এখানেই ভ্রাতৃহত্যার পাপ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন পঞ্চপাণ্ডব, এই জ্যোতির্লিঙ্গের কাহিনি জানেন?

 


ODD বাংলা ডেস্ক:  শিবের দর্শন পেতে শিব ভক্তদের অন্যতম গন্তব্য হল কেদারনাথ মন্দির (Kedarnath Temple)। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে পঞ্চম জ্যোতির্লিঙ্গ হল কেদারনাথ। ধর্মীয় দৃষ্টিতে কেদারনাথের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। উত্তরাখণ্ডে কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ এই দুটি প্রাচীন তীর্থ। শাস্ত্র মতে কেদারনাথের দর্শন না-করে বদ্রীনাথ যাত্রা করলে সেই যাত্রা নিষ্ফল হয়ে যায়। স্কন্দ পুরাণ ও শিব পুরাণে কেদারনাথের উল্লেখ পাওয়া যায়। কেদারনাথে শিবের দর্শন ও পুজো করলে সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করা যায় এবং ব্যক্তির সমস্ত মনস্কামনা পূরণ হয়। কী ভাবে এখানে শিব জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে প্রকট হলেন তাঁর পৌরাণিক কাহিনি এখানে ব্যাখ্যা করা হল।


নর-নারায়ণের তপস্যা


হিমালয়ের কেদার শৃঙ্গে বিষ্ণুর অবতার মহাতপস্বী নর ও নারায়ণ ঋষি তপস্যা করতেন। তাঁদের আরাধনায় প্রসন্ন হয়ে শিব সেখানে প্রকট হন। তাঁদের প্রার্থনা অনুযায়ী শিব জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে সেখানে বাস করতে শুরু করেন। পর্বতরাজ হিমালয়ের কেদার নামক শৃঙ্গে এই জ্যোতির্লিঙ্গ স্থাপিত হওয়ায় এটি কেদারনাথ নামে পিরিচিতি লাভ করে।


পঞ্চকেদার


মহাভারতের যুদ্ধে জয় লাভের পর ভাতৃহত্যার পাপ থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিলেন পঞ্চ পাণ্ডব। এ কারণে শিবের আশীর্বাদ কামনা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু শিব তাঁদের থেকে রুষ্ট ছিলেন। শিবের দর্শন লাভের জন্য পঞ্চপাণ্ডব কাশী পৌঁছন, কিন্তু শিব সেখানে ছিলেন না। শম্ভূকে খুঁজতে খুঁজতে হিমালয় পৌঁছে যান তাঁরা। শিব পাণ্ডবদের দর্শন দিতে চাইতেন না, এ কারণে সেখান থেকে অন্তর্ধান হয়ে কেদারে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। অন্য দিকে নাছোড়বান্দা পাণ্ডবরাও শিবের পিছু নিয়ে কেদার পৌঁছন।


ততক্ষণে শঙ্কর বলদের রূপ ধারণ করে অন্য পশুদের সঙ্গে গিয়ে মিশে যান। পাণ্ডবদের এ বিষয় সন্দেহ জাগে। তখন ভীম বিশালাকার ধারণ করে দুই পর্বতে নিজের পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। অন্য সমস্ত গোরু ও বলদ ভীমের পায়ের তলা থেকে বেরিয়ে গেলেও শিবরূপী বলদ সেখান থেকে যেতে সম্মত হয় না। ভীম জোর দিয়ে সেই বলদটিকে চেপে ধরলে, শিব স্বরূপের বলদ ভূমিতে অন্তর্ধান হতে শুরু করে। তখন ভীম বলদের পীঠের উঁচু অংশটি ধরে ফেলে। পাণ্ডবদের শক্তি ও দৃঢ় সংকল্প দেখে প্রসন্ন হন শিব। তৎক্ষণাৎ দর্শন দিয়ে পাণ্ডবদের পাপমুক্ত করেন শিব। তার পর থেকেই বলদের পিঠের আকৃতির পিণ্ড রূপে কেদারনাথে পুজো পান মহাদেব।


ভৈরব করেন মন্দির রক্ষা


শিবের এই মন্দিরটি ৮৫ ফুট উঁচু, ১৮৭ ফুট লম্বা ও ৮০ ফুট চওড়া। মন্দিরের বাইর নন্দী বিরাজমান। কেদারনাথ যাওয়ার আগে গৌরীকুণ্ডে স্নান করার নিয়ম রয়েছে। ভৈরবনাথের মন্দিরের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে এখানে। প্রতি বছর তাঁর পুজোর পরই মন্দিরের দরজা খোলা ও বন্ধ করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী মন্দিরের দ্বার বন্ধ হওয়ায় ভৈরব এই মন্দির রক্ষা করেন।


মন্দিরের পিছনে রয়েছে ভীমশিলা


মন্দাকিনী নদীর তীরে অবস্থিত কেদারনাথ মন্দির ৬ বছর আগের বিপর্যয়ের পরও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ভক্তদের কাছে এটি শিবের চমৎকার। জলের বেগের সঙ্গে একটি বিশালাকৃতি পাথর ভেসে এসে মন্দিরের রক্ষাকবচ হয়ে পিছনের দিকেই স্থায়ী হয়ে যায়। এর ফলে মন্দিরের কোনও ক্ষতি হয় না। এই শিলার নামকরণ করা হয় ভীমশিলা। কেদারনাথ এলে ভক্তরা এই শিলারও পূজার্চনা করেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.