এক ইনজেকশনে জীবন্ত কঙ্কাল হয় দুইজন!

ODD বাংলা ডেস্ক: আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে কঙ্কাল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীসহ চিকিৎসকদেরও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় কঙ্কাল। তবে এক ইনজেকশনে জীবন্ত কঙ্কাল হয় দুইজন এ কথা শুনলে সকলেই হয়তো হতভম্ব হবেন। তাও সেটা আবার আঠারো শতকেই। এই বিস্ময়কর কাজের সঙ্গে যার নাম জড়িয়ে আছে তিনি হলেন উদ্ভাবক রায়মনডো ডি সাঙ্গরো।
রায়মনডো ডি সাঙ্গরো ছিলেন ইতালির স্যানসেভেরোর যুবরাজ। তিনি ১৭১০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। রায়মনডো ডি সাঙ্গরো ছিলেন একাধারে উদ্ভাবক, লেখক ও বিজ্ঞানী। তার অন্যতম বিস্ময়কর আবিষ্কার ছিল শারীরবৃত্তীয় মেশিন বা অ্যানাটমিকাল মেশিন, যা মানুষের ‘আসল’ শরীরের মতোই ছিল। ইতালির নেপলসের চ্যাপেলা সানসেভেরোতে প্রদর্শিত হয় রায়মনডো ডি সাঙ্গরো উদ্ভাবিত সেই অ্যানাটমিকাল মেশিন।

এ শারীরবৃত্তীয় মডেলে মানব শরীরের রক্তসঞ্চালন সিস্টেমকে পুনরুৎপাদন করা হয়েছিল, যা আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধের ঘটনা। এক জোড়া মডেল তৈরি করেছিলেন রায়মনডো। একটি পুরুষ এবং অন্যটি নারীর মানব কঙ্কালের উপরে নির্মিত হয়েছিল এই রক্তসঞ্চালন সিস্টেম মডেল।

বিজ্ঞানী রায়মনডো ডি সাঙ্গরোর সব কাজকর্মই ছিল বিস্ময়কর। একবার তার পরীক্ষাগারে দুর্ঘটনাক্রমে একটি পদার্থে আগুন লেগে যায়, যা ওজনে সামান্যতম হ্রাস ছাড়াই তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে একাধারে জ্বলেছিল। সাঙ্গরোর পরীক্ষাগারের এ আগুনকে ‘চিরন্তন প্রদীপ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন অনেকেই। তবে সেই ‘চিরন্তন প্রদীপ’ সম্পর্কিত বেশিরভাগ তথ্য হারিয়ে গেছে।

মানব শরীরের রক্তসঞ্চালনের এই মডেলগুলো জীবন্ত মানুষ থেকেই তৈরি করা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করতেন। তাদের এ বিশ্বাস ছিল দীর্ঘ দিন। তাদের মতে রায়মনডো ডি সাঙ্গরো অ্যালকেমিক্যাল ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে বিশেষ এক ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করেছিলেন, যা তাদের রক্ত ধাতবে রূপান্তরিত করেছিল। তার দু’জন দাসের উপর এই রহস্যময় ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়েছিল বলেই বেশিরভাগ মানুষ মনে করতেন। আর এ ইনজেকশনের মধ্যমেই দুজনের শরীর জীবন্ত কঙ্কালে পরিণত হয়েছিল। কঙ্কালের হাড়ের উপরে আবৃত কার আছে শিরা, ধমনী এবং কৈশিক সবই। এগুলো কঙ্কালের পা, বাহু, খুলি এবং পাঁজর জুড়ে রয়েছে।

তবে পরবর্তী সময়ে মানুষের এ ধারণা পরিবর্তন হয়। কারণ এমন একজন বিস্ময়কর বিজ্ঞানী সম্পর্কে স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন গুজব সৃষ্টি হয়েছিল। আর তার উদ্ভাবিত মানব শরীরের রক্তসঞ্চালনের এই মডেলগুলো যে জীবন্ত মানুষের উপর প্রয়োগ করে তৈরি, সেটাও তার সম্পর্কে একটি গুজবই ছিল। মূলত মৃত মানুষের কঙ্কালের উপর বিভিন্ন উপাদান দিয়ে রক্তনালীগুলো তৈরি কারা হয়েছিল। ধাতব তার, রঙিন মোম ও সিল্ক ব্যবহার করে রক্তনালীগুলো নির্মিত হয়েছিল, যা অনেকটা মানব শরীরের আসল রক্তনালীর মতোই হয়েছিল।

এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানীদের মধ্যেও কেউ কেউ বিশ্বাস করেছিলেন জীবিত মানুষের উপরই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। কারণ এগুলোর গঠন অনেকটাই আসলের মতো ছিল। তবে তাদের ধারণা পরিবর্তন হয়। ২০০৮ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে একদল গবেষক চ্যাপেলটিতে মডেলগুলো বিশ্লেষণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছিল। তারা দেখতে পায় যে, কঙ্কালগুলো সত্যিকারের মানুষের ছিল। তবে রক্তনালীর মডেলগুলো ধাতব তার, রঙিন মোম এবং রেশম দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এগুলো নির্মিত হয়েছিল সেই সময়ের শারীরবৃত্তীয় গবেষণার সাধারণ কৌশলগুলো ব্যবহার করে। আর জীবন্ত মানুষের উপর বিশেষ ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়েছিল, এমন কোনো প্রমাণই পায়নি তারা। নেপলসের অস্পেডেল সান জেনারোর মেডিকেল দল ২০১৪ সালে আরেকটি বিশ্লেষণ করেছিল কঙ্কাল দুটির। তারাও আগের গবেষক দলের মতোই মতামত দিয়েছিলন।

উদ্ভাবক রায়মনডো ডি সাঙ্গরো জীবনভর এমন সব বিস্ময়কর উদ্ভাবনের সঙ্গেই জড়িত ছিলেন। তিনি ১৭৭১ সালে নেপলসে মৃত্যু বরণ করেন। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আবিষ্কারগুলোতে ক্রমাগত বিপজ্জনক রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে তাঁর মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়েছিল বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.