সাবধান! পাঁচ প্রজাতির কুকুর পুষলেই বিপদ!!

ODD বাংলা ডেস্ক: পশুপ্রেমীদের অনেকেই বাড়িতে কুকুর পোষেন। এরমধ্যে দেশি কুকুরের পাশাপাশি থাকে বিদেশি অনেক কুকুরও। জাত বিদেশি হলেও মনিবের পরম আদর আর যত্নে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয় ভিন্ন পরিবেশে। আর পোষ্য হিসেবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত প্রাণী হল কুকুর। অসাধারণ স্বভাবগুণ আর প্রভু ভক্তির জন্যে কুকুরের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজোড়া। অনেকেই শখে কুকুর পোষেন, কেউ বা নিরাপত্তার কারণে। 

তবে জানেন কি? পৃথিবীতে এমন কিছু প্রজাতির কুকুর আছে, যাদের বাড়িতে রাখা অত্যন্ত ঝুঁকির হয়ে উঠতে পারে। ঘটতে পারে মারাত্মক বিপদ। কুকুরদের যেমন শান্ত স্বভাবের জন্যে নাম রয়েছে, তেমনি বহু প্রজাতির কুকুর তাদের ভয়ঙ্কর অ্যাটিটিউডের জন্যেও বিখ্যাত।   
 
বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা অনেক প্রজাতির কুকুরের বিষয়ে বলে থাকেন, যাদের বাড়িতে রাখা অত্যন্ত ঝুঁকিবহুল। অনেকেই হয়ত এদের পোষেন, কিন্তু তা করতে গিয়ে প্রাণহানীর আশঙ্কাও তৈরি হয়। এমনই পাঁচ প্রজাতির কুকুরের ব্যাপারেই জানাবো আজ। আগে থেকেই জেনে রাখুন এই প্রজাতিগুলোর সম্পর্কে।

পিট বুল

এরইমধ্যে প্রাণহানির ঝুঁকি থাকায় বেশ কিছু দেশে নিষিদ্ধ পিট বুল পোষা। সবচেয়ে ভয়ংকর প্রজাতির কুকুরের কথা বললে প্রথমেই চলে আসে পিট বুলের নাম। আসলে এদের আক্রমণাত্মক স্বভাব প্রতিরোধ করা খুব মুশকিল। খুব ভালোভাবে এদেরকে প্রশিক্ষন না দিলে ফল হতে পারে মারাত্মক। ১৯৯১ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, শিশুদের উপর করা পিট বুলের আক্রমণগুলোর ৯৪% আক্রমণ ছিল অনর্থক। এমনকি মানুষকে কামড়ে মেরে ফেলার ভয়ঙ্কর ইতিহাসও রয়েছে এদের। ২০১৩ সালে ব্রিটেনে পিট বুল পোষা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ষাঁড় ও ভাল্লুককের হাত থেকে বাঁচার জন্য এই শংকর প্রজাতির কুকুর তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এরা মানুষের উপরও ক্রমেই আক্রমণ করতে শুরু করে। ব্রিটেনের পাশাপাশি আমেরিকাতেও পিট বুলকে সবচেয়ে বিপজ্জনক কুকুর হিসেবে মনে করা হয়। তাই এই প্রজাতির কুকুর বাড়িতে পোষার আগে আপনার অবশ্যই ভেবে দেখা প্রয়োজন।

 রটওয়েলার

রটওয়েলার একটি জার্মান বংশোদ্ভূত কুকুর। তবে, রোমান সাম্রাজ্যের যুগেও রটওয়েলারের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রচণ্ড শক্তিশালী হয় এই প্রজাতির কুকুর। যেকোনো সময় কারণ ছাড়াই মারাত্মক বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এরা। তবে খারাপ গুণের মধ্যে এদের ভালো দিক হলো এরা খুব ভালো পাহারাদার এবং প্রভুভক্ত হয়ে থাকে। তবে খুব ভালোভাবে প্রশিক্ষিত করতে না পারলে এরা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র ‘সিডিসি’র তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্টে কুকুরের কামড়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার অর্ধেক মৃত্যুর কারণই ছিল রটওয়েলার প্রজাতির কুকুর। এই তথ্যই বলে দেয় এই প্রজাতির কুকুর কতটা আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয়ে থাকে।  পোল্যান্ড, রোমানিয়া, পর্তুগাল এবং আয়্যারল্যান্ডে রটওয়েলার প্রজাতির কুকুর পোষা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 চাউ চাউ

নামের মতোই দেখতেও বেশ মিষ্টি হয়ে থাকে এই প্রজাতির কুকুরগুলো। সারা শরীর লোমে ঠাসা। চাউ চাউয়ের স্বভাব বেশ বিচিত্র। অপরিচিত লোকেদের একেবারেই সহ্য করতে পারে না এরা।  প্রভুকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে এরা ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করে আক্রমণ করে অন্যদের উপর। এদের আলাদা ঘরে রাখতে হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন এদের শারীরিক কসরত করাতে হয়। এদের পোষা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই পোষ্যের তালিকায় এরা খুব কমই থাকে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পোষার আগে এদের জন্যে বীমা করিয়ে নিতে হয়। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ২৩৮ জন মানুষ মারা যান এই কুকুরের কামড়ে। অন্য পোষ্যদেরও এরা একদম সহ্য করতে পারে না। তবে ভালো ব্যবহার করলে এদের থেকে তেমন ভয়ের কারণ নেই। তবে আক্রমণ প্রবণতার জন্য এদের না পোষাই ভালো।

 টিবেটান ম্যাস্টিফ

দেখতে ভয়ঙ্কর টিবেটান ম্যাস্টিফ পাহাড়ি অঞ্চলের কুকুর। মূলত তিব্বতের পাহাড়ি অঞ্চলে বাস এদের। অত্যন্ত শক্তিশালী, স্বাধীনচেতা ও প্রভাবশালী কুকুর এরা। নেকড়ে, ভাল্লুক ও বাঘের হাত থেকে প্রভুর পোষা ভেড়া বা অন্য পোষ্যদের রক্ষা করতে ওস্তাদ এরা। তবে অচেনা লোকেদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে যেকোনো সময়। শুধু তাই নয়, এলাকা দখলের প্রশ্নে এদের দক্ষতা অসাধারণ। বিশাল আকৃতির এই প্রজাতির কুকুরের ওজন প্রায় ৫০-৯০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর উচ্চতা ২৩-২৯ ইঞ্চি পর্যন্তও হয়। এই প্রজাতির কুকুর পোষার ক্ষেত্রেও বিশ্বের বহু দেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

হাস্কি

পৃথিবীর উত্তর ভাগের আলাস্কা, সাইবেরিয়ার তুষারাবৃত অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গী হয়ে থাকে এই প্রজাতির কুকুর। সাধারনত স্লেজ কুকুর হিসেবে পরিচিত হাস্কি প্রভুর ভারী জিনিসপত্র বয়ে থাকে। প্রচন্ড শক্তিশালী এই কুকুর সারাদিন একনাগাড়ে খেটে যেতে পারে। অসম্ভব প্রভুভক্ত হয়ে থাকে এরা। আর প্রভুকে বাঁচাতে মুহূর্তের মধ্যে ছিড়ে ফেলতে পারে শত্রুপক্ষকে। এরা এতটাই পরিশ্রমী হয় যে এদের থেকেই  ওয়াক লাইক আ ডগ উক্তিটি লোকমুখে প্রচারিত হয়েছে। তবে এদের মুড হঠাৎই বিগড়ে যায়। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই প্রজাতির কুকুর আমেরিকায় ১৫ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। প্রচণ্ড পরিশ্রমী এই কুকুর উন্মত্ত গতিতে স্লেজও টানে। আর পোষ মানা বলগা হরিণের পাল পাহারা দেয়। শিকার, অ্যাডভেঞ্চার ও ট্রেকিং-এ ও এরা দারুণ সঙ্গী। তারপরও বিপজ্জনক হওয়ায় না পোষাই আপনার জন্য নিরাপদ।   

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.