এই ১০ কারণেই জাপানিরা বেশি দিন বাঁচেন, গড় আয়ু ৮৪ বছর

ODD বাংলা ডেস্ক: জাপানিদের খাবারের তালিকাতেও তো ভাত রয়েছে। তবুও তারা মোটা হয় না আবার বেশি দীর্ঘায়ুও পান, কিন্তু কীভাবে? তারাও বাঙালির মতোই ভাতপ্রেমী বটে তবে নিয়ম করে অল্প পরিমাণে তা গ্রহণ করেন। 

সব খাবারই তারা প্রচুর পরিমাণে খায়। তবুও তারা নিরোগ ও দীর্ঘায়ুর অধিকারী হন। বিশ্ববাসীর মনে তাই জাপানিদেরকে নিয়ে রয়েছে কৌতূহলতা। তাদের জীবন ধারণ পদ্ধতি ও খাদ্যাভাস সম্পর্কে বছরের পর বছর ধরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে। তারই আলোকে জেনে নিন কেন তারা বেশি দিন বাঁচেন?

১. প্রচুর শাকসবজি খায়

ঐতিহ্যগতভাবেই জাপানিরা প্রচুর সবজি খায়। তাদের প্রতিদিনের মেন্যুতে ভাত, সবজি এবং মাছ থাকবেই। আর শাক সবজিতে থাকা পুষ্টিগুণের কারণেই তারা নিরোগ থাকেন। এ কারণেই দীর্ঘদিন বাঁচেন তারা।

২. রান্নার পদ্ধতি ভিন্ন

জাপানিরা তাদের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করে। এক্ষেত্রে ভাঁপে, প্যানে গ্রিল করে, সিদ্ধ করে, স্ট্রে ফ্রাইং, কম তাপে রান্নাসহ বিভিন্ন আঙ্গিকে রান্না করে থাকে। এতে খাবারের পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। দিনের বিভিন্ন সময় তারা ছোট ছোট অংশে খাবার খায়। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কম করে অন্তত এক বাটি স্যুপ রাখে তারা। এছাড়াও খাবারে বেশিরভাগ সময়ই মটরশুটি ব্যবহার করতে তারা কিন্তু ভুলে না। কারণ এতে রয়েছে ফাইবার, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে।

৩. প্রচুর চা পান করে জাপানিরা

কফি পানেও জাপানিরা আকৃষ্ট তবে বোধ হয় চায়ের থেকে বেশি নয়। তারা প্রতিদিন চা পান করে। তাই বলে ভাববেন না দুধ চা। জাপানিজরা চা হিসেবে- মাচা ও গ্রিন টিকে বেশি প্রাধান্য দেয়। এসব চায়ে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রয়েছে। এ কারণেই তাদের বয়স টের পাওয়া যায় না। ৪০ বছরেও তারা ২০ বছরের ন্যায় যৌবনদীপ্ত ত্বকের অধিকারী হয়। 

৪. টাটকা খাবারেই ভরসা

জাপানিরা নিজ জমিতে চাষ করতে পছন্দ করেন। এতে করে টাটকা শাক সবজি পাওয়া যায়। তারা মাছও চাষাবাদ করেন। জাপানিরা খাদ্যশষ্য, শাকসবজি ও মাছ প্রচুর পরিমাণ খায়। এজন্য নিজ উদ্যোগেই তারা ছোট আকারে হলেও এসব জিনিসের আবাদ করেন। আর টাটকা খাবার খেলে সবার শরীরই সুস্থ থাকে।

৫. ছোট প্লেটে খাবার খাওয়া

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, বাচ্চাদের যেসব প্লেটে খাবার দেয়া হয় ঠিক তেমন ছোট প্লেটেই জাপানিরা খাবার খায়। জাপানিদের ঐতিহ্যগত এক রীতি এটি। এর ফলে খাবার কম খাওয়া হয়। এ কারণে কেউই অতিরিক্ত খাওয়ার কথা কল্পনাও করে না। এছাড়াও তারা দুইটি কাঠির সাহায্যে খাবার গ্রহণ করে থাকে। 

যা অন্যদের পক্ষে করা কঠিন হলেও অভ্যাসগত কারণে তাদের কাছে সহজ। জাপানিরা কখনোই ভরপেট খাবার খায় না। তাদের কথা হলো, পেট ৮০ শতাংশ না ভরতেই খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। অর্থাৎ তারা ২০ শতাংশ খাবারের সমপরিমাণ জায়গা পেটের মধ্যে খালি রাখে। এই অভ্যাসটিও তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।

৬. হাঁটা ও দাঁড়ানোতেও দিন পার

জাপানিরা প্রতিদিন প্রচুর হাঁটে। স্টেশনে যাওয়া, ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা, ট্রেনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা, পরের স্টেশন থেকে কর্মস্থলের পথে হাঁটা ইত্যাদি কারণে গড়ে তারা প্রচুর হাঁটেন। জাপানিজরা গণপরিবহন ব্যবহার করে। অনেকেই একটি গাড়িকে বিলাসিতা হিসাবে বিবেচনা করলে জাপানিজরা করেননা। 

তারা কখনো বিলাসিতাকে প্রশ্রয় দেয় না। জাপানের বিভিন্ন গণশৌচাগার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ এমনকি সরকারি অফিসের শৌচাগারেও হাই কমোড নেই। লো কমডেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা। কারণ এতে শরীরের বিপাকক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে। 

৭. সকালে নিয়মিত ব্যায়াম

তারা প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে হাঁটেন। পাশাপাশি ব্যায়ামও করেন। ছোট বড় সবার জন্যই এই নিয়ম। এমনকি অফিসেও কর্মজীবীরা ব্যায়াম করার জন্য আলাদা সময়সূচি মেনে চলেন। তাদের সবচেয়ে ভালো দিক হলো কোনো অবস্থাতেই তারা অলসতা বোধ করেন না। কারণ তারা কাজে মগ্ন থাকেন সবসময়। এতে করে সময়ও কাটে আর দুশ্চিন্তাও হয় না। এ কারণেই তারা নিরোগ থাকেন ও দীর্ঘায়ু পান।

৮. সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা পায়

১৯৬০ এর দশক থেকে জাপানিজিদের জন্য প্রতি বছর মেডিকেল চেকআপ বাধ্যতামূলত করা হয়েছে। এই চিকিৎসা ব্যবস্থা অবশ্য তারা সরকারিভাবে পেয়ে থাকে। গড়ে প্রতিবছর তারা ১২ বারেরও বেশি সময়ের জন্য ফ্রি চেকআপ ও ডাক্তার দেখাতে পারেন। যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও চারগুণ বেশি।

৯. বাইরে বেশি সময় কাটায়

প্রচুর হাঁটা চলার পাশাপাশি জাপানিরা বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানানো বা বিভিন্ন দাওয়াত কখনো বাদ দেয় না।  জাপানের রেস্তোঁরাগুলোতেও খাবারের দাম তুলনামূলক সস্তা। তাই তারা বাইরের বিভিন্ন ক্যাফে বা রেস্তোরাগুলোতে প্রিয়জনদের সঙ্গে অনেক সময় ধরে আড্ডা দেন। আবার বিভিন্ন স্থানে ঘুরতেও যান। এতে করে তারা মানসিকভাবে ফুরফুরে থাকেন। যা সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১০. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা

শুধু ঘরবাড়ি নয় রাস্তাঘাট পরিষ্কার করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। জাপানিরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় বদ্ধ পরিকর। স্কুলের সময় থেকেই তারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো শিখে থাকে। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে পরিষ্কার থাকতে তারা দিনে অন্তত দুইবার গোসল করতে ভুলে না। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.