গোপনে হারিয়ে যেতে সাহায্য করে যেসব কোম্পানি

ODD বাংলা ডেস্ক: সারা বিশ্বেই কিছু মানুষ আছে যারা তাদের নিজের জীবন থেকে নিখোঁজ হয়ে যেতে চান। সবকিছু ছেড়ে মাঝরাতে তারা এমনভাবে উধাও হয়ে যান, যাতে কেউ তাদের খুঁজে বের করতে না পারে। এরপর তারা নতুন জীবন শুরু করেন এবং পেছনের সব ভুলে যান।

জাপানে এ ধরনের লোকজনকে বলা হয়ে থাকে 'জুহাতসু'। জাপানি এই শব্দের অর্থ 'হাওয়া হয়ে যাওয়া'। যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিখোঁজ হতে চায়, তাদেরকে বোঝাতেও এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

এই লোকগুলো কোথায় আছে এবং কী করছে সেসব তারা গোপন রাখে। কখনো তা কয়েক বছর কখনো কয়েক দশকের জন্য।

এভাবে হঠাৎ মিলিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ; পরিশোধ করার মতো নয় এমন ঋণ থেকে শুরু করে প্রেমহীন বিবাহ। তবে কারণ যা-ই হোক না কেন, তারা তখন এমন কিছু কোম্পানির দ্বারস্থ হন, যারা তাদেরকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে। এ ধরনের কাজকে বলা হয় 'রাতে সরে যাওয়ার' সার্ভিস। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে 'জুহাতসু' হয়ে যাওয়ার গোপন প্রক্রিয়াকেই অনুমোদন করা হয়।

যেসব লোক উধাও হতে চান, তাদের গোপনে জীবন থেকে সরে যেতে সাহায্য করে এসব কোম্পানি। এমনকি গোপন স্থানে তাদের থাকারও ব্যবস্থা করে দেয়।

সাধারণত এভাবে চলে যাওয়ার পেছনে ইতিবাচক কারণই থাকে, যেমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া, কোথাও নতুন চাকরি পাওয়া অথবা কাউকে বিয়ে করা। তবে খারাপ কিছু কারণও থাকে- উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেমন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া, চাকরি হারানো অথবা কারো কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া- এমনটাই বলেন শো হাতোরি, যিনি ৯০-এর দশকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে এ রকম একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ওই দশকে জাপানের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নেমেছিল।

প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, লোকজন হয়তো শুধু অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণেই তাদের সমস্যাকবলিত জীবন থেকে পালিয়ে যেতে চাইবে, কিন্তু খুব শিগগিরই তিনি দেখতে পান, এর পেছনে আরো কিছু সামাজিক কারণও রয়েছে।

শো হাতোরি বলেন, মানুষ যাতে আরেকটা দ্বিতীয় জীবন শুরু করতে পারে, সে ব্যাপারে সাহায্য করার জন্যই আমরা এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছি।

জাপানে বিবাহবিচ্ছেদের হার খুব কম ছিল, এখনো কম। ফলে অনেকেই ডিভোর্সের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে একদিন হঠাৎ করেই তাদের স্বামী বা স্ত্রীকে ছেড়ে চলে যায়।

জাপানে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়। নিখোঁজ ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় না দিয়েও মুক্তভাবে এটিএম থেকে অর্থ তুলতে পারেন। এ ছাড়া পালিয়ে যাওয়া এই ব্যক্তি যদি গোপন ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো ক্যামেরায় ধরাও পড়েন, তার পরিবারের সদস্যদের ওই ভিডিও দেখতে দেওয়া হয় না।

অন্য কোনো কারণ না থাকলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে না- যেমন কোনো অপরাধ বা দুর্ঘটনা। পরিবারগুলো চাইলে হয়তো ব্যক্তিগত গোয়েন্দাদের অর্থ দিয়ে কাজে লাগাতে পারে। অথবা পারে শুধু অপেক্ষা করতে। এর বাইরে কিছু করার নেই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.