২৪৫ সেনার মধ্যে বাঁচেন শুধু ক্যাপ্টেন, জাহাজ মিলল সমুদ্রের গভীরে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: জাহাজের ধ্বংসাবশেষের কথা বললে সবার আগে ‘টাইটানিক’ এর কথা মাথায় আসে। কিন্তু এমন অনেক জাহাজ রয়েছে, যা হয়তো মুছে গিয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে। কিন্তু সমুদ্রের গভীরে কখনো মেলে তার চিহ্ন। তখনই প্রকাশ্যে আসে সেই জাহাজের ইতিহাস। তেমনই একটি যুদ্ধজাহাজ ‘স্যামি বি’। সম্প্রতি এই জাহাজের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।

৭৮ বছর আগে যে যুদ্ধজাহাজ সমুদ্রের অতলে ডুবে গিয়েছিল, অবশেষে প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় সাত হাজার মিটার গভীরে খোঁজ মিলল সেই আমেরিকান যুদ্ধজাহাজ ‘স্যামি বি’-র।


জাহাজটির পুরো নাম ‘ইউএসএস ডেস্ট্রয়ার এসকর্ট স্যামুয়েল বি. রবার্টস্’ (ডিই-৪১৩)। ১৯৪৪ সালে স্যমরের যুদ্ধে (‘ব্যাটল অব স্যমর’) আমেরিকা নৌবাহিনী এই যুদ্ধজাহাজটি ব্যবহার করে।


এই যুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে আমেরিকা নৌবাহিনীর জয় হলেও যুদ্ধ চলাকালীন ২৫ অক্টোবর জাপানের তিনটি যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের ফলে ‘স্যামি বি’ জলের তলায় ডুবে যায়।


ফিলিপিন্সের স্যমর দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব দিকে আমেরিকা ও জাপানের নৌবাহিনীর মধ্যে এই যুদ্ধ হয়েছিল। জাপানের সর্ববৃহৎ যুদ্ধজাহাজ ‘জামাতো’ এই যুদ্ধে অংশ নেয়।


আমেরিকার প্রচুর সৈন্য এই যুদ্ধে মারা যান। তবে আমেরিকান সেনা এই যুদ্ধে জাপানের অধিকাংশ যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেন। ‘স্যামি বি’-র মোট ২২৪ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। এদের মধ্যে শুধু মাত্র ক্যাপ্টেন রবার্ট ডব্লিউ কোপল্যান্ডই বেঁচে ফিরেছিলেন।


৭৮ বছর পরেও এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যাবে, তাও সমুদ্রের এত গভীরে, তা কেউ ভাবতেও পারেননি। ক্যালাডান ওশ্যানিক নামক একটি সংস্থার স্রষ্টা ভিক্টর ভেসকোভো, সোনার বিশেষজ্ঞ জেরেমি মোরিজেট এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন।


তারা এই যুদ্ধজাহাজটিকে দুই টুকরোয় ভেঙে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পান। টুকরো দুটি পরস্পরের থেকে ১০ মিটার (৩৩ ফুট) দূরত্বে পড়ে ছিল।


ফিলিপিন সমুদ্রের ৬ হাজার ৮৯৫ মিটার (২২ হাজার ৬২১ ফুট) গভীরে ‘স্যামি বি’-এর টুকরো দুটি খুঁজে পেয়েছেন ভেসকোভো। ইওয়াইওএস এক্সপিডিসনস্ সংস্থার ছজন ডুবুরিকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় আট দিনের জন্যে এই সন্ধান-পর্ব চলে।


তারা ‘গ্যাম্বিয়ার বে’ নামের আমেরিকার অন্য একটি জাহাজের খোঁজে নেমেছিলেন। গ্যাম্বিয়ারের খোঁজে নেমে তারা স্যামির ভাঙা অংশবিশেষ দেখতে পান। একটি তিন-টিউবযুক্ত টর্পেডো লঞ্চার সবার প্রথমে নজরে আসে সবার।


অষ্টম দিনের মাথায় এসে পুরো ধ্বংসাবশেষের হদিস মেলে। এখনো পর্যন্ত ‘স্যামুয়েল বি’ এমন একটি যুদ্ধজাহাজ যা এতটা গভীর থেকে উদ্ধার হয়েছে।


আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর (৫ হাজার ৮৯৫ মিটার) এমনকি, পেরুর সর্বোচ্চ বসতি লা রিনকোনাডার (৫ হাজার ১০০ মিটার) উচ্চতা যত, তার থেকেও গভীরে মিলেছে স্যামুয়েল বির ধ্বংসাবশেষ।


২০২১ সালে ইউএসএস জনস্টন (ডিডি ৫৫৭) ফ্লেচার ক্লাস ডেস্ট্রয়ার উদ্ধার করেন ভেসকোভো। এই জাহাজটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আমেরিকান নৌবাহিনীর জন্য বানানো হয়েছিল। ৬ হাজার ৪৬৯ মিটার গভীর থেকে ইউএসএস জনস্টনের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।


ওই সংস্থাটি জানিয়েছে, পরেরবার তারা ১১ হাজার মিটারের চেয়েও বেশি গভীরে অনুসন্ধান চালাবে। তখন হয়তো, ‘গ্যাম্বিয়ার বে’ অথবা অন্য কোনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষও মিলতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.