ছিনতাইয়ের অভয়ারণ্য থেকে ‘পাপের’ হোটেল, গিটার ভবনে যা যা ঘটে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীর বিখ্যাত ভবনগুলোকে আইকনিক রূপ দিতে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের স্ট্রাকচার তৈরি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে এমন একটি আইকনিক বিল্ডিং। গিটার সদৃস্য এই ভবনটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গিটার বললেও ভুল হবে না। ৪৫০ ফুট উচু গিটার আকৃতির এই ভবনটি আসলে একটি পাঁচতারকা হোটেল। যার নাম দ্য গিটার হোটেল।


পাপের শহর খ্যাত লাস ভেগাসের অনেক ক্যাসিনোর বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ফ্লোরিডার গিটার আকৃতির এই স্থাপনা। প্রায় এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে নির্মাণ করা হয়েছে হোটেলটি। যা তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় ১০ বছর। স্থানীয় এয়ারপোর্টের পাশে অবস্থিত হওয়ায় একে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।


এক ফ্লোরের ডিজাইনের সঙ্গে অন্য ফ্লোরের ডিজাইনের কোনো মিল নেই। এতে রয়েছে আধুনিকতার ছড়াছড়ি, রংবেরঙের আলোকসজ্জা, রাজকীয় সুমিংপুল, কৃত্রিম হ্রদ, বাঁশের কুটির, রেস্টুরেন্ট আর বিলাসবহুল সিট। পর্যটকদের অতিথিতার কোনো কার্পণ্য করেনি কর্তৃপক্ষ। 



সূর্য ডুবে রাত নামলেই ভিন্ন আবহ তৈরি হয় আশেপাশের এলাকায়। অর্কেস্ট্রা গানের তালে তালে এলইডি লাইট শো চলে সারারাত। এলইডি লাইটগুলোকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যাতে সেগুলো গানের সঙ্গে মিলে রঙের পরিবর্তন করতে পারে। 


ভবনটির মাঝ বরাবর রয়েছে ছয়টি শক্তিশালী বীম। লাইটিংয়ের মাধ্যমে যেগুলো গিটারের স্ট্রিংয়ের মতো করে প্রদর্শন করা হয়। কৃত্রিম এই স্ট্রিংগুলো আকাশের ২০ হাজার ফিট উচ্চতা পর্যন্ত আলোর প্রতিফলন করতে সক্ষম। সবকিছুই মূলত পর্যটকদের হোটেলের ক্যাসিনোতে খেলার আকর্ষণ তৈরি করতে সক্ষম। 


হোটেলটিতে পর্যটকদের জন্য মোট ৬৩৮ টি বিলাসবহুল রুমে পাশাপাশি রয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার স্কয়ার ফিটের বিশাল গেমিং জোন। যেখানে একসঙ্গে সাত হাজার মানুষ বসে ক্যাসিনো খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে তিন হাজার স্লট মেশিন ও টেবিল। 


একসময় গাড়ির গ্যারেজ ও তামাক পণ্যের বিক্রয়কেন্দ্র হয় ফ্লোরিডার এই অংশ। ফ্লোরিডার এই অংশে মানুষজনের তেমন আনাগোনা ছিল না। অন্যদিকে এখানে বসবাসকারী সেমিনোলদের সংখ্যাও মাত্র চার হাজার ২০০ জন। যার কারণে অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে এখানকার আদিবাসী সেমিনোলরা।



ফলে জায়গাটি পরিণত হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য হিসেবে। যেখানে দিনে দুপুরে যেতেও ভয় পেতো মানুষ। ফলে নিজেদের অর্থনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে আর্থিক অবস্থান তৈরি করতে হোটেল এবং ক্যাসিনোর ব্যবসায় নাম লেখানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। 


হোটেল নির্মাণের পুরো অর্থই নিজেদের থেকে যোগান দেয় সেমিনোলরা। ঠিক করা হয় হোটেল থেকে যা লাভ হবে তা প্রতিটি সেমিনোলবাসীকে সমান ভাগে ভাগ করে দেয়া হবে। ফোর্বসের হিসেব অনুযায়ী, প্রতিবছর হোটেলের আয় থেকে সেমিনোলরা জনপ্রতি এক লাখ ২৮ হাজার ডলার করে পেয়ে থাকেন।


শিশু, বৃদ্ধ, নারী কিংবা পুরুষ সবাই জনপ্রতি এই টাকা পেয়ে থাকেন। সেমিনোলদের সন্তানরা যারা মাত্র ১৮ বছর পেরিয়েছে তারা সবাই এরই মধ্যে মাল্টিমিলিয়নিয়ার। সেই হিসেবে বলা যায়, হোটেল বানিয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ সেমিনোলবাসীরা।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.