না ঘুমিয়ে ৩০ দিন, যা ঘটেছিল ৫ বন্দীর জীবনে
ODD বাংলা ডেস্ক: ১৯৪০ সালের দিকের ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা পাচ্ছিল ওই সময়। রাশিয়ান গভর্নমেন্টের কাছে কিছু রাজনৈতিক বন্দী ছিল। তারা বন্দীদের উপর একটি এক্সপেরিমেন্ট চালাতে চেয়েছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল একটি গ্যাসে কক্ষের মধ্যে পাঁচজন রাজবন্দীকে রেখে দেয়া। তারা আসলে জানতে চেয়েছিল এই গ্যাসটি একজন মানুষকে ৩০ দিন ঘুম থেকে জাগিয়ে রাখতে পারবে কিনা। যা 'রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট' নামে পরিচিত। তবে তাদের এই এক্সপেরিমেন্ট সফল না হয়ে কি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল তা সম্পর্কে জানাবো-
রাজনৈতিক বন্দীদের বলা হয়েছিল, যদি তারা এই এক্সপেরিমেন্ট করে তাহলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে। নিজেদের দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এই প্রস্তাব শুনে পাঁচজন বন্দী এই নরক থেকে মুক্তি পাবার জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিল। তাদেরকে বলা হয়েছিল একটি কক্ষের মধ্যে ওই অজানা গ্যাসটি রেখে তাদেরকে বন্দী করে রাখা হবে। তবে বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাবার জন্য তারা মরিয়া ছিল। কারণ এভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে ওই এক্সপেরিমেন্ট করাকেই তারা সহজ মনে করেছিল।
তাদেরকে মনিটর করার জন্য সিসি ক্যামেরা থাকবে। তাছাড়াও বাইরে সবার সঙ্গে কথা বলার জন্য একটি মাইক্রোফোনও থাকবে। একমাস বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার, পানীয় সবই দেয়া থাকবে ওই কক্ষে। একটি ছোট জানালাও দেয়া ছিল ওই কক্ষের জন্য। প্রথম তিনদিন সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। বন্দীরা একে অন্যের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলছিল। খাওয়া-দাওয়া করছিল।
তবে চতুর্থ দিনের মধ্যেই তাদের কথাবার্তা একটু খারাপ হওয়া শুরু করে। পঞ্চম দিন সবচেয়ে বেশি সমস্যা শুরু হয়। তাদের প্রত্যেককে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। একে অন্যের সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়ে দিয়েছিল। তারা মনে করেছিল, একজন আরেকজনকে মেরে ফেললেই তাদেরকে মুক্তি দিয়ে দেয়া হবে। নবম দিনে একজন বন্দী এত জোরে চিৎকার শুরু করে চলেছিল যে, তার কণ্ঠস্বর ফেটে গিয়েছিল। সিসিটিভিতে তখন দেখা হচ্ছিল, বাকি চারজন বন্দী তাকে কীভাবে সাহায্য করে। তবে বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না বাকি চারজন বন্দী তাদের বন্ধুকে একটু সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি।
এর একদিন পর আরেকজন বন্দী বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ওই কক্ষের জানালায় লাগিয়ে দিয়েছিল। এমনকি সিসিটিভি ক্যামেরার উপরে কাগজ লাগিয়ে দিয়েছিল, যেন তাদেরকে কেউ দেখতে না পারে। টানা পাঁচদিন তারা মাইক্রোফোনে একটি কথাও বলেনি। এতে করে রিসোর্সেরা অবাক হয়ে যায়। তারা চেষ্টা করছিল বারবার যেন বন্দীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। তবে তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
তখন তারা যে মাইক্রোফোনে ঘোষণা দিয়ে দেয় ভেতরে থাকা কেউ যদি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তবে তাদের পাঁচজনকে ছেড়ে দেয়া হবে। তবে এরপর যা হয়েছিল তা শুনে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ভেতর থেকে একটি শান্ত কণ্ঠ বলে উঠল, আমরা মুক্তি চাই না। এ মারাত্মক কথাটি শোনার পর রিসোর্সেরা আরো ভয় পেয়ে যান। তারা দ্রুত ওই মারাত্মক গ্যাসটি ওই কক্ষ থেকে সরিয়ে নেয়। পুরো কক্ষে সতেজ বাতাস প্রবেশ করিয়ে দেয়। তবে এর ফলাফল হয়েছিল আরো ভয়ঙ্কর।
কক্ষ থেকে পর্দা সরিয়ে দেওয়ার পরপরই একসঙ্গে সবাই আর্তনাদ করা শুরু করে। তারা প্রত্যেকেই সেই গ্যাস ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। সতেজ বাতাস তাদের কক্ষে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তারা এমন ভাব করছিল যেন তাদের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। বাতাস ঢোকানোর একদিনের মধ্যেই একজন বন্দী মারা যায়। যেহেতু এটা একটা সিক্রেট এক্সপেরিমেন্ট চলছিল। তাই ওই সময় মৃতদেহ বাইরে আনা সম্ভব হয়নি।
আরো কিছুদিন পর বাকি চারজন বন্দীকে মনিটর করার মাধ্যমে দেখা যায় তাদের প্রত্যেকেই মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যায়, তাদের চোখ এবং আঙ্গুলের মাংস ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছিল। চোখ থেকে মাংস পচে গলে পড়ছে। মারাত্মক দৃশ্য দেখার পর এক্সপেরিমেন্টটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে ওই সব বন্দীদের শরীরের অবস্থা এমন ভয়ঙ্কর হয়েছিল যে, মিলিটারের মধ্যে থাকা সবচেয়ে সাহসী সৈনিকটিও তাদের কাছে ঘেঁষার সাহস পায় নি।
যখনই তাদের কক্ষের দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল আর সতেজ বাতাস তাদের কক্ষে প্রবেশ করছিল তাদের মাংস এতে আরো খুলে খুলে পড়তে শুরু করেছিল। তাদেরকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা এমন কেন করছে? তখন প্রত্যেকেই উত্তর দিচ্ছিল, আমাদেরকে জেগে থাকতে হবে, আমাদের কি জেগে থাকতে হবে।
এই ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখে প্রত্যেক গবেষক সিদ্ধান্ত নেয় তাদেরকে মেরে ফেলার। তাদেরকে মুক্তি করে দেওয়ার ওই দিনই তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। ঘুম নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত এই পাঁচজন বন্দী এত নির্মম মৃত্যু সহ্য করতে হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার এর চেয়েও মারাত্মক মারাত্মক কিছু এক্সপেরিমেন্ট করেছিল।
Post a Comment