পৃথিবীতে একমাত্র তিনিই দৈত্য এবং বামনের উপাধি পেয়েছিলেন

ODD বাংলা ডেস্ক: স্বাভাবিকের থেকে গড় উচ্চতা অনেক কম যাদেরকে অনেকেই বামন বলে চিনে থাকবেন। আবার যাদের অনেক বেশি তাদের দানব বা দৈত্য উপাধি দিতে পিছু পা হয় না সমাজ। তবে জানেন কি? পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত একজনই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লিখিয়েছেন দুটি পদবিতেই। তিনি অ্যাডাম রেইনার। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়? এটা কীভাবে সম্ভব!

অ্যাডাম রেইনার ১৮৯৯ সালে অস্ট্রিয়ার গ্রাজে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট থেকে আর দশটা শিশুর মতোই স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে উঠছিলেন অ্যাডাম। তবে তার সমবয়সীদের তুলনায় তার উচ্চতা ছিল অনেক কম। অ্যাডামের ছোট থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার ইচ্ছা। নিজেকে সেভাবেই মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছেন তিনি। তবে বাধ সাধে তার শারীরিক উচ্চতা। 

১৯১৪ সাল, অ্যাডাম সবে আঠারো পার করেছেন। সেসময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। অ্যাডাম সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে গেলে তাকে বাদ দেয়া হয়। এর কারণ ছিল বয়সের তুলনায় তার উচ্চতা ছিল অনেক কম। আর শারীরিক ভাবেও বেশ দুর্বল ছিলেন তিনি। তখন তার উচ্চতা ছিল মাত্র ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। এক বছর পরে তিনি আবার চেষ্টা করেছিলেন, তবে প্রত্যাখাত হন। তখন তিনি মাত্র ২ ইঞ্চি লম্বা হয়েছেন। উনিশ বছর বয়সে অ্যাডামের উচ্চতা দাঁড়িয়ে ছিলেন ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা। 

স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে ২ ইঞ্চি কম ছিলেন তিনি। সমাজ থেকে সহজেই বামন উপাধি পেয়ে যান অ্যাডাম। যদিও অ্যাডামের হাত পা তুলনামূলক দীর্ঘ ছিল। এরপর ২১ বছর বয়সে বলতে গেলে মিরাকেল ঘটে অ্যাডামের জীবনে। সবকিছুই পরিবর্তন শুরু করে তার। মাত্র দুই বছরেই তার উচ্চতা ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি থেকে ৭ ফুট হয়ে যায়।  বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ব্যক্তির তকমাজুড়ে যায় অ্যাডামের ঝুলিতে। তবে দুঃখের বিষয় হলো তখন অ্যাডামের মেরুদণ্ড মারাত্মকভাবে বেঁকে যাচ্ছিল।  

অ্যাডামকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা চালানো হয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৩১ সালের সময়কালে চিকিৎসকরা দেখতে পান অ্যাডাম অ্যাক্রোম্যাগালি নামে রোগে ভুগছিলেন। এটি তার পিটুইটারি গ্রন্থিতে একটি টিউমার সৃষ্টি করেছে। যার ফলে তার দেহে বৃদ্ধি হওয়ার হরমোনগুলোর অস্বাভাবিক ভাবে বেশি উৎপাদন করছে। এতে যে শুধু অ্যাডামের উচ্চতাই বৃদ্ধি পেয়েছিল ত্রা কিন্তু নয়। তার কপাল, চোয়াল, দাঁত, হাত, পাও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। তার হাতের মাপ ২৩দশমিক ৯ সেন্টিমিটার বা ৯ দশমিক ৪ ইঞ্চি। তার ওজন ১০৯ কেজি তখন।

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসকরা অ্যাডামের টিউমারটি অপসারণ করেন। এরপরও তার শারীরিক বৃদ্ধি হচ্ছিলো। তবে তার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি হতে থাকে।অ্যাডামের ডান চোখ অন্ধ হয়ে যায়। বাম কানের শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যাওয়ার ফলে হাঁটতেও পারতেন না অ্যাডাম। পুরোপুরি বিছানায় আবদ্ধ হয়ে যান অ্যাডাম। ৫১ বছর বয়সে মারা যান অ্যাডাম। সেসময় তার উচ্চতা গিয়ে দাঁড়ায় ৭ ফুট ১০ ইঞ্চি। তিনিই মানব ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিজেকে একই জীবদ্দশায় বামন এবং দৈত্য বলতে সক্ষম হয়েছেন।

অ্যাডামের নাম গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ওঠে  ২০০৪ সালে। যা তার মৃত্যুর বহু বছর পরে। অ্যাডাম রেইনারের এই মর্মান্তিক কাহিনী আজো স্মরণ করে বিশ্ব। এখনো চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি অদ্ভূত ঘটনা হিসেবে রয়ে গেছে।   

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.