পাচার হওয়া শিশুটি আজকের অলিম্পিক তারকা

 


ODD বাংলা ডেস্ক: এক নাটকীয় জীবনযাপন করেছেন অলিম্পিক তারকা মো ফারাহ। এটি তার প্রকৃত নাম নয়।শিশুকালে অবৈধভাবে ব্রিটেনে পাচার করা হয়েছিল তাকে। এরপর জীবনের গল্পের মতো পাল্টে যায় তার নামও। প্রকৃত নাম হোসেইন আবদি কাহিন। বিশ্ব পরিচিতি এসেছে মো. ফারাহ নামে। এ নাম দিয়েছিল খোদ পাচারকারীরা। এখন তার নামের আগে স্যার ব্যবহার করা হয়।

যারা তাকে জিবুতি থেকে ব্রিটেনে নিয়ে আসেন তারাই তার নাম দেন মো. ফারাহ। তার বয়স যখন নয় বছর তখন এক নারী তাকে পূর্ব আফ্রিকার একটি দেশ থেকে ব্রিটেনে নিয়ে আসেন। ওই নারী মো ফারাহকে বলেছিলেন ইউরোপে তাদের কিছু আত্মীয়ের সঙ্গে থাকার জন্য তাকে ইউরোপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুনে দারুণ খুশি হয়েছিলেন ফারাহ। এর আগে ওই মহিলার সঙ্গে তার কখনও দেখা হয়নি। ব্রিটেনে নিয়ে আসার পর তাকে আরেকটি পরিবারের শিশুদের দেখাশোনার কাজ দেওয়া হয়েছিল।


এ করুণ গল্পটি গোপন করে রাখতে চেয়েছিলেন দূরপাল্লার এই দৌড়বিদ। সেজন্য শুরুতে বলতেন তিনি এসেছেন পিতামাতার সঙ্গে শরণার্থী হয়ে। সত্য হচ্ছে যে তার পিতামাতা কোনোদিন যুক্তরাজ্যে আসেননি। তার মা এবং দুই ভাই সোমালিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সোমালিল্যান্ডে তাদের পারিবারিক খামারে বসবাস করছেন।


স্যার মো. ফারাহ-এর বয়স যখন চার বছর, তখন সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধে তার পিতা আবদি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তার নিজের জন্মভূমি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে এখনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।  যদিও সোমালিয়া থেকে বের হয়ে সোমালিল্যান্ড ১৯৯১ সালে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে।


ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মোহামেদ ফারাহ নামে তাকে ব্রিটেনে নিয়ে আসা হয়। ওই নারী তাকে বলতে বলেন যে তার নাম মোহম্মদ। তার ভ্রমণের জন্য ওই নারীর কাছে ভুয়া কাগজপত্র ছিল যাতে তার ছবির পাশে লেখা ছিল মো. ফারাহ। যুক্তরাজ্যে এসে পৌঁছানোর পর ওই মহিলা তাকে পশ্চিম লন্ডনের হাউন্সলোতে তার ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। এবং যে কাগজে তার আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা লেখা ছিল সেটি তার কাছ থেকে নিয়ে নেন। এবং ফারাহ-এর সামনে  তিনি ওই কাগজটি ছিঁড়ে আবর্জনা ফেলার বিনে ফেলে দেন।


তিনি যদি খাবার খেতে চাইতেন তাহলে তাকে সেখানে গৃহস্থালি কাজ করতে হতো এবং শিশুদের দেখাশোনা করতে হতো। তাকে বলা হয়েছিল পরিবারকে আবার দেখতে হলে মুখ বুজে থাকতে হবে। তার সঙ্গে যা ঘটেছে এ ঘটনা কাউকে বলা যাবে না। মুখ বুজে থাকতেন ফারাহ। কাজ করতেন, শিশুদের দেখাশোনা করতে করতে নিজের পরিবারের কথা মনে পড়লে বাথরুমের দরোজা বন্ধ করে কাঁদতেন। ব্রিটেনে এসে প্রথম কয়েক বছর তিনি স্কুলেও যেতে পারেননি। বয়স যকন বারো হলো তখন তিনি ফেল্টহ্যাম কমিউনিটি কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। স্কুলের লোকজনকে বলা হয়েছিল যে তিনি সোমালিয়া থেকে আসা একজন শরণার্থী।


ভিন্ন সংস্কৃতিতে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার এক যুদ্ধ যেন তার সামনে। স্কুল তার জীবনের নতুন দিক উন্মোচন করে দেয়। ফারাজ যখন অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে নামে তখন তিনি তার মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। খেলাধুলার এ ভাষা যেন তার মাতৃভাষা! এর সঙ্গে তার একাত্বতা। বেঁচে থাকা অবলম্বণও খেলার মাঝে খুঁজে পেতে চেষ্টা শুরু করেন।


দৌড়াতেন ফারাহ। পেছনে ফেলতে চাইতেন কষ্ট। ক্রমে দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি। একদিন পৌঁছে যান অলিম্পিক প্রতিযোগিতায়। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকস এবং ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকসে ৫ হাজার ও ১০ হাজার মিটার দৌড়ে সোনা জিতে নেন। ফারাহ এখন স্যার মো. ফারাহ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.