যে কারণে বারবার রক্তাক্ত হয়েছে এই গির্জা
ODD বাংলা ডেস্ক: প্রার্থনা করার জন্য মানুষ মসজিদ, মন্দির, গির্জায় যান। সেখানে গেলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। মূলত সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য লাভ করাই সেখানে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য। তবে রাশিয়ায় এমন এক গির্জা রয়েছে, যা বার বার রক্তাক্ত হয়েছে।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের অন্যতম বড় ট্যুরিস্ট স্পট ‘চার্চ অন দা স্যাভিওর অফ স্পিল্ড ব্লাড’। সেন্ট পিটার্সবার্গের ফিফা ফ্যান জোনের ঠিক সামনেই দেখা যায় সুরম্য এই গির্জা। লম্বা লাইন ধরে ঢুকছেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দর্শনার্থীরা। জনপ্রতি ২৫০ রুবলের প্রবেশমূল্য এই গির্জায়। যে অর্থের বড় অংশ এর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয়ে আসছে।
এই গির্জা ঘুরতে এসে এক ব্রাজিলীয় দর্শনার্থীর মন্তব্য হলো- ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শোক, এখানে তিন ধরণের অনুভব হচ্ছে। কারণ এই গির্জা বারবার রক্তাক্ত হয়েছে।
মূলত গির্জা হলেও, এটি এখন ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে ঠায় দাঁড়িয়ে। রাশিয়ান সম্রাট দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৫৫ সালে ক্ষমতা পান। তার ঠিক ২৬ বছর পর তাকে মেরে ফেলা হয়। এই সম্রাটের সমাধিস্থলই এখানকার মূল।
মৃতদেহ যেখানে সমাহিত সেখানে পাথর দিয়ে ঢেকে দেয়া। এই পাথর কোলিভান গ্রাইন্ডিং ফ্যাক্টরি ও একাটেরিনবার্গ ও পেটারহফ ল্যাপিডারিতে তৈরি। ইউরাল, আল্টাইরোডোনাইট, জ্যাসপার ও সেরপেন্টাইব পাথর থেকে নেয়া হয়েছে এগুলো। এই সমাধিসৌধ তার স্মরণে তৈরি করেছেন উত্তরাধিকারী তৃতীয় আলেকজান্ডার। ১৮১৮ সালে মস্কোর ক্রেমলিনে জন্ম নেয় দ্বিতীয় আলেকজান্ডার। যিনি ১৮৮১ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গের উইন্টার প্যালেসে মারা যান আততায়ীর হাতে। দ্বিতীয় আলেকজান্ডার পোল্যান্ডেরও রাজা ছিলেন।
রাশিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সমাধিস্থলের দুটি ভাগ। গির্জার মূল প্রান্ত আলাদা হয়েছে ইতালিয়ান মার্বেল পাথরে, যা ইতালির জেনোয়া থেকে তৈরি হয়ে এসেছে। আর দেয়াল জুড়ে জিশু ও মেরীর চিত্র, যা মোজাইকে তৈরি।
এই গির্জার প্রায় ৮০০০ বর্গমিটার জুড়ে মোজাইক করা। রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত এক নারী বলেন, পৃথিবীর অন্য যে কোনো গির্জার চেয়ে বেশি মোজাইক এই গির্জায়।
তৃতীয় আলেকজান্ডার গির্জাটি প্রথাগত রাশিয়ান কায়দায় তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। যাতে সেন্ট পিটার্সবার্গের যে পাশ্চাত্য ভাব তা থেকে বিরত থাকা যায়। সেন্ট পিটার্সবার্গের অন্যান্য ভবনের মতো ধূসর না এটি, বরং এর বাহিরটা বিভিন্ন রঙের। যা মস্কোর ক্রেমলিনে দেখা গেছে।
এর কাজ শুরু হয় ১৮৮৩ সালে, শেষ হয় ১৯০৭ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিলেন রাজা দ্বিতীয় নিকোলাস। এখানে মোজাইক দিয়ে বাইবেলের নানা চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
১৯৩০ সালে সোভিয়েত সরকার গির্জাটি বন্ধ করে দেয় এবং সংস্কার করে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই গির্জার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। জার্মান সৈন্যদের লেনিনগ্রাদ দখলের সময় বেশ বড় রকম ধাক্কা খায় এই গির্জা। এখনো একটি দরজা ভাঙা আছে, সেখানে একটি বাক্সে অর্থ তোলা হচ্ছে।
Post a Comment