মাটির নিচের এসব রেল-স্টেশন ভূতের আস্তানা! পড়লে গা ছমছম করবেই...
ODD বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীতে অনেক রেলস্টেশন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। দীর্ঘদিন মানুষের যাতায়াত না থাকায় স্থানগুলো স্বাভাবিকভাবেই নির্জন। অতিকল্পনা প্রবণ মানুষ এই সব স্থান সমূহে ভৌতিক ঘটনা ঘটে থাকে বলেও মনে করেন।
তবে বাস্তববাদী মানুষ সব কিছুই যুক্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। দীর্ঘ সময় পরিত্যক্ত রেল স্টেশনগুলো নির্জন থাকায় ঘোস্ট স্টেশন হিসেবেও পরিচিত। অত্যাধুনিক শহর লন্ডনেও এমন কিছু ঘোস্ট স্টেশন আছে।
অত্যাধুনিক এবং গতিশীল শহর লন্ডনে বেশ কয়েকটি ঘোস্ট স্টেশন আছে। লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড টিউব নেটওয়ার্কে ২৭০টি স্টেশন আছে। বর্তমানে করোনাভাইরাস মাহামারির কারণে স্টেশনগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ আছে। তবে এরও অনেক আগে থেকেই ৫০টিরও বেশি স্টেশন পরিত্যক্ত ছিল। বহু বছর ধরে স্থানগুলো জনগণের জন্য উন্মুক্ত নয়। আর এ কারণেই এগুলোকে ঘোস্ট স্টেশন হিসেবে অভিহিত করা হয়। পরিত্যক্ত এই সব স্টেশনগুলোর কয়েকটির ইতিহাস অনেক দীর্ঘ।
চ্যারিং ক্রস জুবিলি লাইন স্টেশনটি ১৯৯৯ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়। ডকল্যান্ড এবং মিলেনিয়াম ডোমের দিকে প্রসারিত করার কারণে এটি বন্ধ করা হয়েছিল। অথচ মাত্র ২০ বছর পূর্বে স্টেশনটি নির্মিত হয়েছিল। উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড স্টেশনটিও কখনো ব্যবহৃত হয়নি। অর্ধনির্মিত স্টেশনটি স্থানীয় যাত্রী স্বল্পতার কারে পরিত্যক্ত হয়েছিল। এটিও ঘোস্ট স্টেশনে পরিণত হয়েছে।
পার্কল্যান্ড ওয়াক স্টেশন পরিত্যক্ত হয়েছিল দুর্দশাগ্রস্ত নর্দার্ন উচ্চ প্রকল্পের জন্য। ১৯৩০ এর দশকের একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ছিল বৈদ্যুতিক ট্র্যাক নির্মাণ। এই প্রকল্পেরই অংশ ছিল নর্দার্ন রেলওয়ে স্টেশন। যুদ্ধের কারণে এই প্রকল্প শেষ হয়নি। পার্কল্যান্ড ওয়াক স্টেশন সংলগ্ন রেললাইনও এখন পরিত্যক্ত।
অনেক জায়গায় লাইনের উপর প্রায় ছোট জঙ্গলের মতো সৃষ্টি হয়েছে। আর অনেক স্টেশনগুলোর মধ্যে বাদুড়ের বসবাস। লন্ডনের পরিত্যক্ত স্টেশনের বেশ কয়েকটি ভুতুড়ে। হলবর্নের ব্রটিশ মিউজিয়াম স্টেশন ১৯৩৩ সাল থেকে পরিত্যক্ত। এই সময়টাতে লন্ডনের ধনীরা মিশরীয় শিল্পকর্ম দিয়ে নিজেদের ড্রয়িং রুম সাজিয়ে রাখত। ওই স্টেশনটির পাশের মিউজিয়ামে একটি মিশরীয় সংগ্রহের কক্ষ আছে। কেউ কেউ কল্পনা করে থাকেন একটি মমির অতৃপ্ত আত্মা ট্যানেলের প্লাটফর্ম এবং আশেপাশের অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়।
প্রাক্তন ওস্টারলি এবং স্প্রিং স্টেশন, ১৯৩৪ সালে পরিত্যক্ত হয়েছিল। ১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় দ্বিতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর স্টেশনগুলো বইয়ের দোকানে রূপান্তরিত হয়। বেশিরভাগ ঘোস্ট স্টেশনগুলোই অন্য কোনোভাবে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। এমনকি একটি স্টেশন এখন এক পরিবারের বসবাসের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনের অনেকগুলো হয়তো আপনি আগে থেকেই চেনেন।
জানেন কি? লন্ডনের এসব ভুতূড়ে রেল স্টেশন কিন্তু আপনি সিনেমার পর্দায় দেখতে পারবেন। ‘স্কাইফল’ ফিল্মে জেমস বন্ড একটি দৃশ্যে চ্যারিং ক্রস স্টেশনে শুটিং করেছেন। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হরর ফিল্ম ‘ক্রিপ’ এর একটি বড় অংশের শুটিং হয়েছে অ্যালডওয়াইচ টিউব স্টেশনে। সেখানেই যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘শার্লক’ এর শুটিং হয়েছে।
২০১৭ সালে প্রকাশিত ওয়ার ড্রামা ‘ডার্কেস্ট আওয়ার’, ১৯৯২ সালে প্রকাশিত গোয়েন্দা থ্রিলার ‘প্যাট্রিয়ট গেমস’ এবং ২০০৭ সালে প্রকাশিত একটি রোমান্টিক ওয়ার ড্রামার শুটিং হয় আন্ডারগ্রাউন্ড টিউব স্টেশনে। হয়তো এই ফিল্ম কিংবা টিভি প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমেই আপনি লন্ডনের ঘোস্ট স্টেশনগুলো দেখেছেন।
Post a Comment