মাকে হত্যা করে গর্ভের শিশুর হৃৎপিণ্ড খেত এই নরপিশাচ!

ODD বাংলা ডেস্ক: পিটার নাইয়ার্স ছিলেন একজন মধ্য যুগের ভয়ঙ্কর ডাকাত এবং কালো জাদুকর। ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার হিসেবেই তার পরিচিতি বেশি। অনেকে বিশ্বাস করতেন তিনি অদৃশ্য হতে পারতেন। এছাড়াও তিনি বিড়াল, কুকুর, ছাগলে রূপান্তর করতে পারতেন নিজেকে। 

কথিত ছিল, তিনি ভ্রূণের মাংস ভক্ষণ এবং কালো জাদুর মাধ্যমে বিভিন্ন অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। পিটার নাইয়ার্স নিজের চামড়ার থলিতে শিশুদের বিচ্ছিন্ন হাত এবং পা রাখতেন। পিটার নাইয়ার্স ছিলেন ১৬ শতকের একজন জার্মান ডাকাত এবং কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার। 

একটি কৃষক পরিবারে তার জন্ম। ছোট থেকেই তিনি শ্রেণি সংগ্রাম দেখেছেন। নিঃসন্দেহে কৃষক শ্রেণির মানুষ অমানবিক জীবন-যাপন করেছে মধ্যযুগে। পরবর্তী সময়ে সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়েছিল। ১৫২৫ সালে দেশব্যাপী শুরু হওয়া কৃষক বিদ্রোহের পরে নাইয়ার্স মানুষ হত্যায় বেশ আনন্দ পাওয়া শুরু করেন। এই বিদ্রোহ জার্মান কৃষকদের যুদ্ধ হিসেবেও পরিচিত। 

ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জার্মানির কৃষক বিদ্রোহ ইউরোপের বৃহত্তম বিদ্রোহ ছিল। কৃষক সেনাবাহিনী, ধনী ভূমি মালিক, মঠ এবং শহরের দুর্গগুলো আক্রমণ করেছিল। ফলস্বরূপ, জার্মানিতে অপরাধের হার বৃদ্ধি পায়। রেকর্ড অনুযায়ী, ১৫৭০ থেকে ১৫৯০ এর দশকের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল।

এই বিশৃঙ্খলা এবং নৈরাজ্যের মধ্যেই সিরিয়াল কিলার পিটার নাইয়ার্সের উত্থান। বিপ্লবের কারণে স্বাভাবিকভাবেই নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছিল। ডাকাত এবং চোরেদের দল গড়ে উঠেছিল। এসময় সিরিয়াল কিলার নাইয়ার্স জার্মান সীমান্তে অবস্থিত ফ্রান্সের আলজার্স শহরে একটি ডাকাত দল গড়ে তুলেন। 

নাইয়ার্স তার একজন খুনি সহকর্মী মার্টিন স্টিয়ারের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই নৃশংসতা শুরু করেন। স্টিয়ার মেষপালক ছিলেন। তিনি ৪৮ সদস্যের একটি ডাকাত দল গড়ে তুলেন। হত্যা এবং ডাকাতির অভিযোগে ১৫৭২ সালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে স্টিয়ারের মৃত্যুর আগেই নাইয়ার তার অপকর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এসব শুরু করেন। 

নাইয়ার্স এবং তার ডাকাত দলের ২৪ সদস্য ইউরোপের কয়েকটি দেশে ডাকাতি করতে থাকে। প্রথমে তারা গ্রামাঞ্চল এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাইওয়েতে যাত্রীদের সম্পদ ডাকাতি ও হত্যা করত। পরে তারা শহরাঞ্চলেও ডাকাতি, হত্যা এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করতে থাকে। এই ভয়ঙ্কর ডাকাত দল দক্ষিণ জার্মান, পশ্চিম ফ্রান্স, রাইন্ডল্যান্ড এবং বাভারিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে বেড়াত। 

দীর্ঘ ১১ বছর এসব অপরাধ করার পর নাইয়ার্স ১৫৭৭ সালে প্রথমবারের মতো আটক হন। এসময় তার বিরুদ্ধে ৭৫টি খুন এবং ডাকাতিসহ অসংখ্য অভিযোগ ছিল। তবে নাইয়ার্স কারাগার থেকে পালিয়ে যায়। এরপর থেকেই তার সম্পর্কে বিভিন্ন লোককাহিনী প্রচারিত হতে থাকে। অনেকে বিশ্বাস করতে থাকে, সে নরখাদক। তার অতিপ্রাকৃত শক্তি এবং কালো যাদু করার ক্ষমতা আছে। 

একটি লোককাহিনী অনুসারে, ফ্রান্সের ফ্লেজবার্গের নিকটের একটি জঙ্গলে শয়তানের নিকট থেকে কালো জাদুর শক্তি পায় সে। অন্য কাহিনীতে বলা হয়েছে, ভ্রূণ খেয়ে তিনি কালো জাদু করতেন এবং যে কোনো প্রাণীতে পরিণত হতে পারতেন।  

এই কাহিনীতে আরো বলা হয়, তিনি হাত পা কেটে রাখতেন এবং হৃৎপিণ্ড খেতেন। অল্প বয়সী মেয়েদের স্তন কেটে কালো জাদু করত বলেও লোককাহিনী প্রচলিত আছে। পলাতক অবস্থায় নাইয়ার্স তার চেহারা পরিবর্তন করে ছদ্মবেশ ধারণ করতেন। কখনো কুষ্ঠরোগী কিংবা সৈনিকের ছদ্মবেশ, আবার কখনো ছাগলের ছদ্মবেশও ধারণ করত পারতেন তিনি!

যাই হোক ১৫৭৯ সালে পুনরায় গ্রেফতারের সময় নাইয়ার্সের হাতে এবং মুখের অদ্ভুত আকৃতি ছিল বলে বর্ণিত হয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার সময়েও তার চামড়ার থলেতে মানুষের শুকনো হৃৎপিণ্ড এবং ভ্রূণের কাটা হাত ছিল। নুরেমবার্গ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডের ওবারপালজ নামক স্থানে ১৫৮১ সালের ১৬ সেপ্টম্বর এই ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। 

তার সহযোগীদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, নাইয়ার্স ৫৪৪ জনকে হত্যা করেছিল। যার মধ্যে ২৪ জন গর্ভবতী নারী ছিলেন। তাদের ভ্রূণও হত্যা করেছিল এই ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.