দূষণ মুক্ত হবে পৃথিবী, প্লাস্টিকখেকো মাশরুম দেখাবে নতুন রূপ

ODD বাংলা ডেস্ক: প্লাস্টিক দূষণে পৃথিবীর দম বন্ধ অবস্থা। স্থলভাগ যেমন দূষণের চরম অবস্থায়, তেমনি প্লাস্টিক বর্জ্য রেহাই দেয়নি জলভাগকেও। ১৯৫০ সাল থেকে এখন অবধি মানুষ ৯ বিলিয়ন টন বা ৮১৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম প্লাস্টিক তৈরি করেছে। এর মাত্র ৯ শতাংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিন্তু বাকি প্লাস্টিক পোড়ানো যায়নি বা পুনর্ব্যবহার করা যায়নি। 

এই সমস্ত প্লাস্টিক সামগ্রীর শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে সমুদ্র। যা প্রকৃতির জন্য রীতিমতো বিপদের। প্লাস্টিক আবর্জনার কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ মারাত্নকভাবে বিপন্ন হচ্ছে; সেখানের অসহায় প্রাণীগুলো মৃত্যুবরণ করছে করুণভাবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সমুদ্রে বিচরণকারী কোনো কোনো পাখির পাকস্থলির ৮০% জায়গা প্লাস্টিক বর্জ্যে দখল করতে পারে বা করে থাকে! এগুলো হজম হয় না, যার ফলে আস্তে আস্তে পাখিগুলো না খেতে পেরে করুণভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।

প্লাস্টিক পচতে ১৫ থেকে ১০০০ বছর লাগতে পারে। সূর্যের আলোর মাধ্যমে সাধারণত প্লাস্টিক ব্যাগ বা সামগ্রী ভেঙ্গে ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হতে পারে। এ ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণাগুলো সমুদ্রে ভাসমান বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে এক একটা বিষাক্ত পিলে পরিণত হতে পারে। গবেষকদের হিসেব অনুযায়ী, সমুদ্রের প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকাতে ১০০ গ্রাম করে এই ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্য ভাসছে।

তবে এবার পরিবেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ এসেছে এই নতুন প্রজাতির মাশরুম। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এই মাশরুমের খাবার প্লাস্টিক। অর্থাৎ ভবিষ্যতে প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। মাশরুমটির নাম পেস্টালোটিওপিস মাইক্রোস্পোরা। এই মাশরুমগুলো প্লাস্টিকের উপাদান, পলিউরেথেন খায় এবং জৈব পদার্থে রূপান্তর করে। ভবিষ্যতে প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে মুক্তি পেতে এই মাশরুমটি আরও বেশি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। 

পরিবেশবিদরা মনে করেন, যদি এই মাশরুম প্লাস্টিকের বর্জ্যের উপরে তৈরি করা হয় তবে ওই প্লাস্টিক সার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এই মাশরুমটি জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমাদের পৃথিবী পরিষ্কারে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।

পৃথিবীতে প্রায় ২০ থেকে ৪০ লাখ প্রজাতির ছত্রাক রয়েছে। সুতরাং এই মাশরুমগুলো ব্যবহার করে ভবিষ্যতে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যবহার করা যেতে পারে। প্লাস্টিকখোর এই মাশরুমের আবিষ্কার করেছেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে এই মাশরুম শুধুমাত্র আমাজনের জঙ্গলেই পাওয়া যায়।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীর মতে, বাদামী এই মাশরুম এমন পরিবেশেও তৈরি হতে পারে যেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ অনেক কম। কারণ এটি প্লাস্টিকে থাকা পলিউরেথেন গ্রহণ করে এবং সেটিকে জৈব পদার্থে রূপান্তর করে। জৈব পদার্থের মাধ্যমে এটি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায়। এই মাশরুম প্লাস্টিককে মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যে জৈব পদার্থে রূপান্তর করতে পারে।

অন্যদিকে এই ধরনের মাশরুম সাধারণ মানুষও খেতে পারে। তবে এগুলো খাওয়ার সময় বা রান্না করার সময় মদের গন্ধ পেতে পারেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.