু ব্যক্তিদের শরীরে কোথাও কোনো দাগের চিহ্ন পাওয়া যায় না। তাই তাদের মৃত্যু সম্পূর্ণ রহস্যের মধ্যেই রয়ে যায়। এভাবে প্রতি বছরই গড়ে এক থেকে চার জন এ জঙ্গলে রহস্যজনক মৃত্যুর শিকার হয়। এ কারণে স্থানীয়রা সন্ধ্যার পরে জায়গাটিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।

চিকন কালার একটি সত্য ঘটনা

১৯৭৯ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে অনেক মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার করে। এ কারণে অনেক মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। সেসময় বাংলাদেশ সরকার তাদের কক্সবাজারে আশ্রয় দিয়েছিল। রোহিঙ্গাদের সমস্যা ও আসল পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে আমেরিকার একটি গবেষণা দল বাংলাদেশে আসে। 

রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান উদঘাটনের জন্য তারা দেশে কয়েক মাস অবস্থান করেন। সেই সময় প্রথম চিকন কালা সম্পর্কে আমেরিকার এই গবেষক দলটি জানতে পারে। তারপরেই তারা জায়গাটির রহস্যটি অন্বেষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এই রহস্য উদঘাটনের জন্য তারা একদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। কিন্তু তারা সেখানে বিশেষ কিছু পায়নি। এরপর তারা সেখানে আরো পাঁচ দিন অতিবাহিত করে, কিন্তু কোনো অলৌকিক ক্রিয়াকলাপের একটি চিহ্নও পায়নি।

কিন্তু একদিন হঠাৎ দলের এক সদস্য অন্য সদস্যের সঙ্গে জঙ্গলে যাওয়া নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে আবারো একদিন সেখানে যেতে বলেন। পরের দিন তারা সেখানে আবারো পৌঁছান। সকাল, দুপুর ও বিকেল পেরিয়ে গেলেও অস্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের চিহ্ন খুঁজে না পাওয়ায় সন্ধ্যায় তারা জঙ্গল ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে হঠাৎ তাদের মধ্যে পাঁচজন অদ্ভুত কিছু শুনতে পায়।

দলের সদস্যদের মতে, প্রায় প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধরণের শব্দ শুনতে পান। তাদের মধ্যে একজন ভেবেছিলেন যে এটি ভূমিকম্প, কেউ মনে করেন যে কিছু সৈন্য ঘোড়ায় চড়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।

অন্য সদস্যের কাছে শব্দটি ঝড়ের মতো মনে হয়েছিল। তিনি অনুভব করেছিলেন যে তাদের চারপাশে একটি প্রবল বাতাস বইছে।

এভাবে, পাঁচজন সদস্যের মধ্যে চারজনই একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ শোনেন। এ ঘটনার পর তারা অবিলম্বে বন ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু বাকি সদস্যদের মধ্যে একজন কোনো কিছু অনুভব না করায় তিনি সেখানেই থেকে যায়। পরবর্তীতে তিনি যখন জঙ্গলে সম্পূর্ণ একা হয়ে যান, তখন সেখানে অস্পষ্ট ফিসফিসের আওয়াজ ও প্রাণী দেখতে পান। 

তার দেখে মনে হয়েছিল কিছু অদ্ভুত প্রাণী যারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে। যদিও তিনি আরো স্পষ্ট করে শোনার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কিছুই বুঝতে পারেননি। এই অদ্ভুত ও অতিপ্রাকৃত বিষয়গুলোর কারণে ভয় পেয়ে তিনিও দ্রুত জঙ্গল ত্যাগ করেছিলেন। 

যাইহোক, এই গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু তা হয়নি। জঙ্গলে যে ব্যক্তি ভুতুড়ে চিকন কালা ছেড়ে চলে গিয়েছিল, ওই ঘটনার পর তাকে তার জীবনের অনেকগুলো অলৌকিক ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। প্রায় প্রতি রাতে তিনি ওই ফিসফিস শুনতে পেতেন। তিনি সেই শব্দগুলোর অর্থ বুঝারও চেষ্টা করতেন।

অবশেষে তিনি বুঝতে পারলেন, এটি মিশরীয় ভাষা ছিল। পরে তিনি কথাগুলোর অনুবাদ করেন। কথাগুলোর অর্থ ছিল "আপনি মারা যাবেন, আপনি মারা যাবেন ..."।

যদিও তিনি একজন মিশরীয় ছিলেন কিন্তু তিনি সপরিবারে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলাইনাতে বাস করতেন। 

জেনে অবাক হবেন যে, ওই ঘটনার পর তিনি ছাড়াও তার পরিবারের বাকি সদস্যরাও প্রতি রাতে ফিসফিসের শব্দ শুনতে পেতেন। এই ঘটনার পাঁচ বছর পরে তিনি মারা যান। কিন্তু তার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। লোকেরা যখন তার দেহের দিকে তাকাতো, তখন মনে হতো ভয়ঙ্কর কিছু ভাসছে। যা দেখে সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তবে তিনি মারা গেলেন নাকি কেউ মেরে ফেলেন তা এখনো রহস্যই রয়ে গেলে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.