"মা নিজের গয়না বেচে আমায় স্কুলে পড়িয়েছে! কিন্তু সে আর নেই..."
ODD বাংলা ডেস্ক: আমি এক নাবালক ছেলে। এখনও পড়ছি। আমি একটি ছোট বাড়িতে থাকি। সেখানে আমার সঙ্গে থাকে দিদি। আসলে আমার মা মারা গিয়েছেন। এক বছর হল তিনি আমাদের ছেড়ে পরলোক গমন করেছেন। মা খুবই ভালো ছিল। আমাদের জন্য তিনি যা করতে পারতেন করেছেন। আমি তাঁকে প্রতিদিন মিস করি।
আসলে এই ঘটনাটি ঘটে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়। তবে আমার মায়ের করোনা ছিল না। তবে তাঁর ছিল ব্রেন টিউমর। ওই সময়ে তাঁর অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। তবে সবকিছুই ঠিক দিকে এগচ্ছিল। কিন্তু তারপরই তাঁর শরীরে খারাপ হতে শুরু করে দেয়। ওনার শারীরিক অবস্থা খুব দ্রত খারাপ হয়ে যায়।
আসলে মানুষের শরীর যে কী ভাবে নিজের মতো করে খারাপ হয়ে যায়, তা বোঝা কিন্তু সত্যিই মুশকিল। আসলে মায়ের উপর আর কোনও ওষুধ কাজ করেনি। তাঁর খুব ব্যথা হতো। যন্ত্রণায় ছটপট করত মা (Mother)। আমি খুবই কষ্ট পেতাম সেই দৃশ্য দেখে।
এরপর সেই দিন চলে এল। এই সময়টা আমার জীবনের জন্য সবথেকে খারাপ। আমার এখনও মনে পড়ে যে ওই দিনটিতে মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। সেটা ছিল বিকেলবেলা। ৪.৩০-এ মা প্রাণ ত্যাগ করে। আমি ভাবতেও পারিনি। (প্রতীকী ছবি)
আমার জন্য খুব চিন্তা করতেন
আসলে মা যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন আমাদের ডেকে নেয়। মা চেয়েছিল যে মারা যাওয়ার পরও যাতে আমাদের বড় হওয়া কোনওভাবেই থমকে না যায়। আমার পড়াশোনা ও আমার অন্যান্য বিষয় নিয়ে তাঁর চিন্তা ছিল। আমায় মা একটু বেশিই ভালোবাসত। কারণ আমি ছিলাম ছোট।
আসলে আমার বাবার ব্যবসার অবস্থা ভালো ছিল না। করোনার জন্য তাঁর ব্যবসার খুবই ক্ষতি হয়। এই সময়টায় আমার পরিবারে টাকা পয়সার অভাব দেখা যায়।
দিদি পড়ানো শুরু করে দেয়
আমাদের পয়সাকড়ির অভাব দেখা দিতে শুরু করে। এই অবস্থাটা ছিল খুবই খারাপ। তাই আমার দিদি গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়ানো শুরু করে দেয়। আর ও পড়ায় খুব কম পয়সায়। এই দিনগুলিতে আমাদের দুবেলা খাবার জুটেছে খুবই কষ্ট করে। খুব কঠিনভাবে এই সময়টা কাটিয়েছি।
সাবান কেনার পয়সাও ছিল না
এমন দিন আমি কখনও দেখিনি। আমাদের দিন কাটানো হয়ে গিয়েছিল কঠিন। এমনকী বাড়িতে সাবান কেনার পয়সাও ছিল না। তাই আমি সাবান ছাড়াই স্নান করেছি। এইভাবেই প্রতিনিয়ত লড়াই হয়েছে। এটাই ছিল আমার কাছে খুব খারাপ দিন।
গয়না বেচে দেয়
এই সময় আবার স্কুলের ফি দিতে হবে। স্কুলের ফি না দেওয়ার কারণে আমায় স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমার জীবন ভেঙে যেতে শুরু করে। এবার আমি স্কুলের সমস্ত সমস্যার কথা মাকে জানাই। আমি চেষ্টা করতাম মায়ের সামনে স্কুলে না যাওয়ার। তবে একটা সময়ে আমি স্কুল যাই। সেখানে গিয়ে স্যারের কাছে ফি কমানোর কথা বলি।
আমি যখন স্কুল থেকে ফিরি তখন দেখি অন্যদিক থেকে মা ফিরছে। আমায় দেখেই সে কাছে টেনে নেয়। আমি দেখি মায়ের হাতে রয়েছে টাকা। আমার চোখে জল চলে আসে। তবে আমি এটাও দেখি যে মায়ের গলায় মঙ্গলসূত্র নেই। তখন বুঝতে পারি যে মানুষটি আমার জন্য নিজের গয়না বেচে দিয়েছে। আমি যাতে ভালো মতো বাঁচতে পারি, শুধু সেই চিন্তাই ছিল তাঁর মনে। তবে এরপরও নিয়তি সেই মানুষটিকে আমার থেকে কেড়ে নিল।
Post a Comment