১৩ বছর ‘শয্যাশায়ী’! সরকারের থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরলেন বৃদ্ধা! তার পর...
ODD বাংলা ডেস্ক: দীর্ঘ ১৩ বছর অসুস্থতার নাটক করে সরকারের কাছ থেকে নিয়েছেন ৫ কোটি ৯০ হাজার টাকা। আদালতে জানিয়েছিলেন, তিনি শয্যাশায়ী। তাঁকে সাহায্য করা হোক। শেষমেশ সামনে এল সত্য। ৬৬ বছরের বৃদ্ধার কাণ্ড দেখে হতবাক আদালত। অবাক সরকার।
নাম তাঁর ফ্রান্সেস নোবেল। তবে পদবির মতো কাজে একেবারেই মহান নন তিনি। বরং ব্রিটেনের আদালত বলছে, সাম্প্রতিক কালে ব্রিটেনে সবচেয়ে বড় প্রতারণার ঘটনা ঘটিয়েছেন ৬৬-এর বৃদ্ধা!
দিব্যি কাজ করতে পারেন তিনি। বাড়ি ব্রিটেনের ওয়েস্টনে। কিন্তু বছর ১৩ আগে ব্রিটেনের আদালতে ফ্রান্সেস দাবি করেন,তাঁর স্নায়ুঘটিত অসুখ রয়েছে। তিনি আর নড়তে চড়তে পারেন না। সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী।
২০০৫ থেকে ২০১৮ সালে হার্টফোর্ডশায়ার কান্ট্রি কাউন্সিলে ফ্রান্সেস এই মর্মে দাবি করেন যে, তিনি শয্যাশায়ী। তাঁর চিকিৎসার খরচও বিশাল। এমতাবস্থায় আদালতে ‘ডিরেক্ট পেমেন্ট প্যাকেজ’ দাবি করেন তিনি।
ব্রিটেনে ‘ডিরেক্ট পেমেন্ট প্যাকেজ’ দেওয়া হয় বিভিন্ন অসুস্থ মানুষ কিংবা তাঁর পরিবারকে।
ফ্রান্সেস নোবেলের আবেদন গ্রহণ করেছিল আদালত। এ ভাবে গত ১৩ বছর ধরে প্রায় ৬ কোটি টাকা সাহায্য পেয়েছেন তিনি।
কিন্তু এই টাকা নিয়ে কী করলেন ফ্রান্সেস? দিব্যি ঘুরে বেড়ালেন বিদেশ। কিছু টাকা দিয়েছেন মেয়ে এবং জামাইকে।
স্বাস্থ্যখাতে পাওয়া অর্থ নিয়ে ‘শয্যাশায়ী’ ফ্লান্সেস কখনও ঘুরেছেন কানাডা, কখনও সান ফ্রান্সিসকো, কখনও বস্টন তো কখনও অরল্যান্ডোতে। থাকতেন বিলাসবহুল সব হোটেল কিংবা রিসর্টে।
নিজের মেয়ে-জামাইকে তাঁর দেখাশোনা এবং সেবার কাজে বহাল করেছেন বলে আদালতে জানিয়েছিলেন ফ্রান্সেস। মাস গেলে তাঁরাও সরকারি অনুদান পেতেন।
এ ভাবেই বেশ চলছিল। শয্যাশায়ীর অভিনয় করে মাসে থোক পাউন্ড ঢুকত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। তাই দিয়ে মেয়ে জামাইকে নিয়ে বৈভবের জীবন কাটাতেন ৬৬ বছরের বৃদ্ধা।
ফ্রান্সেসের খেলা ধরা পড়ে মাস কয়েক আগে। এক দিন কাকভোরে পোষ্যকে নিয়ে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন বৃদ্ধা।
১৩ বছর ধরে শয্যাশায়ী বৃদ্ধা কি না কুকুর নিয়ে দিব্যি প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছেন। দেখে নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেননি কয়েক জন প্রতিবেশী।
বৃদ্ধাও ভাবেননি, ১৩ বছরের অভিনয় এ ভাবে ধরা পড়বে পোষ্যের সৌজন্যে। আসলে কথায় বলে, চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড় ধরা। অবশেষে ধরা পড়লেন ফ্রান্সেস নোবেল।
প্রতিবেশীদের মারফত খবর পেল প্রশাসন। লাগানো হল লোক। যাঁরা গোপনে ফ্রান্সেসের গতিবিধি নজর করতে শুরু করলেন।
অতঃপর ধরাই পড়লেন বৃদ্ধা। জানা গেল, কী ভাবে সবাইকে বোকা বানিয়ে হাজার হাজার পাউন্ড হাতিয়েছেন তিনি।
এক দিন তাঁর বাড়িতে উঁকি মেরে গোয়েন্দারা দেখলেন, কখনও ‘শয্যাশায়ী’ নোবেল দাঁড়িয়ে চুল শুকোচ্ছেন। কখনও বাগান পরিচর্যায় মন দিয়েছেন।
এই ঘটনাকে বিচারপতি রিচার্ড ফস্টার ‘নজিরবিহীন প্রতারণা’ বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু হতেই চুপিচুপি দেশ ছাড়েন বৃদ্ধা। মেয়ে-জামাইকে নিয়ে চলে যান জার্মানি।
আদালতে যখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে, বার বার তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হচ্ছে, তখন বার্লিনে ঠায় বসে বৃদ্ধা। কিছুতেই ফিরবেন না তিনি।
বার বার এমন করায় অবশেষে তাঁকে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। গত মাসেই তাঁকে মোট ৪ বছর ৯ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এখন ৬৬ বছরের প্রতারককে জার্মানি থেকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ করছে প্রশাসন।
Post a Comment