যে কারণে জাপানে মৃতদের জন্য রয়েছে বিলাসবহুল পাঁচতারকা হোটেল

ODD বাংলা ডেস্ক: একটি দেশের অর্থনীতির চাকা কতখানি সচল তা সেখানকার আবাসিক হোটেলে গেলে খানিকটা বোঝা যায়। বিশবের যে কোনো দেশেই যান না কেন, থাকার জন্য পাঁচতারকা হোটেলগুলোই সবার প্রথম পছন্দ। ঝা চকচকে এসব হোটেলে থাকে ভালো মানের খাবার, থাকার নানান সুবিধাসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাই তো নামি দামি হোটেলের খুঁজে বের করাই ভ্রমণের আগে প্রথম কাজ। 

তবে সব দেশে পাঁচতারকা হোটেলগুলো অন্যদের থাকার জন্য হলেও জাপানে এর চিত্র কিছুটা ভিন্ন। সেখানে শুধু পর্যটকদের জন্যই নয়, রয়েছে মৃতদের জন্যও এই ব্যবস্থা। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়? হবেন বৈকি! মৃতদের কেন রাখা হয় পাঁচতারকা হোটেলে। সেখানে তাদের জন্য কি কি সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, কেনই বা মৃতদের জন্য তৈরি করা হলো হোটেল। তাও আবার বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন পাঁচতারকা হোটেল। 

জাপানের ওসাকার হোটেল রিলেশন বা ‘ইতাই হেতেরু’ হোটেল। রাজধানী টোকিও থেকে ১৫ মাইল দূরেই অবস্থিত এটি। রাজকীয়ভাবে মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য হয় হোটেলটিতে। এরপর কফিনবন্দি লাশটিকে রাখা হয় হোটেলের এক ঘরে। যদিও জাপানিরা মৃতদের কখনো কবর দিয়ে বা পুড়িয়ে থাকেন। তবে হোটেলে লাশ রাখার ঘটনা সত্যিই বিরল। মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য জাপানিদের নতুন এ উদ্যোগ ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশ্বে। এ হোটেলে যে কেউ চাইলেই প্রিয়জনের মৃতদেহ সংরক্ষণ করতে পারেন।

কথা হচ্ছে এজন্য মর্গই তো যথেষ্ট। ঘটা করে হোটেল তৈরি করার কি দরকার ছিল। মৃতদেহ হোটেলে রাখার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। জাপানে কবরস্থানগুলোর সংখ্যা অনেক কম জনসংখ্যার তুলনায়। বর্তমানে সেখানকার কবরস্থানে মৃতদের জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়।এ কারণেই যদি কোনো মৃতের জন্য কবরস্থানে জায়গা পাওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে আত্মীয়রা লাশ নিয়ে চলে যান ওসাকা হোটেলে। সেখানে শেষকৃত্য করার পর মৃতদেহ জলবায়ু-নিয়ন্ত্রিত কফিনে সংরক্ষণ করা হয়।

শুধু তাই নয়, মৃতকে যে ঘরে রাখা হয়; সেটি ডাবল বেডের সুসজ্জিত এক রুম। সেখানে রয়েছে টেলিভিশন, আসবাবপত্রসহ সব সুযোগ-সুবিধা। যদিও মৃতব্যক্তির এসব সুবিধার কোনো প্রয়োজন নেই। রুমভেদে হোটেলের ভাড়া বাড়তে বা কমতে পারে। মৃতের আত্মীয়রা প্রতিমাসে বা বাৎসরিক ভিত্তিতে হোটেল ভাড়া পরিশোধ করেন। জনসংখ্যার চেয়ে কবরস্থান কম থাকায় হোটেলটি যেন জাপানিদের কাছে আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। সেই সঙ্গে হোটেল মালিকরাও রয়েছেন নিশ্চিন্তে।

কেবল ওসাকা নয়, জাপানে এ ধরনের হোটেলের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ ধরনের হোটেলকে ‘কর্পস হোটেল’ বা ‘লাশ হোটেল’ বলে। জাপানে গত কয়েক বছরে এ ধরনের হোটেল ব্যবসায় চাঙা হয়ে উঠেছে। সরকারি তথ্যমতে, জাপানে প্রতিবছর ২০ হাজার মানুষ মারা যান। ২০৪০ সাল নাগাদ সেখানকার মৃত্যুহার ১.৭ মিলিয়নে গিয়ে ঠেকবে। সব মিলিয়ে মৃতদেহ দাফনের জায়গা না পাওয়ায় এমন উদ্যোগ বেছে নিয়েছেন জাপানিরা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.