বেশি সৎ হওয়াও ভালো নয়, বলেছেন চাণক্য

 


ODD বাংলা ডেস্ক: Chanakya-র নীতি নিছক আদর্শবাদের ওপর নয়, বরং ব্যবহারিক জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। আজ থেকে প্রায় ২৩০০ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন চাণক্য। ভারতীয় রাজনীতি ও অর্থশাস্ত্রের প্রথম বিচারক মনে করা হয় তাঁকে। তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য চাণক্য ছিলেন রাজনীতির খেলায় পারদর্শী। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী নন্দ বংশ ধ্বংস ও মৌর্য সাম্রাজ্যের পত্তন হয়, যার রাজা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।


চাণক্যের নীতিগুলি সহস্রাধিক বছর পুরনো হলেও আজকের যুগেও তা প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। ব্যক্তির জীবন, আচরণ, ব্যবহার ও সাফল্য লাভের পথ সম্পর্কে কী বলেছেন চাণক্য দেখে নেওয়া যাক--


১. চাণক্যের মতে, যে কোনও ব্যক্তিকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সৎ হতে নেই। কারণ সোজা গাছই সবার আগে কাটা হয়। যে ব্যক্তি খুব বেশি সৎ, সে কষ্ট পায় তত বেশি।


২. কোনও সাপ বিষধর না-হলেও, ছোবল মারা বন্ধ করা উচিত নয়। ঠিক এ ভাবেই দুর্বল ব্যক্তিকেও সবসময় নিজের দুর্বলতার প্রদর্শন করা উচিত নয়।


৩. চাণক্য বলেছিলেন, 'কখনও নিজের রহস্য কারও সঙ্গে ভাগ করবে না। এই প্রবৃত্তি তোমাকে ধ্বংস করে দেবে।'


৪. সমস্ত বন্ধুত্বের পিছনে কিছু না-কিছু স্বার্থ থাকে। পৃথিবীতে এমন কোনও বন্ধুত্ব নেই, যার পিছনে ব্যক্তির কোনও স্বার্থ লুকিয়ে থাকবে না। কটূ হলেও এটি সত্য।


৫. নিজের সন্তানকে প্রথম পাঁচ বছর ভালোবাসায় ভরিয়ে লালনপালন করুন। তার পরের পাঁচ বছর বকে এবং কঠোর নজরদারি চালিয়ে। কিন্তু বাচ্চা ষোলো বছরের হয়ে গেলে, তার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করা উচিত। বড় বাচ্চারা আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।


৬. যাঁরা মনে ভালোবাসা নিয়ে থাকেন, তাঁদের দুঃখ সহ্য করতে হয়। মনে ভালোবাসা থাকলে সুখানুভূতি হয়, আবার একটি ভয়ও কাজ করে। হারিয়ে যাওয়ার ভয়, অধিকার কমে যাওয়ার ভয় ইত্যাদি। কিন্তু মনে ভালোবাসা জাগবে না, এমন হতে পারে না। তাই প্রেম জাগতে দিন, কিন্তু বোধবুদ্ধি প্রয়োগ করুন। সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রীতির মধ্যেও যে চাতুর্য ধরে রাখে, সেই শেষ পর্যন্ত সুখে থাকে।


৭. যে অর্থ প্রচুর কষ্টের পর, নিজের ধর্ম-আত্মাভিমান ত্যাগ করার পর, শত্রুর তৈলমর্দন ও তাঁর প্রভুত্ব স্বীকার করার পর লাভ করা হয়েছে, তা কখনও গ্রহণ করা উচিত নয়।


৮. নীচ প্রবৃত্তির লোকেরা অন্যের মনকে কষ্ট দেওয়ার, তাঁদের বিশ্বাস আহত করার কথা বলে, অন্যের সমালোচনা করে আনন্দিত হয়। কিন্তু এমন জাতকরা নিজের বড় ও মিথ্যা জালে নিজেই জড়িয়ে পড়ে। যে ভাবে বালির ঢিবিকে নিজের খোপ ভেবে সাপ ঢুকে পড়ে এবং দমবন্ধ হয়ে মারা যায়, তেমনই এমন লোকেরা নিজের কুঅভ্যাসের বোঝার তলায় চাপা পড়ে মারা যান।


৯. যা হয়ে গিয়েছে, তা বাদ দিন। নিজের হাতে কোনও ভুল কাজ হয়ে থাকলে, তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা না-করে বর্তমানে ভালো ভাবে জীবন-যাপন করুন ও ভবিষ্যৎ উন্নত করার চেষ্টা করুন।


১০. দুর্বল, ভীতু লোকেরা অসম্ভব শব্দ প্রয়োগ করেন। বুদ্ধিমান ও সাহসী লোকেরা নিজেই নিজের পথ তৈরি করেন।


১১. খারাপ সময়ের জন্য অর্থ সঞ্চয় করুন। পরিবারের ওপর সঙ্কট এলে অর্থ লুটিয়ে দিন। কিন্তু অর্থ ও পরিবারকে বাজী রেখে নিজের আত্মার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।


১২. সঙ্কটের সময় ভাই-বন্ধু এবং আর্থিক লোকসানের সময় স্ত্রীর প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়।


১৩. কষ্টের চেয়েও বড় কষ্ট হল অন্যের বাড়িতে থাকা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.