রাতে আপনার সন্তানের পায়ে ব্যথা? অবহেলা নয়, সতর্ক হন
ODD বাংলা ডেস্ক: আপনার বাচ্চার কি প্রতি রাতে পায়ে ব্যথা হয়? যন্ত্রণায় ছটফট করে? সাবধান শিশুদের পায়ে যন্ত্রণা নানা কারণে হতে পারে।
দিনভর হুটোপাটি, হুজ্জুতি। ‘তোজো’ যেন সারাক্ষণই ‘বিজি’। কিন্তু রাত পোহালেই একরত্তির পায়ে ভীষণ যন্ত্রণা। ঘুম ভেঙে উঠে বসে বিছানায় ছটফট, ব্যথার তাড়নায় চোখে জল। সব দেখে মাথায় হাত বাবা-মায়েদের। কিন্তু কী কারণে হয় বাচ্চাদের এই প্রবল পায়ে ব্যথা? আদৌ কি এটা স্বাভাবিক? কখন সতর্ক হবেন? রইল তারই হদিশ।
দিনভর হুটোপাটি, হুজ্জুতি। ‘তোজো’ যেন সারাক্ষণই ‘বিজি’। কিন্তু রাত পোহালেই একরত্তির পায়ে ভীষণ যন্ত্রণা। ঘুম ভেঙে উঠে বসে বিছানায় ছটফট, ব্যথার তাড়নায় চোখে জল। সব দেখে মাথায় হাত বাবা-মায়েদের। কিন্তু কী কারণে হয় বাচ্চাদের এই প্রবল পায়ে ব্যথা? আদৌ কি এটা স্বাভাবিক? কখন সতর্ক হবেন? রইল তারই হদিশ।
কামড়ে ধরে পা
তিন বছর বয়স থেকে শুরু হয়ে দশ, এগারো এমনকী, বারো বছরের শিশুদেরও এই ব্যথা হতে পারে। তবে ৩-৬ বছরের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। ব্যথা হয় পায়ের থাই, কাফ, হাঁটুর পিছন দিকে। আর হয় সামনের দিকে। মানে শিন বোনে। জয়েন্টে হয় না। মাসলে ‘ক্র্যাম্পিং পেন’ ধরনের ব্যথা হয়। মানে কামড়ে ধরার মতো ব্যথা। কোনও কোনও বাচ্চার ক্ষেত্রে খুব বেশি পায়ে ব্যথা হয়। রাতে ঘুম ভেঙে যায়, যন্ত্রণায় শুতে পারে না, কেঁদে ওঠে। আবার কারও অতটাও হয় না। সামান্য মালিশ করে দিলেই কমে যায়।
ননস্টপ ছুটছে ইঞ্জিন
এই ধরনের ব্যথাকে ডাক্তারি পরিভাষায় ‘গ্রোয়িং পেন’ বলে। বাড়ের ব্যথা। আসলে এই বয়সটাতেই শিশুর শরীরের বাড়বৃদ্ধি হয়। ব্যথাটা হল তারই অনুষঙ্গ। এই বয়সি বাচ্চারা সারা দিন খেলাধুলা ধরে, দৌড়য়, লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি চলতে থাকে দিনভর। এত ‘অ্যাক্টিভিটি’ হয় বলে দু’পায়ের মাসলের উপর চাপ পড়ে। তার জন্য রাতের দিক ব্যথা হয়। এটা যেমন একটা কারণ, তেমনই আরও একটা কারণ হল ভিটামিন ডি-র ঘাটতি। বেশিরভাগ বাচ্চাই এখন প্রায় সারাদিন বাড়ির ভিতরে থাকে, ইনডোর গেম খেলে, সুর্যের আলো তাদের গায়ে লাগে না। খাওয়া দাওয়াও ঠিকমতো হয় না। সেই থেকে ভিটামিন, ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হতে পারে। আবার কিছু কিছু স্টাডিতে দেখা গিয়েছে, কিছু কিছু বাচ্চার ‘পেন সেনসিটিভিটি’ বেশি থাকে। তাদের ব্যথার অনুভূতিটা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই হয়। ছেলে-মেয়ে, উভয়ক্ষেত্রেই ব্যথার তীব্রতা সমান। যদিও কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদের যন্ত্রণা বেশি হয়। তবে বাড়ের এই ব্যথা থেকে পরবর্তীকালে বাচ্চার হাইট, বেড়ে ওঠা বা হাঁটাচলায় কোনও প্রভাব পড়ে না। তবে সব পায়ে ব্যথাই ‘গ্রোয়িং পেন’ নয় যদি জ্বর বা অন্য কোনও উপসর্গ থাকে। যেমন ব্যথার জায়গাটা ফুলে যাওয়া, বাচ্চা যদি সেখানে হাত দিতে না দেয়, খুঁড়িয়ে চলে প্রভৃতি। সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের সাবধান হতে হবে। কারণ, তার পিছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। হতে পারে হাড়ের সংক্রমণ। বা ব্লাড ক্যানসার।
উপসর্গই জানান দেবে
তা, কী করে বুঝবেন বাচ্চার পায়ে যে ব্যথাটা হচ্ছে, সেটা ‘গ্রোয়িং পেন’? উত্তর হল—— সাধারণত এই ব্যথা রাতেই হয়। কিন্তু সকালে উঠে আর হয় না। বাচ্চা স্বাভাবিকভাবেই সকালে হাঁটা-চলা করা, স্কুলে যাওয়া-সবই করতে পারে। কিন্তু তা যদি না হয়, ব্যথার সঙ্গে অন্যান্য একাধিক উপসর্গও থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন হাড়ে ইনফেকশনের জন্য ব্যথা হলে সেই ব্যথা সারাদিনই থাকে, শুধু রাতে নয়। সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গও থাকে যেমন জ্বর, ব্যথার জায়গা ফুলে যাওয়া প্রভৃতি। ব্লাড ক্যানসার হলে শিশুর প্রচণ্ড ব্যথার পাশাপাশি সে অত্যন্ত দুর্বলও হয়ে পড়তে পারে। কাজেই অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে শিশুর ব্যথার প্রকৃতি ও উপসর্গের উপর।
মাসাজ এবং সেঁক
আগে বুঝতে হবে, বাচ্চার পায়ে ব্যথার আসল কারণ কী? বাড়ের ব্যথা ক্ষতিকর নয়। তাই এই নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আস্তে আস্তে এর প্রবণতা কমে যায়। এই ব্যথার চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। রাতে ব্যথার জায়গায় হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করুন। সঙ্গে প্রয়োজন বুঝে কাপড় দিয়ে গরম সেঁক দিতে পারেন। বাড়িতে থাকা পেন রিলিভিং মলম, স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু ছোট বাচ্চাদের উপর এর যথেচ্ছ প্রয়োগ করবেন না। কারণ অনিয়ন্ত্রিতভাবে এর ব্যবহার হলে রক্তে এই ওষুধগুলি অনেক বেশি পরিমাণে প্রবেশ করতে পারে, যা বাচ্চাদের পক্ষে ক্ষতিকর। হাল্কা হাতে ম্যাসাজই শ্রেয়। তাতেও না কমলে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ‘ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগস’ যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন প্রভৃতি চলতে পারে, তবে সঠিক ডোজে। নচেৎ ক্ষতি হতে পারে। আর অন্যান্য কোনও কারণে পায়ের ব্যথা হলে চিকিৎসকরাই তা ডায়াগনসিস করে জানাবেন এবং নিরাময়ের পথও বাতলে দেবেন।
Post a Comment