২০০ বছর আগে ব্রিটিশ নিয়োগকর্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে জয়ী হয়েছিলেন যে ভারতীয় আয়া

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ১৮২৬ সালের মে মাসে এলিজা স্কট ও ম্যারিয়ান গ্রেস ওয়ার্নারের সঙ্গে ভারত থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজ রয়াল জর্জ-এ করে লন্ডনে পৌঁছান ভারতীয় আয়া ম্যারি অ্যান।


স্কট আর ওয়ার্নার ছিলেন বোন। তাদের বাবা ছিলেন স্যার হেনরি হোয়াইট। বিধবা দুই বোনের স্বামীই বেঙ্গল আর্মিতে অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।


লন্ডনের পৌঁছানোর পরের মাসে ম্যারিলিবোন'র ম্যাজিস্ট্রেটদের ডাক পড়ল। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হলো ম্যারি অ্যান ও তার সাবেক দুই নিয়োগকর্ত্রীর মধ্যে এক বিবাদ মিমাংসা করে দেওয়ার জন্য।


গ্রেস ওয়ার্নার জানালেন, তার লাগেজ থেকে কিছু জিনিসপত্র হারানো গিয়েছে। ম্যারি অ্যানের হেফাজতে জাহাজে রেখে গিয়েছিলেন ওই লাগেজ তিনি। হারানো জিনিসপত্রের মধ্যে আরও ছিল একটি দামি লেখার টেবিলও। এ পরিস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেটদের তদন্তের জন্য অনুরোধ করলেন ওয়ার্নার।


লন্ডনের এসে আচমকা নাবিক পুত্রের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ম্যারি অ্যানের। ছেলেকে নিয়েই তিনি গেলের ম্যারিলিবোন পুলিশের দপ্তরে। 


ম্যারি অ্যান বিচারকদের জানান, তার সেবায় সন্তুষ্টির সাপেক্ষে ইংল্যান্ডে পৌঁছানোর পর তাকে ১০ পাউন্ড পারিতোষিক ও একটি 'চারিত্রিক' সনদপত্র দেওয়ার কথা দিয়েছিলেন তার দুই নিয়োগকর্ত্রী। নিজের ছেলেসহ একই জাহাজে ভারতের পথে রওনা হওয়ার আগে এলিজা স্কট আর ম্যারিয়ান গ্রেস ওয়ার্নারকে তিনি আহ্বান জানালেন তাকে প্রতিশ্রুত জিনিসগুলো দেওয়ার জন্য।


ইংরেজি ভাষায় 'নিদারুণ অকপটতার সহিত' নিজের পক্ষে বিচারকের আদালতে কথা বলেন ম্যারি অ্যান। কোনো কিছু চুরি করার কথা অস্বীকার করেন তিনি। এটা ছিল ইংল্যান্ডে তার পঞ্চম ভ্রমণ। এর আগে সেবা দেওয়া এমন সব পরিবার থেকে অনেকগুলো চারিত্রিক সনদ লাভ করেছেন বলেও জানান অ্যান।


গ্রেস ওয়ার্নার দাবি করেন, ম্যারি অ্যান ও তার ছেলের জিনিসপত্রে পুলিশের তল্লাশি চালাতে হবে। এতে করে রয়াল জর্জ জাহাজের কমান্ডার ক্যাপ্টেন উইলিয়াম রেনল্ডসও সন্তুষ্ট হবেন। তার জাহাজের ক্রুরা সন্দেহের নিশানায় আছেন, এ ব্যাপারটি ক্যাপ্টেনকে রুষ্ট করেছিল।


এদিকে তল্লাশি করেও কিছু পাওয়া গেল না। কিন্তু দুই বোন তারপরও আয়াকে তার প্রতিশ্রুত পারিতোষিক দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। আদালতে এরপর দুই ইংরেজ বোন, ম্যারি অ্যান ও তার ছেলের মধ্যে হিন্দুস্থানি ভাষায় বিস্তর বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় বিচারকেরা দুপক্ষের সওয়াল-জবাব মনোযোগ দিয়ে নিরীক্ষণ করেন।


দুই বোন দাবি করেন, ওই ১০ পাউন্ডের ওপর ম্যারি অ্যানের কোনো দাবি নেই। তারা তাকে ক্যাপ্টেন রেনল্ডসের কাছে যেতে বলেন। ম্যাজিস্ট্রেট জন রলিনসন ঘোষণা করেন, যেহেতু চুক্তিটি ভারতে হয়েছিল, তাই তার পক্ষে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়।


তিনি পরামর্শ দেন, ম্যারি অ্যানের উচিত লন্ডনের জেরুজালেম কফি হাউজে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম রেনল্ডসের সঙ্গে দেখা করা। তখন এলিজা স্কট একটি কাগজে ঠিকানাটা লিখে দেন। কিন্তু ম্যারি অ্যান তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বিচারক রলিনসনকে অনুরোধ করেন তাকে ঠিকানাটা লিখে দিতে।


ক্যাপ্টেন রেনল্ডস বিচারক রলিনসনের উদ্দেশে লিখেন, ম্যারি অ্যানের চরিত্র সন্দেহের উর্ধ্বে এবং ইংল্যান্ডযাত্রার পুরোটা সময় তিনি যথাযথ আচরণ করেছেন। তার মতে, স্কট ও ওয়ার্নারের উচিত অ্যানকে তার প্রাপ্য পারিতোষিক পরিশোধ করা। আর এ বিষয়ে অ্যানকে সাহায্য করার জন্য বিচারক রলিনসনকে আহ্বান করেন ক্যাপ্টেন রেনল্ডস।


রলিনসন ওই চিঠিটি এলিজা স্কটকে দেখান। এর পরেরদিন, স্কটের একজন ভৃত্য ম্যারি অ্যানকে নিয়ে পুলিশ অফিসে এসে তাকে 'উপহার' হিসেবে পাঁচটি সভেরেইন (তৎকালীন ব্রিটিশ স্বর্ণমুদ্রা) ও আটটি রুপি হস্তান্তর করেন।


ম্যারি অ্যান তা গ্রহণ করেন। স্থানীয় পত্রিকার খবর অনুযায়ী, তিনি নাকি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। এরপর 'ভারতীয় কায়দায় প্রণিপাত সারিয়া' ম্যারি অ্যান পুলিশ অফিস ত্যাগ করেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.