রহস্যময় দুর্গ, এক রাতের ভয়াবহ আগুনে মৃত্যু হয় সবার
ODD বাংলা ডেস্ক: বিপদ কখনো বলে কয়ে আসে না, কথাটি যেমন সত্যি আবার প্রচুর অর্থ থাকলেও বিপদকে ঠেকানোও যায় না। আয়ারল্যান্ডের মেনলো ক্যাসলে ঘটে যায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ব্লেক ক্যাসল নামেও দুর্গটির পরিচিতি রয়েছে।
৪৫১ বছরের পুরানো ঐতিহাসিক সেই ক্যাসেলের সঙ্গে মিশে রয়েছে অসংখ্য অজানা কাহিনী। গলওয়ের সবচেয়ে ধনী পরিবার ছিলো ব্লেক পরিবার। ১৫৬৯ সালে তারা করীব নদীর তীরে ম্যানলো ক্যাসল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৬০০ সাল থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত ব্লেক পরিবারই বাস করতেন এখানে।
ক্যাসেলের প্রবেশে শত শত বছরের পুরানো পথ ও গাছগুলো এখনো প্রকৃতিতে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে। আলো- ছাঁয়ার পরিবর্তনের খেলায় গাছগুলো বার্ধক্যে পরলেও এখনো যেন চির যৌবনের রং ছড়িয়ে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে দর্শনার্থীদের।
এই মেনলো ক্যাসেলেই ১৬০০ শতাব্দীতে ঐতিহ্যবাহী মেইন ইন মেনলো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো ব্লেক পরিবার। অনেক ধরনের খেলাধুলার পাশাপাশি সংগীত ও নৃত্যেরও আয়োজন থাকতো ক্যাসলে।
১৯১০ সালের ২৬ জুলাই রাতে সবকিছু বদলে গেল। লর্ড ভ্যালেন্টাইন এবং লেডি ব্লেক তখন ছিলেন ডাবলিনে। সেই রাতেই ক্যাসেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কোচম্যান জেমস কিরওয়ান চিৎকারের শব্দ শুনে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলেন। তিনি দেখলেন চারপাশ আগুনের ধোয়ায় আচ্ছন্ন।
তিনি উপায়ন্তর না পেয়ে নিজ জীবন বাঁচাতে জানালা দিয়ে ক্যাসেল থেকে বাইরে বের হন। অন্যদিকে ক্যাসেলে থাকা দুই দাসী অ্যান ব্রাউন এবং ডেলিয়া আর্লি আগুনের শিখার হাত থেকে বাঁচতে ছাদে দৌড়ে পৌঁছায়। অতঃপর আগুনের লেলিহান শিখা যখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা ছাদ থেকে লাফ দেয়।
যদিও অ্যান নিচে লাফিয়ে পড়েও বেঁচে ছিলেন। তবে ঘটনার দু’দিন পর তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে ডেলিয়া গুরুতর আহত হয় এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালেই ডেলিয়ার মৃত্যু হয়।
ফায়ার ব্রিগেড যখন ক্যাসলে এসে পৌঁছায় তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুর্গটি তখনো জ্বলছে। লর্ড এবং লেডি ব্লেকের কন্যা তারা ইলিয়েন ব্লেক ওই রাতে নিজ ঘরেই ঘুমিয়ে ছিল। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সে ঘর থেকে বের হতে পারেনি। আর সবাই এত ভয় পেয়েছিল ইলিয়েনকে সাহায্য করার জন্য কেউই তার ঘরে যায়নি।
অতঃপর দমকল বাহিনী যখন ইলিয়েনের খোঁজ করে তখন তারা মেয়েটির কোনো সন্ধান পায়নি। পুরো দুর্গে তার শরীরের কোনো অংশ পাওয়া যায়নি। যা রহস্যময় একটি বিষয়। দুর্গের সমস্ত সামগ্রী ধ্বংস হয়ে যায় ঘটনার পর- চিত্রকর্ম, সিলিং এবং মূল্যবান কাগজপত্র। সবই পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। পরবর্তীতে ব্লেক পরিবার এই দুর্গটির পুনঃনির্মাণ আর করেননি।
কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে মেনলো ক্যাসেলের অংশ বিশেষ, যার মাঝে রয়েছে অনেক আনন্দ ও বেদনার করুন এক ইতিহাস। এখনো যারা এখানে ভ্রমণে আসেন, ইলিয়েন নামের সেই কন্যার কথা স্মরণে তাকিয়ে থাকেন ক্যাসেলটির ধ্বংসাবশেষের দিকে।
Post a Comment